‘দ্য গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০২০
Advertisements

বাংলাদেশে ব্যবসার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাদের অদক্ষতাসহ তিনটি প্রধান সমস্যার কথা জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধাগুলো হচ্ছে দুর্নীতি ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা। এছাড়া অবকাঠামোগত ঘাটতি, শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিকের স্বল্পতা এবং উচ্চ কর হারও ব্যবসার জন্য অন্যতম সমস্যা। বাংলাদেশে ব্যবসার মূল প্রবণতা হচ্ছে ব্যয় কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০২০’ (বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সমকক্ষতা প্রতিবেদন)-এ বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার পরিবেশ বিষয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এবারের প্রতিবেদনে মূলত করোনা পরিস্থিতিতে ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দেশগুলোর কর্মতৎপরতা’র ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। দ্য গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০২০-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশ সংক্রান্ত সমীক্ষাটি করে থাকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিজনেস এনভায়রনমেন্ট স্ট্যাডি ২০২০-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারে করোনার কারণে অন্যান্য বছরের মতো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকের র‌্যাংকিং প্রকাশ করা হয়নি। তবে কোন দেশের কী সমস্যা তা জানতে ওই দেশের ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপ করা হয়েছে। তারা ১০ কোটি টাকার ওপর সম্পদ আছে এমন ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের মতামত নিয়েছে।

জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, বাংলাদেশের ডুয়িং বিজনেস সূচকে সরকারি আমলাদের অদক্ষতাসহ তিনটি প্রধান সমস্যার কথা জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধাগুলো হচ্ছে- দুর্নীতি ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা। এ ছাড়া অবকাঠামোগত ঘাটতি, শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিকের স্বল্পতা এবং উচ্চ কর হারও ব্যবসার জন্য অন্যতম সমস্যা। বাংলাদেশে ব্যবসার মূল প্রবণতা হচ্ছে ব্যয় কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো।

সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ সূচকের উন্নয়নে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে প্রথমবারের মতো শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে অদক্ষ আমলাতন্ত্রের বিষয়টি। প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যবসায়ী এটিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যান্যের মধ্যে দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে অর্থায়নের সীমাবদ্ধতাকে (বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে) দায়ী করেছেন ৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী। সমস্যা বিবেচনায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে অবকাঠামোগত ঘাটতি বা দুর্বলতা। চিহ্নিত এসব সমস্যা সমাধানে কোভিড-উত্তর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিষয়টি বিবেচনার পাশাপাশি ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’র (এসডিজি) ১৬.৬ অনুচ্ছেদের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাস্তবায়নের ওপর সরকারের জোর দেয়া উচিত।

সংস্থাটি বলেছে, আমলাদের অদক্ষতার বিষয়টি শীর্ষস্থানে উঠে আসায় সরকারি সেবার প্রাপ্যতা ও গুণগত মানের বিষয়টির দিকে নীতি নির্ধারকদের জোর দিতে হবে। একই সাথে এটি সরকারি সেবার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দুর্বলতার নির্দেশক। অন্যান্য সমস্যার মধ্যে এসএমই খাতে অর্থায়ন নিশ্চিতে (বিশেষত করোনা পরিস্থিতিতে) ব্যাংকগুলোকে বড় ধরনের ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া অবকাঠামো খাতের মধ্যে বিশেষত সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে সেটি দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তারা এও জানান, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমশক্তির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

সিপিডি বলেছে, ব্যবসা সংক্রান্ত অন্যান্য সূচকের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং দুর্বল। আর ৭৩ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতে, ব্যাংক খাতের সমস্যার কারণে অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় এর প্রভাব পড়বে।

সিপিডি বলেছে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে প্রশাসনিক দুর্বলতার কিছু দিক চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৪৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা কঠিন, ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশের মতে সরকারি সেবা পেতে আন-অফিসিয়াল (ঘুষ) লেনদেন বেড়েছে, বিচারব্যবস্থা প্রভাবমুক্ত নয় বলে মনে করেন ৭০ শতাংশ। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে করপোরেট এথিকসের ঘাটতি, সরকারি তহবিলের অবৈধ স্থানান্তর ও ব্যবসা বিরোধ নিষ্পত্তিতে জুডিশিয়াল সিস্টেমের অদক্ষতা রয়েছে।

সিপিডি বলেছে, করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন, রফতানি, আমদানি ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের ব্যবসা পরিবেশ আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত নয়। বেসরকারি খাতের একটি অংশও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার বিষয়ে সচেতন নয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের নীতি সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি কোভিড-উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তি খাত এবং বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আগামী দিনের বাজার তৈরি, পণ্য ও রফতানি বহুমুখীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে- সক্ষম পরিবেশের রূপান্তর, মানবসম্পদের স্থানান্তর, বাজার স্থানান্তর ও উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেমের স্থানান্তর।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সুদৃঢ় করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে গিয়ে যেন কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি না হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দক্ষ ও উন্নয়নমুখী অর্থনীতির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিবেশ সহজ করতে হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ বাড়াতে হবে।

Advertisements