শ্রীপুরে সৎ মায়ের নির্যাতনের শিকার সেই শিশু মারা গেছে
Advertisements

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদের চালা গ্রামে সৎ মায়ের যৌন নিপীড়নের শিকার আড়াই বছরের শিশু মরিয়ম এক মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে মারা গেছেন।শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে আছেন তার সৎমা আলিফা আক্তার (৩০)।

শিশুটির চাচা তারেক মিয়া বাবু তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি হাসপাতালে শিশুটির তদারকিতে ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘নির্যাতনে পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গে সংক্রমণ তৈরি হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো শরীরে। চিকিৎসকরা শিশুটির অস্ত্রোপচারও করেছিলেন।’

আড়াই বছর বয়সী শিশু মরিয়ম আক্তার ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের মোস্তফা কামালের সন্তান। মোস্তফা কামাল শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা গ্রামে ১৪ শতাংশ জমি কিনে বহুতল ভবন গড়ে তুলেন। সে দীর্ঘদিন ধরেই দুবাই প্রবাসী। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে জন্ম হয় শিশু মরিয়মের। পরে দুবাই প্রবাসী আলিফা আক্তার রিপার সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে শিশুটির চার মাস বয়সেই তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়।

এ সময় আলিফা আক্তারকে বিয়ে করে দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন তিনি। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেই থাকত শিশু মরিয়ম। কয়েক মাস পূর্বে তিনি দুবাই চলে যান। পরে নিজ নামে এ বাড়িটি লিখে নিতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শিশুটিকে যৌন নিপীড়ন শুরু করেন ওই সৎমা। তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগ করে শিশুটির পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত করেন। পরে অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।

এ ঘটনায় শিশুটির দাদা বাদী হয়ে তার সৎমায়ের বিরুদ্ধে গত ১২ আগস্ট শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পরে তা মামলা রুজু হয়। গত ১৫ আগস্ট অভিযুক্ত সৎমা আলিফা আক্তার রিপাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে। অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের রজব আলী বিশ্বাসের মেয়ে।

শিশুটির দাদা আফাজ উদ্দিন বলেন, তার দ্বিতীয় পুত্রবধূ উগ্র প্রকৃতির। সে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অঘটনের চেষ্টা করেছে। তার ছেলে প্রবাসে চলে যাওয়ায় শিশু নাতনিকে নিয়ে সে এ বাসাতেই থাকত। শিশুটি তাদের কাছে যেত না। এ বাসাটি লিখে নিতে সে নানা ধরনের ফন্দি তৈরি করেছিল। গত ১১ আগস্ট তার নাতনিতে দেখতে এসে তারা দেখতে পান সে খুব অসুস্থ। পরে দেখেন তার পায়ুপথে ও যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত। এ সময় তার পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসা করলে সে একেক সময় একেক কথা বলতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে কয়েকবার তার নাতিকে তার সৎমা নানাভাবে নির্যাতন করেছে। তারা বিভিন্নভাবে সতর্ক করছিল অভিযুক্তকে। এরপরও তাদের কথা না শুনে শিশুকে এভাবে নির্যাতন করে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার সৎমায়ের।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার এসআই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ইতোমধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুটির মৃত্যুর খবর তিনি পেয়েছেন। এখন নিহতের ময়নাতদন্ত করা হবে। সে অনুযায়ী দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

Advertisements