যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশের শত শত সদস্য মঙ্গলবার রাতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করছে। গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সৃষ্ট ছাত্র আন্দোলন দমাতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টার পর (জিএমটি ০১:০০) কয়েকজন পুলিশ অফিসার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হ্যামিল্টন হলে প্রবেশ করে। ছাত্ররা মঙ্গলবার সকালে এই ভবন দখল করে এর নাম দিয়েছিল হিন্দস হল। গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার শিকার ছয় বছরের শিশু হিন্দের স্মরণে তারা এই উদ্যোগ নেয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার জানায়, তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাসপেন্ড করার কাজ শুরু করেছে।
পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সময় জানায়, আমরা সবকিছু পরিষ্কার করছি।
কলম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিজ ইন প্যালেস্টাইন এক এক্স পোস্টে জানায়, পুলিশ অফিসাররা ‘দাঙ্গার সরঞ্জাম পরেছে, কয়েকটি ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেছে।’
তবে পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই বিক্ষোভকারীরা ‘স্বাধীন, স্বাধীন, স্বাধীন ফিলিস্তিন’ ধ্বনি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ নামানোর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা ক্যাম্পাসকে ‘সামরিকরণের’ নিন্দা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে নাগরিক অধিকার এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা যে কয়েকটি হল দখল করেছিল, তার অন্যতম ছিল এই হ্যামিল্টন হল।
একটি এক্স পোস্টে বিক্ষোভকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সিইউএডির তিনটি দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তারা হলটিতে থাকার পরিকল্পনা করেছেন। দাবিগুলো হলো : ইসরাইল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দায়মুক্তি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করার হুমকি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুশিবিরগুলো খালি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক আলোচনা অব্যাহত রাখলেও অন্যরা জোরপূর্বক উচ্ছেদের আল্টিমেটামের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
সোমবার টেক্সাস, ইউটাহ এবং ভার্জিনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভের সময় অনেককে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে হ্যামিল্টন হল দখলের কয়েক ঘণ্টা আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তারা শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিস্কার শুরু করেছে।
ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এবং এতে ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা নিয়ে ক্ষুদ্ধ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের সংখ্যা প্রায় এক হাজারে পৌঁছেছে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ফলে কলেজগুলোকে ইসরাইলের সাথে তাদের আর্থিক সম্পর্কের পাশাপাশি বাকস্বাধীনতার প্রতিও তাদের সমর্থনের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন, এই বিক্ষোভ ইহুদিবিদ্বেষে পরিণত হয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসে আসতে ভয় পাচ্ছেন বলেও জানায় তারা।
অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অ্যাটর্নি জানায়, সোমবার অন্তত ৪০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সামনে তাঁবু শিবির তৈরি করার পর বিকেলে কয়েক ডজন দাঙ্গা পুলিশ ছাত্রদের সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে সরানোর সময় তাঁবুর খুঁটি ভেঙে দেয়। যারা সরতে রাজি হয়নি, তাদের হাত বেঁধে ফেলা হয়। মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কাম্পাসে তাঁবু গাড়া নিয়মের লঙ্ঘন এবং পুলিশ ডাকার আগে ছাত্রদের সরে যাবার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল।
কলাম্বিয়ার প্রথম বিক্ষোভের পর থেকেই টেক্সাসের প্রতিবাদ শুরু হয়। কানাডা এবং ইউরোপ সহ অন্যান্য স্থানেও তা চলতে থাকে।
ইহুদি শিক্ষার্থীদের পক্ষে দায়ের করা একটি মামলায় দ্রুত আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়, যাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য হয়। মামলায় সশরীরে ক্লাস নেয়া থেকে সরে আসার ঘোষণা চালেঞ্জে করে দাবি করা হয়, নীতি ও প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে কলাম্বিয়া ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি আইনি দল যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের নাগরিক অধিকার অফিসের প্রতি, কলম্বিয়ার ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন মেনে চলার বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র।
সূত্র : আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল, ভয়েস অব আমেরিকা