সাম্প্রতিক পাঠ্যপুস্তকে বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক ইতিহাস তৈরি প্রসংগে
Advertisements

বখতিয়ার বাংলা জয় করেন নাই। তিনি দখল করেছিলেন নদীয়া। তিনি কার্যত কোনো ইসলাম প্রচারকও ছিলেন না। ছিলেন একজন ভাগ্য অন্বেষনকারী যোদ্ধা। কিন্ত বাংলার তৎকালীন সেন রাজারা এতোটাই অত্যাচারী ছিল দেশবাসী বাইরের থেকে আসা বখতিয়ারদের বাহিনীকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে মনে করেন। অথচ এই সামান্য তথ্যগুলো না জেনে বোর্ডের বই লিখতে বসে যাওয়াটা নিতান্ত লজ্জাজনক।

ওদিকে লক্ষণ ও তার দুই পোলা বিশ্বরূপ আর কেশবের শাসন যদি বিক্রমপুরে টিকেই থাকে তাহলে বখতিয়ার কেমনে বাংলা দখল করে? লক্ষ্মণের পোলা বিশ্বরূপের মদনপাড়া, ইদিলপুর ও ঢাকার তাম্রশাসন থেকে যবনদের উৎখাত করে সনাতনের বিজয়ের উল্লেখ রয়েছে। তাইলে চিন্তা করেন কোন মূর্খতার স্বর্গে আমাদের বর্তমান সময়ের ইতিহাস লেখকরা বাস করছেন।

সেন বংশের শেষ নিপীড়ক লক্ষণ মনে করেছিল প্রজা বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেছে। তুর্কিক আক্রমণ কিংবা বখতিয়ারের বাহিনী চলে আসার থেকেও বড় ভয় ছিল তার নিজ দেশের নিপীড়িত জনগণের বিপ্লব ঘটে যাওয়ার। তার নিজের ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীর উৎপাত বাদ দিলেও তার স্ত্রী বল্লভা আর শালা কুমারদত্ত যে জঘন্য অত্যাচার করেছে সেটার জন্য লক্ষণ সেন পরিবারকে আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় অনেকবার ফাঁসি দেওয়া যায়।

সবকিছুতে ইসলাম খুঁজে বেহেশত পাওয়া যে দুর্বিনীত চিন্তা সেখান থেকে বখতিয়ারের জয়লাভকে মুসলিম বিজয় বলে উল্লসিত হওয়ার কিছু নাই। ঠিক তেমনি উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচার ও প্রসারের ঠ্যাঙ্গাড়ে লাঠিয়াল বাদে নিপীড়ক সেনদের কেউ পক্ষ নিতে পারে না। অন্তত ঝাঁকে ঝাঁকে বৌদ্ধ হত্যার যে জঘন্য ইতিহাস তার তৈরি করেছিল এর সঙ্গে তুলনা করার মতো হিংস্রতা বাংলার ইতিহাসে কম আছে।

শেরে বাংলা ফজলুল হককে নাকি একবার তাঁর চাচা বলেছিলেন ‘ভাতিজা তোমার কাণ্ডকীর্তিতে তো আর লোকসমাজে মুখ দেখানো যায় না’। শেরে বাংলা চাচাকে বলেছিলেন ‘কাকা মুখ দেখাতে না পারেন ওদের হোগা দেখায় দেন’। সম্প্রতি এন সি টিবির ইতিহাস বইতে আবোলতাবোল লেখাগুলো পড়ে মনে হয়েছে মুখ দেখাতে না পেরে উনারা জাতিকে জাস্ট হোগা দেখায় দিছেন। এদের কাণ্ডকীর্তি নিয়ে লিখে নিজের সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে করে না, তবুও দায় থেকে না লিখে পারি না।

যাই হোক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইডি গবেষক জনাব Md Mizanur Rahman লিখেছেন কিছু সারগর্ভ কথা। আপনারা খেয়াল করুন মিজানুর রহমান কি লিখেছেন।কেনো লিখেছেন।

১.বখতিয়ার খলজী অসংখ্য বিহার ও লাইব্রেরী ধ্বংস করেছেন’ এরকম অনেক অনৈতিহাসিক, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েই লিখা হয়েছে এবারের স্কুলের পাঠ্যবই।কোনো নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সোর্সই এ ধরনের বক্তব্যের সত্যতা প্রতিপাদন করে না।মনে হয়েছে, ইতিহাস নয় বরং লেখকদের কারো কারো নিজস্ব বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়।

২. পাক-ভারত-বাংলাদেশ এক সময়ে ছিলো বৌদ্ধ অধ্যুষিত। সেই বৌদ্ধরা কিভাবে এদেশ থেকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয়ে গেলো তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে তবে তার কোনোটাতেই বখতিয়ার খলজীকে অনেক গুলো বিহার ও লাইব্রেরী ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হয় নাই।কয়েকজন নালন্দা (বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়) ধ্বংসের জন্য বখতিয়ার খলজীকে দায়ী করলেও সেটাকে আবার অধিকাংশ ঐতিহাসিক নাকচ করে দিয়েছেন due to prejudice rather than fact. (দেখুন;Truschke,A. 2018. THE POWER OF THE ISLAMIC SWORD IN NARRATING THE DEATH OF INDIAN BUDDHISM, Journal of the history of religion, Chicago University press. Vol. 57(4), P.406-435)।

৩. রাধাকৃঞ্চ চেীধুরী নালন্দায় ১৯৬০-৭২ সাল পর্যন্ত পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের উপর ভিত্তি করে ‘Decline of the University of Vikramasila’ প্রবন্ধ লিখে পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন যে বখতিয়ার খলজী’র বাংলা অভিযানের সাথে নালন্দার ধ্বংসের কোনো সম্পর্কই ছিলো না।

৪. রাধাকৃঞ্চ চেীধুরী লিপিতাত্ত্বিক (Epigraphic) ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন যে, নালন্দা ধ্বংসের সাথে বিজয় সেনের যুক্ততা ছিল যিনি সেন বংশের প্রতিস্ঠাতা হেমন্ত সেনের ছেলে ছিলেন।তাদের বসবাস ছিল বর্তমান রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার দেওপাড়া’য়। দেওপাড়াতে প্রাপ্ত একটি লিপিস্বাক্ষ্যের ভিত্তিতে তিনি এরুপ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন (দেখুন:Chaudhary, R. 1978. Decline of the University of Vikramasila, Journal of the Indian History, Vol. LVI, Part II)।
এ বিষয়গুলো অনেক জটিল এবং পুরো রহস্য অনুদঘাটিত। তদুপরি এগুলোর সাথে আছে উপমহাদেশের ক্ষমতার রাজনীতির নানা জটিল হিসেব-নিকেশ। এরকম বিষয়সমূহ উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য বিবেচনা করা উচিত, স্কুলের জন্য তা মোটেও উপযুক্ত নয়।

৫.
বইটিতে আরো অনেক অসংগতি রয়েছে। বিশেষ করে বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাসকে খারাপভাবে উপস্থাপনে নানা চাতুর্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। একই সাথে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যার মাধ্যমে বাংলার কৃষকদেরকে ভূমি’র মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল সেটাকে মহিমান্বিত করা হয়েছে ! আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে জমিদারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন আজ আমাদেরকে তা ভূলিয়ে দিয়ে তাদের মাহাত্ন আর গুণগান শেখানো হচ্ছে? এনসিটিবিটি কিসের উপর ভিত্তি করে লেখক আর কন্টেন্ট নির্ধারণ করে বুঝতে পারলাম না।

ওদিকে একই বিষয় নিয় উচ্চবাচ্য শুরু হওয়ার পর নন্দিত লেখক অধ্যাপক A K M Shahnawaz যথারীতি তাঁর মন্তব্য দিয়েছেন। একটি দৈনিক তাঁর বক্তব্যও সেখানে ছেপেছে। তিনি পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস বিচ্যুতির নানা উদাহরণ দিলেও উপরোক্ত বক্তব্যগুলো হয়তো সেখানে ওভাবে আসেনি। আমরা তাঁর পরবর্তী লেখাগুলোর জন্য অপেক্ষা করতেই পারি।

আর সে প্রেক্ষিতে আমি লিখেছিলাম “স্যার” আপনার সহকর্মী মিস্টার সেন এন্ড আদার্স উনারা বাংলার ইতিহাস থেকে সুলতানি ও মোগল আমল পুরোপুরি গায়েব করে দিলেন। পাশাপাশি উনারা স্বপ্নে পাওয়া ইতিহাসের গল্প বলে বখতিয়ারকে দিয়ে অজস্র বিহার ও পাঠাগার ধ্বংস করালেন। লক্ষণ সেনকে ভূমিপুত্র বানালেন পাশাপাশি আফগানিস্তানের গরমশীরের অধিবাসী বখতিয়ারকে বানালেন তুর্কি। আলাউদ্দিন হোসেন, শামসুদ্দিন ইলিয়াস, সিকান্দর, গিয়াস ওরাও বাংলার ইতিহাস থেকে গায়েব। সুলতানি বাংলার কোনা সমৃদ্ধি তারা চোখে দেখে না।

ওদিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো অপমানজনক জমিদারী আধিপত্যের প্রথাতেও তাঁরা ইতিবাচক দিক খুঁজে পেলেন এগুলো আপনার এই লেখায় আসা উচিৎ ছিল। অনেক আগ্রহ নিয়ে আপনার এই লেখাটা পড়তে বসে পুরোপুরি হতাশ হলাম। যে বিভ্রান্তির সূচনা হয়েছে আপনার অবাক নীরবতা ইতিহাস বিভ্রান্তির এই জঘন্য প্রবণতাকে আরও দীর্ঘায়িত করবে। একরৈখিক ইতিহাসের পাশাপাশি উদ্দেশ্য প্রণোদিত জঘন্য মিথ্যাচারগুলো আরও লম্বা লম্বা গরুর রচনায় রূপ নিয়ে দখল করবে পাঠ্যপুস্তকের পাতা। এর থেকে আশু মুক্তির জন্য স্পষ্ট উচ্চারণে সত্য কথা বলাটা অনেক জরুরি। আমার প্রশ্ন এই সত্যটা বলবে কে?

Jaglul Asad এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, মিথ, ইতিহাস ও মতাদর্শ ইউরোপীয় বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসের মশহুর পণ্ডিত Enzo Traverso এর বিখ্যাত একটা উক্তি আছে History is a battlefield: ইতিহাস এক যুদ্ধের ময়দান। ইতালীয় এই ইতিহাসতাত্ত্বিকের একটা বিখ্যাত বইয়ের নাম- Revolution: An intellectual history। জাতীয়তাবাদী রাজনীতি,সর্বাত্মকতাবাদী বা টোটালিটারিয়ান শাসন ও নানামুখী অপরায়নের জন্যে কার্যকর একটা অস্ত্র হচ্ছে ইতিহাস। আইডিওলোজিকাল ওয়ারফেয়ারে ইতিহাসের বয়ানের উপর দখল কায়েমের মতো বড় কাজ আর নাই।

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ডি এন ঝা তাঁর “Against the Grain: Notes on Identity, Intolerance and History” বইয়ে ইতিহাসের রাজনীতি, স্কুলের পাঠ্যক্রমে ইতিহাস বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সময় যা যা চেপে রাখা হয় ইত্যাদি দেখিয়েছেন। যেমন, ডি এন ঝা বলতেছেন, হি ন্দুদভা রাজনীতির জন্যে এই দুটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক যে,

১। প্রাচীন ভারত ছিল শান্তি ও সম্প্রীতির এক বিরল যুগ এবং ২। মধ্যযুগের মুসলিম শাসনামলে মুসলিম শাসকরা ছিল বহিরাগত এবং মন্দির ও প্রতিমা ধ্বংসকারী। তাই ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখিতিয়ার খিলজিকে দেখাতে হয় আক্রমণকারী, মন্দির ও প্রতিমা ধবংসকারী হিসেবে । নালন্দা বৌদ্ধবিহার ধবংসের জন্যেও দায়ী করা হয় ইখতিয়ার উদ্দীনকে। অথচ এই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধবংস হয় আরো আগে।

এমনকি ওই অঞ্চলে তাঁর যাওয়াই হয়নি। ওটি ব্রাহ্মণ্য গোষ্ঠীর প্রভাবে বৌদ্ধধর্মের দুটি সেক্টের দ্বন্দ্বে বিধবস্ত হয় । D.N Jha তো Brahmanic sect কেই যুক্তিপ্রমাণসহ এই ধ্বংসাত্মক কর্মের জন্যে দায়ী করেন। D.N Jha এর লেখাটিকে বিজেপি নেতা Arun Shourie ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে অভিযুক্ত করলে সেটির যথোপযুক্ত জবাবও দেন D.N Jha. D.N Jha দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন, এবং তিনি Indian council of historical research এরও সদস্য ছিলেন। ২০২১ এ মারা যান। তাঁর Myth of holy cow বইটা খুব সাড়া জাগিয়েছিল,বেশ আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছিল। হুমকিও খেয়েছিলেন এই অধ্যাপক তাঁর এই একাডেমিক কাজের জন্যে।

আরেকটা ঐতিহাসিক মিথ ও মিথ্যা হচ্ছে, ৬৪২ সালে মিশর বিজয়ের পর হযরত উমর (রা;) এর অনুমতিক্রমে আমর ইবনুল আস(রাঃ) আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি ধবংস করেন। অথচ, এই দাবি পুরোই আনফাউন্ডেড, ভিত্তিহীন। ৭ম শতাব্দীতে কেউ এই দাবি তুলেন নাই, এই দাবি তোলা হয়েছে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে, দাবিকৃত ঘটনার প্রায় ৫০০/৬০০ বছর পর। উমর(রাঃ) এর আদেশে লাইব্রেরি ধবংসের এই ঘটনাকে untrustworthy বলেছেন এডোয়ার্ড গিবন। তাঁর যুক্তি দুটিঃ

১। এই দাবি তোলা হয়েছে উল্লেখিত ঘটনার ৫০০ বছর পর। ২। মুসলিমদের ইতিহাসে যুদ্ধ ও বিজয়কালে অপর পক্ষের প্রোপার্টি ধবংস করা,গাছ ও শস্য পোড়ানো ধর্মীয়ভাবেই নিষিদ্ধ। উমর(রাঃ) এর এই ঘটনাকে পি কে হিট্টি বলেছেন ” good fiction but bad history” । এনসাক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকা জানাচ্ছে, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি মুহাম্মদ(সা;) এর নবুয়াতের বহু আগে ধবংস হয়েছিল, চতুর্থ শতাব্দীতে। সর্ব প্রথম এটার অর্ধেক ধবংস করেন জুলিয়াস সিজার খ্রীস্টপূর্ব ৪৭ সালে। তার পর একবার তৃতীয় শতকের গৃহযুদ্ধে ও আরেকবার ৩৯১ খ্রীষ্টাব্ধে।

John M Robertson উমর(রাঃ) আলেকজেন্দ্রিয়ার লাইব্রেরি ধবংসের গল্পকে মিথ ব’লে প্রত্যাখ্যান করেছ্রন। John M Robertson History of free thought: Past and present বইটি লিখেছেন। ভারতীয় ঐতিহাসিক D.P singhhal এই গল্পটাকে untenable বা অসমর্থনযোগ্য বলেছেন।

তিনি বলেন, আবুল ফারাজ নামের এক সিরিও খ্রীস্টান, যার অন্য নাম Barhebraeus / Ibn al-‘Ibri নামের এক আগন্তুক ঘটনার ৫০০ বছর পর এটাকে উল্লেখ করেন। ১৬৬৩ সালে পশ্চিমা একাডেমিয়ায় এই ঘটনা চাওর হয় ইবনে ফারাজ ওরফে বারহেব্রাইউস ওরফে ইবনে আল ইব্রি’র আরবি লেখা History of the Dynasty এর ল্যাটিন অনুবাদের মাধ্যমে। ১৭১৩ সালে এই গল্প নিয়ে প্রথম সন্দেহ প্রকাশ করেন ফরাসি প্রাচ্যবিদ ফাদার Eusèbe Renaudot তাঁর History of the Patriarchs of Alexandria বইটিতে। উমর(রাঃ) লাইব্রেরি ধংসের এই গল্পের উপর যিনি সন্দেহ আরোপ করেন সর্বপ্রথম, তিনি একজন প্রাচ্যবিদ। ( প্রাচ্যবিদদের অনেকেই সৎ ইতিহাসের চর্চা করেছেন, হরেদরে সবাইরে নেতিকরণ করা যাবেনা ) ।

বার্নারড লুইস, যিনি ইসলামের এক শক্ত সমালোচক,তাঁর “The vanished library ” লেখাটিতে সংক্ষেপে এই মিথের উৎপত্তির ইতিহাস পাবেন। এবং Bernard Lewis এই মিথ ভাঙার কৃতিত্ব দেন পশ্চিমা একাডেমিয়াকে। এমনকি বার্ট্রান্ড রাসেলও এই ঘটনাকে গল্পের অধিক মর্যাদা দিতে রাজী না, তিনি তো বলেনঃ প্রত্যেক খ্রীস্টানকেই এক সময় উমরের লাইব্রেরি ধবংসের এই কাহিনী শেখানো প্রয়োজন মনে করা হতো! ডজন খানেক পশ্চিমা অমুসলিম স্কলার ও ঐতিহাসিক আছে যারা উমর(রাঃ) এর লাইব্রেরি ধবংসের এই গল্পকে খন্ডন করেছেন, এবং বানোয়াট ও ভিত্তিহীন প্রমাণ করেছেন।

মুসলিম স্কলারদের মধ্যে আব্দুর রহিম মুহাম্মাদ আব্দুল হামীদ এই কাহিনীর উৎস, সনদবিহীনতা ও ভ্রান্তি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণাভিত্তিক লেখা লিখেছেন। আলী সাল্লাবিও তাঁকে এ বিষয়ে উদ্ধৃত করেন আমর ইবনুল আস (রাঃ) নিয়ে তাঁর বইয়ে।

মুস্লিম জাতিসত্তা,মুসলিম শাসক,মুসলিম ইতিহাস ও ইসলাম বিষয়ে মিথ্যারোপ, মিথ তৈরি এবং ঐতিহাসিকভাবে বাতিল, অপ্রতিষ্ঠিত ও ভিত্তিহীন কথাবার্তার মাধ্যমে নিজ মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার ধান্দা চলে নিয়মিতই । আর, এদেশে ইসলাম বিদ্বেষ, প্রগতিশীলতার ভড়ং ও নানা মতাদর্শিক স্বার্থের চাপেতামে লোকজন এইসব অপ্রতিষ্ঠিত কথাবার্তা বিশ্বাস করে, লেখে ও ছড়ায়!!

Advertisements