সহশিক্ষা ব্যবস্থা মুসলিম মেয়েদের ধর্মান্তরের পথে নিয়ে যাচ্ছে
Advertisements

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও দেওবন্দ দারুল উলূমের প্রধান মাওলানা আরশাদ মাদানী বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব সহশিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করা খুবই জরুরি।

আজ (মঙ্গলবার) গণমাধ্যমে মাওলানা মাদানীর ওই মন্তব্য প্রাকাশ্যে এসেছে। জমিয়তের জাতীয় নির্বাহী বৈঠকে তিনি বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, তারা নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে নন, সহ-শিক্ষার বিরুদ্ধে। তারা মনে করেন, সহশিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মুসলিম মেয়েরা তাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হবে। এটা মুসলিম মেয়েদের ধর্মান্তরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

মাওলানা মাদানী বলেন, ‘সহশিক্ষার কারণে ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়টি শক্তি পাচ্ছে। এ কারণে আমরা অতীতে এর বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু, সে সময় আমাদের বক্তব্যকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছিল যে, জমিয়ত মেয়েদের শিক্ষার বিরুদ্ধে। কিন্তু, আমরা মেয়েদের শিক্ষার বিরুদ্ধে নই বরং সহশিক্ষার বিরুদ্ধে।’

এ সম্পর্কে আজ (মঙ্গলবার) জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সমাজের রীতিনীতি সংরক্ষণ করব, মুসলিম সমাজ সেটা ভাববে, এটা তো অবাস্তব কিছু নয়। বেআইনিও কিছু নয়, অসাংবিধানিকও নয়। তার মানে এই নয় যে মেয়েদের আমরা শিক্ষায় পিছিয়ে রাখতে চাই। তিনি সমস্যার কথাও বলেছেন আবার সমাধানের কথাও বলেছেন। নারীদের মান-সম্মান, তাদের সম্ভ্রম রক্ষা হওয়ার জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার সেটা আমাদের দেশে হয়ে ওঠে নি, করতে পারে নি, অথবা তাদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারে নি।’ এটা নিয়ে এক ভাবনার গণমাধ্যম হৈ-চৈ করবে, কিন্তু এই হৈ-চৈয়ের কোনো মানে নেই। কারণ নারী নিগ্রহ, নারী ধর্ষণ যে গতিতে বাড়ছে তা আটকানোর পথ কেউ বের করতে পারে নি বলেও মন্তব্য করেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম।

জমিয়তের কার্যনির্বাহী সভায় সহশিক্ষা প্রসঙ্গে মাওলানা আরশাদ মাদানী বলেন, এটা বন্ধে কিছু না করা হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রচার করা হচ্ছে। মাওলানা মাদানী আরও বলেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করার এই খেলা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। তরুণদের আসল সমস্যা থেকে বেশিদিন বিভ্রান্ত করা যাবে না। তাই সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন এই যুবকদের রাস্তায় প্রতিবাদ করতে দেখা যাবে।

তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের কল্যাণ ও শিক্ষার উন্নয়নের জন্য এখন যা কিছু করার, তা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে একদল মুসলিম ইতিহাসের অত্যন্ত সংকটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষার উন্নয়নের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নীরব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কারণ ইতিহাস সাক্ষী যে প্রতিটি যুগে শিক্ষাই উন্নয়নের চাবিকাঠি ছিল।’

মাওলানা মাদানী বলেন, আমাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি ষড়যন্ত্রের যোগ্য জবাব দেবো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় রাজনৈতিক ও শিক্ষাগতভাবে মুসলমানদের প্রান্তিক করার ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে মুসলিম মেয়েদের ধর্ম-ত্যাগের প্রলোভন থেকে বাঁচাতে মুসলিমদের স্কুল-কলেজ খোলার আহবান জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রধান মাওলানা আরশাদ মাদানী।

Advertisements