আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও বামদের মদদপুষ্ট কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশের মানুষকে আবারো অন্ধকার ও দুর্দশার যুগে নিয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা যে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যটা আসলে কী? কী কারণে তারা সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায়। আসলে তারা জনগণকে এই সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তা থেকে বঞ্চিত করতে চায়। এটাই কি তাদের আসল উদ্দেশ্য? গতকাল বুধবার গণভবন থেকে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আশঙ্কার কথা বলেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল তখন আমাদের কিছু কিছু মানুষ বিদেশের কাছে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে ব্যস্ত, সরকার উৎখাতে ব্যস্ত। খুব ভালো কথা! তাদের কর্মসূচি জনগণের কাছে তুলে ধরুক তারা দেশের মানুষের জন্য কী করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দেশের কোন সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে কখনোই জনগণের পাশে থাকেন না। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তারা অনেক বেশি ব্যস্ত থাকেন সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তুলতে। মি. মান্না, ড. কামাল হোসেন, কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম দলগুলো আওয়ামী লীগ সরকারকে উচ্ছেদ করার আন্দোলন গড়ে তুলতে এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, তারা সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায়। আমার প্রশ্ন, অপরাধটা কী আওয়ামী লীগের? আমরা যে সরকারে এসেছি ২০০৮-এর নির্বাচনে, যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা রূপকল্প-২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য আমরা স্থির করেছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে, ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা সরকারে এসেছি। আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে আমাদের লক্ষ্য আমরা অর্জন করেছি। তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি আমরা। সেই সময়ে আমরা কী অর্জন করেছি? বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছি। আমার প্রশ্ন, এটা কি তাদের ভালো লাগেনি? সেই জন্য কি তারা বাংলাদেশকে মানে এই সরকারকে হটাতে চায়?
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমার প্রশ্ন হলোÑ তারা কি দেশের এই ক্রম-উন্নয়ন পছন্দ করছে না? মনে হচ্ছে, সে জন্যই তারা এই সরকারের উচ্ছেদ ঘটাতে চায়। সরকার দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং তৃণমূল পর্যায়ের ও গ্রামীণ এলাকার মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে গৃহীত সরকারের পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছে। এ জন্যই তাদের শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি ইস্যুতে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেÑ যাতে করে দেশ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ইস্যুর পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে অধিকতর ইতিবাচক ফলাফল পেতে পারে। আমরা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। আজকে সারা বাংলাদেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি। ভূমিহীনদের মাঝে যে কর্মসূচি জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, আমরা আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সেই ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর দিচ্ছি, জমি দিচ্ছি। প্রথমবার সরকারের এসে আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছিল। আমরা ব্যারাক হাউস নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার আসার পর থেকে আমরা এখন তাদের আলাদা সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।
সরকারবিরোধীদের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে একটা মানুষ একটা ঘর পাওয়ার পর তার জীবন-জীবিকার পথ সে খুঁজে পাচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে, এটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? এ জন্যই কি এই সরকারকে হটাতে হবে? ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছি। বেসরকারি ব্যাংক আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি এবং তাদের ওপর শর্ত আছে যে, প্রতিটি উপজেলা পর্যন্ত তাদের শাখা থাকতে হবে। তাছাড়া সরকারি ব্যাংক আছেই। এখন ১০ টাকায় কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তার ভর্তুকির টাকা সরাসরি সে ব্যাংকের মাধ্যমে পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সারের দাম আমরা কমিয়েছি ৪ দফা। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা নিয়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। আমাদের এই একটা সিদ্ধান্তই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা পরিবর্তন করে দিয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম কারো টাকা লাগবে না, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাব। আল্লাহর রহমতে সেটা তৈরি করে ফেলেছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড কানেকশন দিয়েছি আমরা। ডিজিটাল সেন্টার করেছি। আজকের বাংলাদেশে এ ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক মানুষ নিজের ঘরে বসে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আর্থিক সচ্ছলতা পাচ্ছে, তাদের আমরা ট্রেনিং করাচ্ছি। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ট্রেনিং।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর খরচ নিয়ে যারা বিতর্ক করেন, তাদের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পায়রায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে টাকার সাশ্রয় হয়েছেÑ জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করে এত বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজন কী? শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গেলে বিদ্যুৎ তো আমাদের তৈরি করতেই হবে। আমরা সেখানে যে প্রায় ৯শ’ কোটি টাকার মতো বাঁচাতে পারলাম এই কথাটা তো কেউ বলেন না। এটা বলতে বোধ হয় তাদের একটু কষ্টই হয়। যে একটা প্রজেক্টে টাকা আরো বেশি লাগবে, সেখানে টাকা আরও সাশ্রয় হয়, সময় বাঁচাবে এটা বোধ হয় আমাদের সমালোচকদের পছন্দ নয়, তারা সেটাই চাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকটা মানুষের ভাগ্য যাতে পরিবর্তন হয়, তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আজকে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। করোনার সময়েও আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। আরো বহু কাজ আমরা করে যাচ্ছি। তা আমার প্রশ্নটা হচ্ছে এই যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি, এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তৃণমূলের মানুষ, গ্রামের মানুষ উপকার পাচ্ছে, তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যেটা কী? এসব মানুষকে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া? এটাই কি তাদের লক্ষ্য? এটাই তাদের উদ্দেশ্যে? সেই জন্যই তাদের শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই প্রশ্ন তাদের কাছে, কী অপরাধটা করেছি এখানে? তারা লুটপাট করে খেয়েছে, মানুষ খুন করেছে। তাদের হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষগুলোকে হত্যা করেছে। সেই ২০১৩ সালের কথা সকলের মনে আছে। ২০১৫ সালে কীভাবে মানুষ হত্যা করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে যে অত্যাচার সারা বাংলাদেশে করেছিল এই বিএনপি-জামায়াত জোট সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে অত্যাচার করেছিল ঠিক একইভাবে। তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তারই ভিত্তিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন দাবি করা লাগবে না। এই দেশের কৃষকের জন্য কোনটা মঙ্গলের সেটা আওয়ামী লীগ সরকার ভালোভাবেই জানে। এ সময় এবারও ধান কাটার সময় কৃষক লীগকে কৃষকের পাশে থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন. সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ড. এম এ জলিল, মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মানু ও হারুন অর রশীদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।