বিএনপি’র নেতৃত্বে সমমনা দলগুলোর সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা। বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে, তাতে জনগণ সাড়া দেয়নি। গতকাল বিএনপি’র নেতৃত্বে যুগপৎভাবে গণঅবস্থানের দিন একাধিক সমাবেশে এসব কথা বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ সময় তারা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশবিরোধী কোনো শক্তি আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। মাথাচাড়া দিলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। গতকাল বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ গণঅবস্থানের দিন রাজপথে পাল্টা অবস্থান ও সমাবেশে সরব ছিল আওয়ামী লীগ। সকাল থেকে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখাসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয় হতে দেখা যায়। এদিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ড, থানার নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাও একইভাবে আসেন। তারা কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন।
বিএনপি’র আন্দোলন ভুয়া, গরুর হাট: বিএনপি’র আন্দোলনকে ভুয়া বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আজকের খবর জানেন, পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে।
১২ দলীয় জোট দেখলাম বিজয়নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭ দলীয় জোট প্রেস ক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে, মঞ্চে ২০ জন, সামনে সাংবাদিকসহ আরও ১৫ জন। বেলা ১টা পর্যন্ত তিন দল উপস্থিত ছিল, চার দল নেই। ৭ দলীয় ঐক্যজোট, তারপর সমমনা ১২ দল বিএনপি’র সমমনাদের দেখলাম। ওই এলাকাজুড়েই (পল্টন) আছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ছাড়াও মিরপুরে দুপুরের পর সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানা রোডের ঈদগাহ মাঠে। সেখানে দলের মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এর বাইরে যুবলীগ ফার্মগেট ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে। ছাত্রলীগ শাহবাগে সমাবেশ করে। দলীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা বসে আছে ফুটপাথের ওপর, মঞ্চ ও শ্রোতা সেখানেই, সবাই ফুটপাথকেন্দ্রিক। তারপর এলডিপি দেখলাম সেই দৃশ্যপট, কয়েকজন হাতেগোনা বসে আছে। ৫৪ দল আজকে একজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টা ঘোড়ার ডিম পাড়বে, ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভুয়া…ভুয়া…ভুয়া… এটা গরুর হাট। বিএনপিকে বাংলার মাটিতে আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যেতে পারে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্রকে মেরামত করবে? রাষ্ট্রকে আবার ক্ষমতা পেলে তারা ধ্বংস করবে। এই দেশের গণতন্ত্র বাঁচবে না, তারা ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার আদর্শ বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের বস্ত্রহানি ঘটবে। এই অপশক্তি জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষক, সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্টপোষক। তিনি বলেন, বিএনপি নামক এই অপশক্তির হাতে ক্ষমতা আমরা তুলে দিতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কী দেখাবেন আপনারা? মুখে মিথ্যাচার আর বিষোদগার। আপনাদের নেই মেট্রোরেল, নেই পদ্মা সেতু, নেই বঙ্গবন্ধু টানেল, নেই উড়াল সেতু, নেই আন্ডারপাস, নেই একদিনে শত সেতু, কে করেছে, শেখ হাসিনা করেছেন। এ সময় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করছে। আমি কোনো কোনো অনলাইনে দেখলাম যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি কেন? ১০ই জানুয়ারি তো বিএনপি’র হৃদয়েও নেই, চেতনায়ও নেই। ১০ই জানুয়ারি তারা করেনি।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোনো অপশক্তির জায়গা হবে না। বিএনপি’র সঙ্গে দেশের জনগণ নেই, তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি হলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। বিএনপি নতুন করে আবার দেশে বিশৃঙ্খলা করার ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কোনো বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে আমরা তাদের কঠোরভাবে দমন করবো। বিএনপির লজ্জা থাকা উচিত। তারা কী করে আবার গণতন্ত্রের কথা বলে? এ স্বাধীন দেশে বিএনপি হলো সাম্প্রদায়িক দল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, আজ বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, সেই অগ্রযাত্রায় সারা বিশ্ব যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখনই এই দেশে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, যারা ২০১৩-১৪-১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, সেই অপশক্তি আবারো মাঠে নেমেছে।
এই সরকারের পতন ঘটানো যাবে না: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে বলেছেন সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবেন না। সরকারের পতন হবে না। কারণ, এই সরকার জনগণের সরকার। এই সরকার শান্তির সপক্ষের সরকার, এই সরকার উন্নয়নের সরকার। এই সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। মির্জা ফখরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আপনি বলুন যদি এই সরকারের পতন না ঘটাতে পারেন তাহলে ওই নয়াপল্টনে কান ধরে ওঠ-বস করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন। সেই ওয়াদা বাংলার জনগণের কাছে করতে হবে। ১৫ই আগস্টের চক্রান্তকারীরা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে দাবি করে তিনি বলেন, সেই চক্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতি-উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ১০ই ডিসেম্বর ও ৩০শে ডিসেম্বর যেভাবে তাদের আন্দোলন প্রতিহত করা হয়েছে, আজও তাদের গণকর্মসূচি ব্যর্থ করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করতে পারে, যারা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করতে পারে, যারা জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করতে পারে, তারা আর যাই হোক এ দেশের মঙ্গল কামনা করতে পারে না। ওরা খুনি। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি কর্মসূচি পালন করে সরকার হটানোর জন্য। তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তারা আবারো যদি রাস্তায় নামতে চায়, তখনই প্রতিহত করা হবে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, অপরাধের দায়ে বিএনপি-জামায়াতকে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যুবলীগ তাদের অনেক ছাড় দিয়েছে, সামনে ছাড় দেয়া হবে না। আরেকবার মানুষের গায়ে হাত দিলে যুবলীগ সমুচিত জবাব দেবে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খাঁন নিখিল, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ নাঈম, রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মনির মো. শহিদুল হক রাসেল, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।