৩০০ টাকা মজুরীর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চালিয়ে যাবে চা শ্রমিকরা
Advertisements

বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ৩০০ টাকা মজুরীর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্মঘটী শ্রমিকেরা।

আজ রোববার (২১ আগস্ট) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৫ ঘণ্টা অবরোধের করে রাখার পর নিজ নিজ বাগানে ফিরে গেছেন শ্রমিকরা। এসময় মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করলেও অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। তারা দাবি মেনে নেয়ার জন্য দুদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ২৩শে আগস্ট শ্রম মন্ত্রণালয়ে মিটিং রয়েছেন। সেই মিটিংয়ে দাবি মানা না হলে ফের তারা মহাসড়ক অবরোধ করবে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, সারাদেশে ধর্মঘট চলবে।

উল্লেখ্য, শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে ২০ আগস্ট বিকেলে এক বৈঠক থেকে চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৪৫ টাকার প্রস্তাবকে চা-শ্রমিক সংঘ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২১ আগস্ট গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী ও যুগ্ম-আহ্বায়ক শ্যামল অলমিক বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে দৈনিক ১৪৫ টাকা মজুরির প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৯ আগস্ট থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে দেশের ১৬৭ টি চা-বাগানের লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মবিরতি চালিয়ে আসছিলেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে একজন চা-শ্রমিককে সর্বোচ্চ দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মৌলভীবাজার, সিলেট, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে মজুরী ২৫ টাকা বৃদ্ধি করে দৈনিক ১৪৫ টাকার মজুরির ঘোষণা দেওয়া হয়। উপস্থিত শ্রমিকরা তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনায় অবস্থান নিয়ে ঢাকা-মৌলভীবাজার সড়ক প্রায় দুই ঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণার সংবাদ চা-বাগানে পৌঁছামাত্র শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে রাস্তায় নেমে পড়েন এবং ইউনিয়নের নেতাদের দালালির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।পরবর্তীতে তোপের মুখে ইউনিয়নের নেতারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।

শ্রমিক নেতাদের ঘোষণা অনুযায়ী, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় জড়ো হন তেলিয়াপাড়া, সুরমা, নোয়াপাড়া, জগদীশপুর, লস্করপুর ভ্যালিসহ ২৩টি বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক। এসময় তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

মহাসড়কের উভয় পাশে আটকা পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। প্রায় ৪০ কিলোমিটারজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। যানজটে আটকা পড়ে তীব্র গরমে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। বেলা দিকে তারা মহাসড়ক অবরোধ প্রাত্যাহার করে নেয়।

লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক বলেন, আমাদের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা-বাগানের বাগান পঞ্চায়েত নিয়ে আমরা বসেছিলাম। তারা সবাই ১৪৫ টাকা মজুরিতে ধর্মঘট প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানান। মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকেরা ১৪৫ টাকা মজুরি মানছেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলে দিতে চাই, যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে থাকে তাহলে আমরাও স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চাই। আমাদের কেন মানসিকভাবে নির্যাতন করছেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাকালে যখন সবকিছু বন্ধ ছিল, তখনো আমাদের শ্রমিকরা করোনার ভয় কাটিয়ে কাজ করে গেছেন। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের ২৩টি চা বাগানে কাজ বন্ধ থাকবে। দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আমরা প্রত্যাহার করলাম। এদিকে একই দাবিতে সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে চা শ্রমিকরা। বেলা ১১টা থেকে সিলেট ভ্যালির চা-শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এতে উভয়পাশে হাজারো যানবাহন আটকা পড়ে। বেলা ১টার দিকে আন্দোলনস্থলে হাজির হন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান। মজুরি বৃদ্ধির দাবি আদায়ে আলোচনার জন্য একদিনের সময় চান তিনি। শফিকুর রহমানের আশ্বাসে সিলেট বিমানবন্দর সড়ক থেকে সরে আসে শ্রমিকরা। তবে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

Advertisements