দীর্ঘ দিন ধরেই চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। এ অবস্থার মাঝেও সংগঠনকে সুসংহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল ইসলামি শক্তিকে নিয়ে জোটবদ্ধ হবার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে ইসলামপন্থি দল ১০টি। এরা হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, জাকের পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদের মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ)। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে রয়েছে তরিকত ফেডারেশন।
ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একসময় বিএনপির জোটে ছিল। বর্তমানে তারা স্বতন্ত্র অবস্থানে। যদিও এখনো খণ্ডিত একটি অংশ ২০ দলে রয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জাকের পার্টিও স্বতন্ত্রভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে, অধিকাংশ ইসলামি দল নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ ইস্যুতে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে রাজপথের কর্মসূচি দেওয়ার কথাও ভাবছে তারা। একই সঙ্গে চলছে জোট গঠনে নানা তৎপরতা।
বর্তমানে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেয়। অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনের দিন ভোট বর্জন করে। বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে সরব।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান রেডিও তেহরানকে বলেন, সামনে মার্চ মাস জুড়ে সারা দেশে দাওয়াত ও সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে। পরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ আরও কিছু দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ করার চিন্তা আছে।
নির্বাচনে অংশ গ্রহন প্রসঙ্গে তিনি জানান, তারা নির্বাচন পন্থী দল এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের ভোটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে-দেশে দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। অতএব নির্বাচনকালীন একটি গ্রহণযোগ্য সরকার লাগবে। সে জন্য ইসলামী আন্দোলন জাতীয় সরকারের দাবি জানিয়েছে, যাতে সেটা সকলের কাছে কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, ভোটের পরিবেশ ফিরে আসে, ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। আগামী দিনে এ দাবিতে দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি থাকবে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন-এর নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবর রহমান হামিদী রেডিও তেহরানক বলেন, তারা দলের তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠন, স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনকে সক্রিয় করা এবং সতর্কতার সাথে প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য আসন ভিত্তিক কমিটি করে একাধিক প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের এ নেতা বলেন, তারা ইসলামপন্থী দল ও শক্তি সমুহ একটি নির্বাচনী জোটে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছেন।
ওদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামী। শীর্ষ থেকে তৃণমূলের প্রায় সব নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। দলের সেক্রেটারিসহ শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা এখনো কারাগারে রয়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় এবং সক্রিয় নেতারা কমবেশি সবাই আত্মগোপনে থাকলেও ধর্মীয় এবং নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে জামায়াত।
গ্রেফতার ও সরকারের নজরদারি এড়াতে এ কৌশলে গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এমনকি সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। সারা দেশে অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তাদের প্রার্থী জয়লাভও করে। আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির ঢাকা মহানগরীর এক নেতা বলেন, সরকার আমাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। তবে আমরা কৌশলে দলকে শক্তিশালী করছি। সময়মতো রাজপথে নামব।
হেফাজতে ইসলাম ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। সংগঠনটি গত বছরের শুরু থেকেই সরকারের চাপে রয়েছে। গ্রেফতার হয়ে এখনো কারাগারে আছেন শীর্ষ পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতা। আগামী নির্বাচনে এ সংগঠনটির ভূমিকা কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই মুহূর্তে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ইসলামি দলগুলোর নেতারা অনুধাবন করতে পারছেন যে, কোনো পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিকূলতা আরও বেশি। তবে তাদের মতে, এ সময়ে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো জনসম্পৃক্ততা তৈরি করা। জনগণকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে বেশি বেশি সম্পৃক্ত করা।
খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহম্মদ ইসহাক বলেন, আমরা স্বাধীন দল। আমরা ক্ষমতাসীন অথবা অন্য দলেরও সহযোগী হব না। তবে বিরোধী দলের পক্ষে আমাদের অবস্থান। আমাদের দাবি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এটা জনগণও চায়। আমরা জনগণের পক্ষে। এই দাবিতে আমরা আলাপ-আলোচনা করে কর্মসূচি ঠিক করব।
পার্সটুডে