খাল ও জলাশয় সম্প্রসারণ প্রকল্পে এবার বিদেশ যাবেন সরকারের ছয় কর্মকর্তা । প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফর নামে এ ভ্রমণখাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪৮ লাখ টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তার পেছনে খরচ পড়বে ৮ লাখ টাকা। ‘ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তম দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলায় সেচ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ ব্যয় প্রস্তাব করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫১ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
কাল (১৮ অক্টোবর ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সার-সংক্ষেপ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় ২০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া ৬০টি জলাশয় পুনঃখনন, ২৫টি সাবমার্জড ওয়্যার, ১৬৫টি ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ, এক হাজারটি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণ, ৬০টি সৌরশক্তি চালিত পাতকুয়া, ১৬৫টি প্রি-পেইড মিটার ক্রয় এবং ৯টি অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ঠাকুরগাঁও সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম খান রোববার যুগান্তরকে বলেন, নলেজ শেয়ারিংয়ের জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি এমন নয় যে, খাল ও জলাশয় খনন শিখতে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন কর্মকর্তারা। বিষয়টি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করছে।
সে ক্ষেত্রে তাদের ব্যবস্থাপনা এবং কিভাবে তারা এসব করে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভাবলে তো চলবে না। উন্নত দেশের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে আমরা বরং কম টাকা বরাদ্দ ধরেছি। প্রয়োজনের বাইরে কোনো ব্যয় ধরা হয়নি।
সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ শুরুর আগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল প্রকল্পের আওতায় ছয় (এক ব্যাচ) কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফর বাবদ মোট ৪৮ লাখ টাকার সংস্থান রাখতে হবে।
তবে এই প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বিষয়, ব্যাচভিত্তিক দফতর উল্লেখসহ প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা, প্রশিক্ষণ দিবসের সংখ্যা, দেশের নাম ইত্যাদি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) উল্লেখ করতে হবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ প্রকল্প সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন, ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ ছাড়াও সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ধরে রাখাসহ দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানির সহায্যে সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়া সেচ সম্প্রসারণের সঙ্গে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বৃহত্তর দিনাজপুর ও জয়পুরহাট এলাকায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ছয় লাখ ১৬ হেক্টর।
এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ ২৮ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে এবং অবশিষ্ট প্রায় শূন্য দশমিক ৮৮ লাখ হেক্টর জমি সেচবহির্ভূত রয়েছে। সেচবহির্ভূত জমির মধ্যে ২৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে সেচ সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থাকা সত্ত্বেও পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজ ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি।
তাই আবাদযোগ্য অনেক জমি পতিত রয়েছে। নদীর সঙ্গে সংযোগ খালসহ অন্যান্য খাল ও জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজে ব্যবহার করা হবে। এতে সেচকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ওপর চাপ কমে যাবে।