চরমোনাই পীর - ভাস্কর্যবিরোধী কড়া বক্তব্য চরমোনাই পীরের, সরকারকে সতর্কবার্তা - সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ
Advertisements

চরমোনাই পীর হিসেবে পরিচিত, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবার ভাস্কর্য ইস্যুতে কঠোর ভাষায় বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, মূর্তি স্থাপন করে শেখ মুজিবকে স্মরণ করা মানে “মুসলিম রাষ্ট্রনায়ককে ইসলামের আলোকে দাফন কাফন না করে বিধর্মীয় পন্থায় তার শেষকৃত্য করার মতই নিন্দনীয় কাজ।”

তিনি বলেছেন, একটি সুবিধাভোগী মহল সাধারণ মুসলিম জনতার উত্থাপিত একটি যৌক্তিক মতামতকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে হুমকি দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।

সরকারকেও কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন তিনি বলেছেন, “সরকারের কোন কাজের সংশোধনমূলক পরামর্শ, গঠনমূলক সমালোচনা বা বিরোধিতা করলেই চিহ্নিত মহলটি পাকিস্তানপন্থী, রাজাকার, আলবদর, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ইত্যাদি বলে ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি হামলে পড়ে।”

তার ভাষায়, ভাস্কর্যের পক্ষে থাকাটা ‘মূর্তি প্রীতি ও বিজাতিয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ’।

তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “ইসলামি আন্দোলন সীমাহীন ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে এসেছে। আমরা ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। উগ্রবাদী শক্তি আমাদের নীরবতাকে দুর্বলতা ভেবেছে। আমি সরকারকে সীমা লঙ্ঘনকারীদের নিবৃত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি সতর্ক করে বলতে চাই দেশের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম আজ ঐক্যবদ্ধ।”

ভাস্কর্য বিরোধিতা বিষয়ক বক্তব্যকে তিনি যৌক্তিক উল্লেখ করে বলেন, “বিষয়টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওলামায়ে কেরামকে অপদস্থ করার এটিকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।”

কিছুক্ষণ আগে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেছেন মি. করীম।

গতকাল ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করীম, হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ তিন জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলার আবেদন করা হলে, আদালত পুলিশের একটি তদন্ত সংস্থা পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে।

সে প্রসঙ্গে তিনি মামলার আবেদনকারী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে একটি ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন বলে উল্লেখ করে মামলাটিকে ‘জঘন্য ও মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন ভাস্কর্য বিষয়ে তাদের দাবি মানা না মানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।

তার মতে, “ধোলাইপাড়ে বেশকটি মসজিদ মাদ্রাসার কাছে, দুটি মসজিদের অবকাঠামো ভেঙে সেখানে ভাস্কর্য স্থাপনের ফলে স্থানীয় ইমাম ও মুসলিম জনতা সেখানে ভাস্কর্যের বদলে বিকল্প কোন পন্থায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণে রাখার দাবি জানিয়েছিলেন”

“সেখানে শালীন ভাষাতেই যৌক্তিকভাবে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়েছে। বিষয়টি একটি স্বাভাবিক নাগরিক প্রতিক্রিয়া। একটি সুবিধাভোগী মহল বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দেশে চরম উস্কানি, উত্তেজনা তৈরি করছে।”

তিনি ভাস্কর্যের সমর্থকদের একটি জনবিচ্ছিন্ন সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বলে উল্লেখ করে বলেছেন, “দেশের ওলামাদের তারা সন্ত্রাসী ভাষায় গালিগালাজ করছে, মাহফিলের মতো চিরায়ত ধর্মীয় সাংস্কৃতিকে উগ্রপন্থায় প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে।”

ধোলাইপাড়ের মূর্তির বিষয়ক মতামতের সাথে দেশের অন্য কোন মূর্তি ভাঙার কোন সম্পর্ক নেই বলে তিনি উল্লেখ করছেন। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই মতামতের সাথে বিষয়টিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক ধরনের বিভক্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গোটা বিশ্ব যখন করোনা মহামারির ছোবলে বিপর্যস্ত, যখন বাংলাদেশ দ্বিতীয় ধাপের হুমকি সামলাচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষ যখন রুটি-রুজি যোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে, যখন জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তখন দেশের একটি চিহ্নিত মহল জনগণের মাঝে ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্য নিয়ে ইসলামপন্থীরা বিরোধিতা শুরু করে।

হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল ইসলামসহ নানা ইসলামপন্থী দলের নেতারা ভাস্কর্য-বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।

জুনায়েদ বাবুনগরী এক বক্তব্যে বলেছেন, “কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমি আমার আব্বার ভাস্কর্যকে ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব।”

কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নানা ইসলামপন্থী দল।

যার জেরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে ইসলামপন্থী দলগুলোর টানাপড়েন চলছে।

যে কোন উদ্দেশ্যে ভাস্কর্য তৈরি ‘ইসলামে নিষিদ্ধ’ বলে দেশের বেশ কয়েকজন ইসলামি চিন্তাবিদ বিবৃতি দিয়েছেন।

পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বিতর্ক আরও চাঙ্গা হয়েছে।

বিতর্কের মাঝেই কুষ্টিয়াতে শেখ মুজিবুর রহমানের আরেকটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

এই পটভূমিতে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমীরের এসব বক্তব্য সম্ভবত পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভাস্কর্য ইস্যুতে তাদের পিছু হটার কোন সম্ভাবনা নেই।

সূত্রঃ বিবিসি

Advertisements