মমতার উত্থান
Advertisements

ভারতের পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যার মধ্যে আবার দুই রাজ্য হল আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ, যারা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব আর পশ্চিম সীমানাজুড়ে। এর মানে হল গত পুরা মে মাসে আমাদের হিন্দুত্বের প্রবল প্রপাগান্ডার ভেতরে বসবাস করতে হয়েছিল। তবে এই নির্বাচন শেষে গণনা ও সব ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, পাঁচ রাজ্যের একই সাথে ২ মে সকাল থেকে। যা এখন প্রায় সব রাজ্যে রাজ্যের পুর্ণফল প্রকাশিত।
আর গতকাল ২মে দুপুর তিনটা নাগাদ পরিস্কার হয়ে যায় যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ক্ষমতাসীন তৃণমুল কংগ্রেস দল মোট ২৯৪ আসনের মধ্যে এককভাবে দুশ-এর বেশি আসন নিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরতেছে। সর্বশেষ সোমবার রাত সাড়ে সাতটায়, তৃণমূল ২১৩ আর বিজেপি ৭৭ আসন এভাবে আনন্দবাজার ফলাফল দেখাচ্ছে। এদিকে মমতার নিজের নন্দীগ্রাম আসনে তিনি হেরেছেন বলা হচ্ছে। যা তিনি আপাতত মেনে নিয়েছেন তবে আপত্তিসহ এবং তিনি সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত যাবেন সে হুশিয়ারি দিয়েছেন। এদিকে মমতা আজ সন্ধ্যায় বলছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আগামি বুধবার শপথ নেবেন। রাজ্যের প্রাদেশিক সংসদ মানে বিধানসভায় বিজয়ী সদস্য না হলেও ছয় মাস পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকা যায় অস্থায়ীভিত্তিতে। আর যেখানে ঐ ছয়মাসের মধ্যে কোন আসন খালি হলে (মানে দলের কাউকে পদত্যাগ করিয়ে খালি করে নিয়ে) সেই উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এলেই স্থায়ী ও রেগুলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া যায়। ওদিকে ৩মে বিকাল পাঁচটায় খবর ছিল, মমতা সাংবাদিক বক্তৃতায় জানিয়েছেন মোট বিজয়ী আসন হতে যাচ্ছে সম্ভবত ২২১। মানে এমন আসন সংখ্যা বা এর কাছাকাছি দেখতে চাওয়া মমতার অনুমান।

এই ফলাফলের তাতপর্যঃ

আমাদের সাধারণ মন্তব্য এককথায় বললে সেটা হবেঃ সারা ভারত না হোক, এটা হল – অন্তত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদের পরাজয় এবং আরএসএস- বিজেপির হিন্দুত্বকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পাবলিক প্রত্যাখ্যান। কিন্তু কেন এমন হল এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চারদিক থেকে শুরু হয়ে গেছে, যা হওয়াই স্বাভাবিক। কলকাতার আনন্দবাজার এমনই একটা ভারতীয় বিশ্লেষণ তুলে এনেছে দেখা যাচ্ছে যা ঠিক তার নিজের নয় তবে সংগৃহীত। নিচে সেটাই এখানে হবহু তুলে দিচ্ছিঃ
তৃণমুল দলের “দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন প্রাপ্তি এবং ভোট শতাংশের [এখন পর্যন্ত যা প্রায় ৪৮%] হিসেব কষে নির্বাচনী বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-রও একটা অংশের সমর্থন গিয়েছে মমতার ঝুলিতে। বিজেপি যখন রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচার চালাচ্ছে, মমতা তখন মধ্যবিত্ত, মহিলা এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের একত্রিত করে ফেলেছেন বলেই বিশ্লেষকদের একাংশের মত। তা না হলে এই জয় এবং ভোট শতাংশ তৃণমূলের ঝুলিতে আসা সম্ভব নয় বলেই তাঁদের ধারণা। কারণ, তৃণমূলের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভোট শতাংশপ্রাপ্তি এ বারই”।

এখানে বিশ্লেষক বলতে যারা বুথফেরত ভোটারদের সাথে কথা বলে একটা জরিপকাজ সমাপ্ত করে থাকেন আর সেই ফলাফলের বিশ্লেষণ হাজির করেন – এনিয়ে তারা পেশাদার কাজ করেন। উপরে তাদের সারকথা হল, মমতার দল কেবল তার রেগুলার সমর্থক ভোটারদেরই ভোট পান নাই। সেটা ছাপিয়েও তিনি অবশ্যই যারা বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-রও একটা অংশের ভোটার এদের অনেকেরও ভোট পেয়েছেন। কেন পেলেন আর কেন তারা এমন কথা বলছেন কিসের ভিত্তিতে? কারণ তাদের ভিত্তি হল, এমনটা হয়েছে বলেই মমতার দল এত ভোট (এখনই এটা প্রায় ৪৮% যা গণনার শেষপর্যন্ত ৫০% এর কাছে যাবে বলে অনুমান ) ও আসন পেয়েছেন।

অনেকে জানেন শুধু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনেই মোট মুসলমান ভোটার প্রায় ২৭-২৮% হয়ে থাকে। আর এর মধ্যের আবার বড় অংশটাই ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে তৃণমুল একাই পেয়ে আসছে। তাহলে মমতার দলের বাক্সে এখনকার সম্ভাব্য মোট ৫০% ভোটপ্রাপ্তি হতে যাচ্ছে একথার মানে হল – মমতা নিজ দল ও সমর্থকদের ভোট ছাড়াও প্রায় সব ধর্মের সমান সংখ্যক সমর্থক ভোটারদের ভোটও মমতার দল যোগাড় করতে এবার সক্ষম হয়েছে। আর এতেই মমতা ও তার দল হল পশ্চিমবঙ্গে ধর্ম নির্বিশেষে সেই প্রতীক যারা একটা কমন ধারা, তৃণমুল দলে ভিতর “যাদের ইচ্ছা” সমবেত হয়ে – এমন একটা “মেজরিটি ম্যান্ডেট” তৈরি করেছে। আর মমতা হলেন যে ম্যান্ডেটের বাহক নেতা। তাহলে কী কারণে মমতা নিজ দল ও সমর্থকদের বাইরের ভোটারদেরও টানতে পারলেন?

অন্যদিকে আরও প্রশ্ন, তাহলে তৃণমুলের নিজে বিজয়ের মধ্য দিয়ে ঠিক কাদেরকে প্রত্যাখান করলেন? আর কীইবা এই বিজয়ের তাতপর্য?

ঠিক অখন্ড ভারত না, আজকের রাজনৈতিক ইন্ডিয়া, এই রাষ্ট্র ২৮ রাজ্যের সমাহার। কালচারাল দিক থেকে বললে ভারতের মেজরিটি বা ৮০ ভাগ নাগরিক সনাতন ধর্ম অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু তবুও কোন একক “দেবতার” (মানে সবাই একই দেবতার) অনুসারি-পুজারি তারা নয়। বরং রাজ্য-ভিত্তিতে দেখা যায় তাদের একেক আঞ্চলের আলাদা ‘প্রধান দেবতার পুজার” প্রচলন আছে। এমনকি সেই দেবতার পুজা উতসবকে ঘিরেই আলাদা আলাদা বার্ষিক প্রধান ধর্মীয় উতসব ঐ রাজ্যে পালিত হয়। অর্থাৎ কলকাতার মত সব রাজ্যে বা সবার প্রধান উতসব ‘দুর্গাপুজা” নয়। কিন্তু এটার সুবিধা-অসুবিধা কী? এটা নিয়ে কথা বলছি কেন?

কারণ আর কারোই তেমন কোন অসুবিধা না হলেও, আরএসএস- বিজেপির এতে বিরাট অসুবিধা। কেন? কারণ এরা যারা রাজনৈতিক এক “হিন্দুত্ব নির্মাণ” করতে চায়, এজেন্ডা নিয়েছে এবং “হিন্দুত্বের এক জাতিরাষ্ট্র” খাড়া করা ইমাজিন করে; এই নামে ভারতীয়দের সকলকে বাধতে চায় তাদের এমন ২৭ রকম রাজ্য বা হিন্দুত্ব হলে চলে না।

তাদের দরকার একটাই রকমের হিন্দুত্ব, প্রাকটিস। তাই আরএসএস- বিজেপির রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি ও ব্যাখ্যা হল, ভারতের উত্তরের ওপারে (কথিত আছে ইউরোপ বা জার্মান এরিয়ান থেকে আসা ধারা) সেখান থেকে এসেছে সেই এরিয়ান রেস যা ভারতের আর্য প্রজাতি বলে দাবি করে তারা। আর এমন দাবি করলে সুবিধা হল তাতে সবাই একই উৎসের বলে এই অজুহাতে সকলকে এক সুতায় বাধা যায়, সহজেই। যদিও এই ভারতেই আবার মোট তেত্রিশ কোটি দেবতার বয়ানও বিদ্যমান। আর বড় কঠিন বাস্তবতা হল, আলাদা আলাদা রাজ্যে প্রধান উতসবের ভিন্নতা – এসবই আরএসএস- বিজেপি র রাজনৈতিক ব্যাখ্যার পক্ষে মানে কোন একক হিন্দুত্ব তৈরির পক্ষে সায় দেয় না। যেখানে এমনকি কালচারালি ভাষার ভিন্নতায় প্রত্যেক রাজ্য ভিন্ন। সেটা তো বটেই এছাড়া আবার যেমন কালচারাল গান-নাচের বৈশিষ্ঠে তা মৌলিকভাবেই আলাদা আলাদা ঘরানার। একেবারে বাদ্যযন্ত্রগুলোই আলাদা, রাগ আলাদা স্ব স্ব বৈশিষ্ঠের মহিমায় মহিমান্বিত। যা স্বভাবতই কোন রাজ্য পরশি কারও তারা অস্বীকার বা অভারল্যাপ হওয়া বা আড়ালে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে খুবই সেনসেটিভ। এককথায় তারা আঞ্চলিকতার বৈশিষ্ঠে ভরপুর এবং সেদিক থেকেই আলাদা। আর তাতে অন্তত কম করে হলেও মূল তিনটা ভাগে যা ভাগ করা যায়।

কিন্তু অন্যদের উপরে উত্তরভারত কেন্দ্রিক আর্য চিন্তাচর্চার জীবন ধারার প্রভাব প্রাচীনকালে অখন্ড ভারতের আমল থেকে এই উত্তরের অগ্রযাত্রা ছেয়ে বসলেও ভারতেরই দুঅঞ্চলে বা জায়গায় প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। যে প্রতিরোধ সে আর পাড় হতে পারে নাই। এক হল দাক্ষিণার্তে [Decan] “দ্রাবিড়ীয়” [Dravidian] প্রতিরোধ আর এদিকে তাদেরই আরেক ধারার মারাঠা-বিহার পেরিয়ে আরো পুবে “বাংলার” প্রবেশমুখে প্রতিরোধ। এি প্রতিরোধ টিকে যাওয়া তাদের আগে থেকে চলে আসা ভিন্নতার রূপবৈশিষ্ঠের ছাপটাই তাই প্রবল্ভাবে এখনও গান-নাচের ক্লাসিকাল চর্চাতেও স্পষ্ট। ভাষা তো আছেই। কিন্তু এসব ন্যাচারাল হিস্টোরিক্যাল অমিল-বেমিলগুলোকেই আরএসএস- বিজেপি জবরদস্তিতে অস্বীকার করে এক দাবি করতে চায়, এক বলে দেখাতে চায়। আসলে চায় কথিত এক আর্য-চিন্তা (যা আসলে আরএসএস- বিজেপি এর) এরই আধিপত্য।

দুনিয়ার সব (ভিতরে ভিতরে বা বাইরেও) জাতিবাদী বা জাতি-রাষ্ট্রবাদীরাই এই একই ভুল করে। এমন পথেই যায়। তারা সবাইকে এক ভাষায় কথা বলাতে চায়, নয়ত একই কালচারে বা একই ধর্মে বা একই দেবতায়। তাদের একেবারেই ভিত্তিহীন কিন্তু তবু দৃঢ় বিশ্বাস এভাবেই মানুষকে নাকি কেবল এক রাষ্ট্রে ধরে রাখা যায় – এক জাতি-রাষ্ট্রে। অথচ দেখা যায় এর বিপরীতে আমেরিকার বয়স আড়াইশ বছর আর সে জাতি-রাষ্টর নয়। বরং এটাই এক প্রথম ও সবল এক ফেডারল রাষ্ট্র। যা পঞ্চাশটা বড় বড় সাইজের রাষ্ট্রের ভিন্নতার সমাহার। কাজেই আগের সব জাতি-রাষ্ট্র পরিশেষে যেমন ফেল করেছে ভেঙ্গে গিয়েছে ; আরএসএস- বিজেপি র একই আর্য-হিন্দুত্বে (রামকে প্রতীক করে) এক হিন্দুত্ব-ভারতের স্বপ্নকল্পনা এটাও প্রত্যাখ্যাত হবে। প্রায় কাছাকাছি সমস্যা কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের। যখন ১৯৯২ সালে ভেঙ্গে ১৫ টুকরা হল তাতে বুঝা গেল কী জবরদস্তি না চলেছিল। যেমন একটা জবরদস্তি হল, সবাইকে রুশ ভাষা শিখানো।

এমনিতেই বেশীরভাগ দেশি-বিদেশি মানুষ আরএসএস- বিজেপির এক হিন্দুত্ব-ভারতের স্বপ্নকল্পনা এমন প্রজেক্টের কথা জানে না, ধরতেই পারে না। বিজেপি তাদের চোখে এক আম রাজনৈতিক দলই মনে হয় তাদের কাছে। কলকাতায় কংগ্রেস বা নানা ধরণের বাম যখন একে একে ভেসে গেছে আর একই সাথে আরএসএস- বিজেপির হিন্দুত্ব-ভারতের স্বপ্নকল্পনায় প্রবল অর্থ ও রিসোর্স খরচ করে হিন্দুত্বের রাজনীতি সব ছেয়ে ফেলতে সে যখন মরিয়া – এমন সব রাজনীতিকেই এবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিনে রুখে দিয়েছেন একা মমতা। কেন একা মমতা বলছি? কারণ মমতার বিশ্বস্ত কমরেডদেরকে যখন বিজেপি প্রলোভন দেখিয়ে কেড়ে নিয়ে গেছে ফলে তৃণমুল – সেই দল মানে আক্ষরিক অর্থেই একা মমতা হয়ে গেছে। একটা তথ্য দেখেন অনেক অর্থ তাতপর্য বুঝা যাবে তাতে। এই নির্বাচনে এবার একা মোদী এক মাসেই ২২ বার এসে জনসভা করেছেন। মানে প্রায় প্রতিদিন একটার কিছু কম। এথেকে বুঝা যায় কলকাতার এই নির্বাচন মোদী ওতার দলের কাছে কী! সেই নির্বাচনে মমতা এদের সবাইকে পরাজিত করে দিয়েছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল, মমতা তাহলে তিনি হারালেন কাকে? তিনি হারিয়েছেন উতখাত ও প্রত্যাখান করেছেন – মূলত আরএসএস- বিজেপিকে সাথে তাদের যে হিন্দুত্ব-ভারতের স্বপ্নকল্পনা আছে সেটাকেও। যেটা গত সাত বছরে ক্রমশ ধেয়ে আসছিল, ছেয়ে বসছিল। কোথাও তেমন কোন শক্ত প্রতিরোধ কেউ তৈরি করতে পারে নাই। এমনকি দ্রাবিড়িয় এলাকায় অন্তত কোয়ালিশনে হলেও বিজেপি থাকার চেষ্টা করে গেছিল। এজন্যই এটা শ্রেফ একটা তৃণমুল দলের না, একজন মমতার বিজয় নয়। এটা ভারত রাষ্ট্রকে হিন্দুত্বের নামে হিটলারের মত এক তান্ডবের হাত থেকে প্রাথমিকভাবে রক্ষা করা।

যারা মমতার তিন তারিখে বিকেলের কালিঘাটে তার বাড়ির পাশের সাংবাদিক সম্মেলন দেখেছেন (ফেসবুকে ক্লিপে দেখেছি আমি) তারা খেয়াল করবেন মমতাও এবিষয়ে সেখানে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন এই বিজয় ভারতের জনগণকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কী থেকে? এক উদগ্র হিন্দুত্ব, এক হিন্দুত্বের রাষ্ট্র, সবাই একই এক টাইট ইউনিফর্ম-এ – এমনই কিন্তু নতুন করে আরেক নীলচোখের আরিয়ান উগ্র জাতিবাদ, আরেক জার্মান হিটলারের উত্থান হতে চাচ্ছে যেন ! – এসব কিছু থেকে ভারতকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, মমতা তাই এই জনগণকে বারবার সালাম আর থ্যাঙ্কস দিচ্ছিলেন। বিপরীতে মমতা বলতে চাচ্ছিলেন সবাইকে একই রকম হিন্দু [আরএসএস- বিজেপির হিন্দু] হতে হবে কেন?

অথচ ভিন্নতার ঐক্যের হিন্দু হলে অসুবিধা কী? সবাইকে ইউনিফর্ম হিন্দু হতে হবে কেন? আর জবরদস্তি কেন? এছাড়া হিন্দু ছাড়াও তো অন্যধর্মের নাগরিক আছে, অনেক হিন্দু আরএসএস- বিজেপির হিন্দু নাও হতে চাইতে পারেন, এমনকি কোন রাজনৈতিক হিন্দু হতেই নাও চাইতে পারেন! তারা কোথায় যাবে? অথচ সকলকে নিয়েই এক রাজনৈতিক সাম্যে – এমন বৈচিত্রগুলোর ঐক্যের এক ভারতীয় নাগরিক হলে হতে চাইলে পারবে না কেন?

রাজনৈতিক সাম্য মানে নাগরিক হিসাবে সবাই সমান, সম অধিকারে সমান। ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, গায়ের রং, সমতলি-পাহাড়ি সব ধরণের পরিচয় নির্বিশেষে সমান অধিক্কারের নাগরিক – এই ভিত্তিতে ঢেলে সাজাতে হবে রাষ্ট্রকে। এটাই জাতি-রাষ্ট্রের বিপরীতে অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র। সব ভিন্নতাগুলোর ঐক্য গড়ার প্রাথমিক ভিত্তি।

এদিকে কোভিড সমস্যা মোকাবিলা করতে গয়ে মোদী প্রশাসনের ম্যানেজমেন্ট ব্যর্থতা, এই পটভুমিতে ভারতকে নতুন দিশা আর ঐক্যের পথ দেখানোর সুযোগ ……

এসব দিকগুলাই হল, তৃণমুলের টানা তৃতীয় বা এবারের বিজয়ের গভীর তাতপর্য।

গৌতম দাস
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Advertisements