শেয়ার কারসাজির তদন্ত করতে গিয়ে আবারও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম এসেছে। আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির তদন্ত করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাকিব গংকে জরিমানা করেছে। সাকিব গংসহ আরও ৭ ব্যক্তিকে মোট ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিএসইসি মো. আবুল খায়ের ও তার সহযোগী সাকিব আল হাসান গংকে দেড় কোটি টাকা জরিমানা করেছে।
মো. সাইফ উলস্নাহকে জাহিন স্পিনিংয়ের শেয়ার কারসাজির জন্য ২৫ লাখ টাকা, মো. জসিম উদ্দিনকে ইস্টার্ন ইন্সু্যরেন্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির জন্য ১ কোটি টাকা, শারমিন আক্তার লাভলীকে শ্যামপুর সুগারের শেয়ার কারসাজির জন্য ২ লাখ টাকা, মো. নাসির উদ্দিনকে শ্যামপুর সুগারের শেয়ারের কারসাজির জন্য ৫ লাখ টাকা, এস এম মোতাহারুল জননকে ন্যাশনাল ফিড মিলসের শেয়ার কারসাজির জন্য ১৭ লাখ টাকা, মো. এ জি মাহমুদকে ন্যাশনাল ফিড মিলসের শেয়ার কারসাজির জন্য ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিএসইসি গত অক্টোবরের বিভিন্ন সময়ে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে আরও চারটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম এসেছে। একের পর এক কারসাজি চক্রের সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিবের নাম এসেছে।
এই চক্রের মূল হোতা আবুল খায়ের। শেয়ারবাজারে যিনি হিরু নামে পরিচিত। শেয়ার কারসাজির যে কয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিবের নাম জড়িয়েছে, তার প্রতিটিতেই রয়েছে আবুল খায়ের হিরু, হিরুর বাবা, বোন ও স্ত্রীর নাম।
র্সবশেষ আইপিডিসি ফাইন্যান্সের কারসাজি নিয়ে বিএসইসির করা তদন্তে সাকিবের নাম উঠে এসেছে। কারসাজির মাধ্যমে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বাড়ানোর অপরাধে আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।
বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার দাম বাড়িয়েছেন। এতে চলতি বছরের ২৯ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার দাম বেড়েছে ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ সময়ে ৩৪ টাকা থেকে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে।
হিরু ও তার সহযোগীরা এ সময়ের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার বিক্রি করে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭ টাকা মুনাফা করেছেন। এছাড়া তাদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৬ টাকা মুনাফা রয়েছে। নিজেদের মধ্যে লেনদেন করে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ানোকে ‘সিরিয়াল ট্রেডিং’ বা ‘সিরিজ লেনদেন’ হিসেবে আখ্যা হয়। এভাবে শেয়ারের মূল্য প্রভাবিত করা আইনত নিষিদ্ধ।
তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শেয়ার বিক্রির তালিকায় রয়েছেন সাকিব। এই ক্রিকেটার ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ১২ কোটি ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৪ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেছেন।
এর মধ্যে ১১ লাখ শেয়ার কিনে সাকিব ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৩টি শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। অন্যদিকে এ সময়ে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই আবুল খায়ের হিরু। হিরু ১ কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ২৯২টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ১ কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৮৪টি। তার লেনদেনের পরিমাণ ১২ কোটি ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৪ টাকা।
আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার লেনদেন করার প্রমাণ পাওয়ায় বিএসইসি আবুল খায়ের ও সহযোগীদের জরিমানা করেছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সাকিব আল হাসান ও মো. আবুল খায়ের বর্তমানে ব্যবসায়িক পার্টনার। এ বিষয়ে মো. আবুল খায়ের যায়যায়দিনকে বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে হলে অনেক সময় বড় ইনভেস্টর প্রয়োজন হয়। এজন্য সাকিব আল হাসানকে নেওয়া হয়েছে। জরিমানা বড় কোনো ইসু্য নয়।’
সূত্রঃ যায়যায়দিন