কারাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বসবাসের পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ‘ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার পুনঃনির্মাণ’- প্রকল্প হাতে নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটির মেয়াদ প্রায় ৯ বছর পেরিয়েছে। এ পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি অর্ধেকও। এছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত আবাসিক ভবনের বেশ কিছু দরজা-জানালার গ্রিল ও গ্লাস চুরি হয়ে গেছে। অন্যদিকে ব্যবহারের আগেই ভবনের অনেক জিনিস ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনিয়ম করে পরিবর্তন করা হয়েছে নকশাও। এতে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি ও কারাগারের নিজস্ব ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার পুনঃনির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি মূল পর্যায়ে ১২৭ কোটি ৬০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১৫ হতে জুন ২০১৮ পর্যন্ত বাস্তবায়নের নিমিত্তে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর বৃদ্ধি করা হয় এছাড়া ২০২৩ সালের ১৮ই এপ্রিল প্রকল্পের ব্যয় ৮৮ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৪০ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা করা হয় এবং ২৩৩ শতাংশ মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে আর্থিক অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ হয়েছে। প্রকল্পের অবশিষ্ট সময়ে আর্থিক ৬২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ভৌত ৫৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হবে।
এদিকে কারাগারে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর বেশ কয়েকটি জানালা-দরজার গ্রিল ও গ্লাস চুরি হয়ে গেছে। আবাসিক ভবনগুলো দীর্ঘদিন আগেই নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। এতে ভবনগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত বাড়ির মতো দেখা যাচ্ছে। ভবনগুলো এভাবে পড়ে থাকায় কলাপসিবল গেটে জং ধরে প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। ভবনের বাহিরের প্লাস্টারগুলো ক্রমান্বয়ে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভবনগুলো নির্মাণ করা হলেও ভবনের পাশের ভূমি উন্নয়ন করা হয়নি এবং ভবনগুলোতে যাওয়ার কোনো রাস্তা তৈরি, বিদ্যুৎ সংযোগ ও গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি।
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে মূল ফটকের সামনে এবং সীমানা প্রাচীরের পাশে একটি বড় পুকুর রয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান ও প্রকৃত অবস্থান অনুযায়ী পুকুরটি সীমানা প্রাচীরের ভিতরে রেখে পুকুরের বিপরীত পাশ দিয়ে সীমানা প্রাচীর হওয়ার কথা। পুকুরটি সীমানা প্রাচীরের ভিতরে থাকায় কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের নিয়মনীতি না মেনে অর্থাৎ সেফটি নেট, সেফটি সুজ, বেল্ট, গামবুট, হেলমেট ইত্যাদি ছাড়াই ঠিকাদার কর্তৃক নিয়োজিত শ্রমিকরা নির্মাণ কাজ করছে।
প্রকল্পের দুর্বল দিক’ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার’ পুনঃনির্মাণ প্রকল্পে পুকুরচুরি
যথাসময়ে প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না হওয়া, ফিজিবিলিটি স্টাডি না হওয়া, রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘসূত্রিতা, পুরাতন স্থাপনা অপসারণে বিলম্ব, পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক না থাকা, ভূমি উন্নয়নে বিলম্ব, প্রকল্প চালু হওয়ার পরে প্রকল্পটির আওতায় কিছু নতুন অঙ্গ সংযোজন এবং বরাদ্দের অপ্রতুলতা। অন্যদিকে সবল দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে-কারাগারের নিজস্ব সম্পদ থাকায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন না হওয়া এবং প্রকল্পের এক্সিট প্ল্যান থাকা।
প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত ভবনের জানালার গ্লাস ও গ্রিল চুরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (উপ-সচিব) সুব্রত কুমার রায় বলেন, “যেগুলো বেহাত হয়ে গেছে, ওগুলো তো আর মন্তব্য করলে সমাধান হবে না। ওগুলো আবার ঠিক করে হস্তান্তর করতে হবে। এগুলো মেরামতে সরকারের অতিরিক্ত কোনো টাকা ব্যয় হবে না। ঠিকাদারই মেরামত করে দেবেন। ঠিকাদারের দায়িত্ব ছিল এগুলো দেখে রাখা। যেহেতু উনি রক্ষা করতে পারেনি, সেহেতু এই দায় তার। ভবনের জিনিস ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ভবনগুলো ২০২০ সালে নির্মিত হয়েছিল। ডিপিপিতে সমস্যা থাকায় তখন ভবনগুলোতে যাওয়ার সংযোগ সড়ক তৈরি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। যার ফলে ভবন হস্তান্তর করাও যায়নি।