খেলাপি ঋণ
Advertisements

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে,  সম্পদের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের। এর মধ্যে পাঁচটি সরকারি ও পাঁটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংক খাতে আলোচ্য ১০ ব্যাংকের সম্পদ রয়েছে সম্পদের ৪৪ শতাংশ। কিন্তু খেলাপি ঋণ রয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৩ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে ঝুঁকি।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগই পরিশোধ করছেন না। নানা প্রভাব খাটিয়ে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নেন। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ঋণের বড় অংশ ফেরত পাওয়া যেত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ঋণ পরিশোধে অনীহা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানায় যারা আছেন তারা নামে বেনামে সাধারণ আমানতকারীদের অর্থঋণ আকারে বের করে নিচ্ছেন। কিন্তু পরিশোধ করছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে হিসাবের মারপ্যাঁচে ওই ঋণখেলাপি আকারেও দেখানো হচ্ছে না। ফলে ব্যাংক সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে।

আবার নানা পরিস্থিতির কারণে ওই সব পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, কোনো কথাও বলতে পারছেন না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আবার অন্য বড় উদ্যোক্তারাও ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এর ফলে ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অপর দিকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ করা হয়। অতীতেও এ ধরনের অনেক ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। আবার এসব ঋণ পরিশোধ না করারও প্রবণতাও বেশি। ফলে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে’ উল্লেখ করা হয়েছে, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ ব্যাংকের দখলে রয়েছে ৬০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা; যা ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু আলোচ্য ব্যাংকগুলোর সম্পদ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের ৪৪ শতাংশ রয়েছে আলোচ্য ১০ ব্যাংকের।

ব্যাংকাররা জানান, ২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয় বড় ঋণখেলাপিদের। মাত্র ২ ও ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ও এক হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণখেলাপিদের ঋণ নবায়ন করা হয়। এ ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ নিয়ে মাত্র ১৪টি শিল্প গ্রুপ ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করে নেন। ঋণখেলাপিদের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে আবারো ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেন। কিন্তু আগের ঋণের বেশির ভাগ অংশ পরিশোধ না করায় ওই ঋণ এখন আবারো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

এ দিকে গত বছর মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ব্যাংকিং খাতের বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। এর ফলে রাতারাতি কমে যায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার। এ দিকে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে গত মার্চ থেকে। কিন্তু গত জানুয়ারি শেষে ঋণ পরিশোধের ওপর শিথিলতা আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বলা হয় ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি করা যাবে না। প্রথমে জুন, পরে সেপ্টেম্বর সর্বশেষ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুযোগ বাড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে বলা চলে চলতি বছর বড় অঙ্কের ঋণ আদায় ছাড়াই পার করছে ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকাররা জানান, এতে ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যাংকই কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ আদায় করতে পারছে না। কিন্তু আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই সব ঋণ খেলাপিও করা যাচ্ছে না।

সূত্রঃ নয়া দিগন্ত

Advertisements