স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতের বড় কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি কেউ দেখাতে পারেনি। অন্য খাতে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি ও বিদেশে পাচার হয়েছে বলেও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে সেই খাতগুলোর নাম উল্লেখ করেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
আজ শনিবার (১২ জুন) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালের টেস্টিং জালিয়াতি, একজন ড্রাইভার বা নিম্নপদস্থ কর্মচারীর দুর্নীতি বা বিচ্ছিন্ন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে অস্বচ্ছতার খবর ছাড়া কেউ স্বাস্থ্যখাতের বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। এক্ষেত্রে যারাই স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম করেছে, তাদেরকেই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয়েছে।’
স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অভিযোগ করাটা এখন অনেকেরই একটি ‘ফ্যাশনে’ পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সম্প্রতি টিআইবির প্রকাশিত প্রতিবেদন মিথ্যা ও ভুল তথ্য সংবলিত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালীন সংকটকালে দেশের স্বাস্থ্যখাত যখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত তখন টিআইবি দেশের স্বাস্থ্যখাতকে নিয়ে একটি অসত্য রিপোর্ট তুলে ধরেছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার দুঃসময়ে টিআইবি মাঠে নেমে কোনো কাজ করেনি। মাঠে কাজ করেছে দেশের স্বাস্থ্যখাতের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে তারা মুখস্থ বিদ্যার মতো ঢালাওভাবে স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা করেছে।’
টিআইবির প্রতিবেদনের সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিআইবি বলেছে দেশে কোভিড টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। অথচ দেশে কোভিড টেস্টিং কেন্দ্র মাত্র ১টি থেকে এখন ৫১০টি করা হয়েছে। টিআইবি বলেছে, হাসপাতালগুলোতে করোনা বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি, অথচ এখন দেশে করোনা বেড সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। কিছুদিন আগেও ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন হাসপাতালে প্রায় ১০০০ নতুন কোভিড ডেডিকেটেড বেড বাড়ানো হয়েছে, যেখানে প্রায় সবই সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধাপ্রাপ্ত এবং সেখানকার অর্ধেকেরই আইসিইউ সুবিধা আছে। টিআইবি বলেছে, দেশে আইসিইউ বেড সংখ্যা বাড়েনি। অথচ করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩০০ ভাগ আইসিইউ বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে দেশে মাত্র ২০০টির মতো আইসিইউ বেড ছিল। আর এখন আইসিইউ বেড সংখ্যা ১০০০টিরও বেশি।’
‘টিআইবি ভারতের সঙ্গে ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তিতে অস্বচ্ছতার কথা বলেছে, যা মোটেও সত্য নয়। ভারতের সঙ্গে চুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছু ছিল স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার ও উন্মুক্ত। দেশের সব মানুষই জানে ভারতের সঙ্গে কী কী ছিল চুক্তিতে এবং কেন ভারত চুক্তির অবশিষ্ট টিকা দিতে পারেনি,’ বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এছাড়াও টিআইবি বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার প্রসঙ্গে, টিকার প্রায়োরিটি সেট করা বা বিদেশগামী যাত্রীদের সেবা দেওয়ার বিষয়ে যে সমালোচনা করেছে তা আগাগোড়াই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি ভ্যাকসিন কার্যক্রম যখন গোটা দেশে প্রশংসিত হয়েছে তখন টিআইবি সেটি নিয়েও সমালোচনা করেছে। অথচ দেশের করোনা মোকাবিলায় তাদের (টিআইবি) কোনো ভূমিকা নাই। মাঠে কাজ করছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। দেশে মাত্র একটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল। সেটি এখন ১৩৪টি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই করোনা চিকিৎসা পেয়েছে। ওষুধে কখনই দেশের কোনো ঘাটতি হয়নি, পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্নীতি হলে সেটিতে দ্রুত গতিতে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যখন দেশে বিদেশে আমাদের সুনাম হয়েছে,তারা সেটি নিয়েও সমালোচনা করেছে। সুতরাং স্বাস্থ্যখাতকে নিয়ে টিআইবির এই মনগড়া মিথ্যা রিপোর্টটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
এসময় তিনি চীন থেকে ভ্যাকসিন কেনা নিয়ে চুক্তি সই হয়েছে বলে জানান। চীনের পক্ষ থেকে শিগগির এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।