গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা মিজান সিটিতে উঠতি বয়সী নারীদের নিয়ে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কমবয়সী নারীদের এনে দেহব্যবসা চালানো হচ্ছে।
শনিবার (২২ অক্টোবর) রাত ৮ টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা সংলগ্ন মিজান সিটির পঞ্চম তলায় দেহ ব্যবসার তথ্য সংগ্রহে যান কয়েকজন সংবাদকর্মী।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইজন যৌনকর্মী ও একজন খদ্দের পান তারা, এ সময় দুইজনের মধ্যে একজনের নাম বলেন পাপিয়া। এখানে আরও কেউ আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে পাপিয়া বলেন, তার স্বামীসহ তিনি এই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। সাথে থাকা অন্য মহিলাটি তার বোন এখানে বেড়াতে এসেছেন, বর্তমানে তার স্বামী বাসায় নেই। বাসার নিচে গেছে একটি কাজের জন্য তার মোবাইল ফোন বন্ধ। এসময় বাসার ফ্লোরে যৌন উত্তেজক ঔষধের মোড়ক ও বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবনের সরঞ্জাম পরে থাকতে দেখা যায়।
ওই সময় মিজান সিটির মালিক মিজান মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পাপিয়ার রুমে ঢুকে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে দেখে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন আপনারা কারা? কিসের জন্য এই বাসায় ঢুকেছেন?
সংবাদকর্মী পরিচয় দিলে মীজান বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তখন, ভেতরে থাকা একজন খদ্দের কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সে বাসায় কিভাবে আসলো? তার সাথে কথা বলে জানতে পারেন, এই খদ্দেরকে আরেক দালাল তাকে বাসায় রেখে গেছেন এবং তার কাছ থেকে ৭০০ টাকা চুক্তি করে তাকে এখানে রেখে গেছেন।
পরে বিষয়টি ভবন মালিক তার ভাড়াটিয়া পাপিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, কিন্তু পাপিয়া বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং ভবন মালিক তার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন স্বামী বাসায় নেই একটি কাজের জন্য বাসার বাহিরে আছেন, মোবাইল ফোন বন্ধ।
এ বিষয়ে ঘরের ভেতরে থাকা (অজ্ঞাত) খদ্দেরকে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, আমার সাথে আরও দুইজন ছিল ঘরের ভেতরেই আছে। তাদের জিজ্ঞেস করলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আমি নির্দোষ আমাকে ছেড়ে দেন। এ কথা শোনার পর ভবনের মালিক ঘরের আনাচে-কানাচে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে, ফ্ল্যাটের বারান্দার দিকে এগোতেই একটি দরজা বাহির থেকে লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। ভবন মালিক অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর বারান্দার দরজা খুলে ওই সময় বারান্দার থেকে আরো দুইজন লোক বেরিয়ে আসে। দুজনের মধ্যে একজন পাপিয়ার স্বামী দাবি করেন।
বিষয়টি ভবন মালিক দেখার পর কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। উল্টো সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরজ বিষয়গুলোর ভিডিও ধারণ করতে থাকলে ভবন মালিক মিজান গণমাধ্যম কর্মীর হাত থেকে একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে।
তখন গণমাধ্যমকর্মী যারা ছিলেন, তারা হলেন, বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি রমজান আলী রুবেল, প্রথম বেলার প্রতিনিধি জাকির মোড়ল, দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এনামুল হক। তারা সবাই এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলার ঘটনার কয়েকদিন পর রমজান আলী রুবেল বাদী হয়ে মীজান সিটির মালিক মীজানসহ দুইজনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত খন্দকার মীজানুর রহমান মীজান বলেন, আমি প্রথমেই রমজান আলী রুবেলসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। তারা বিনা অনমতিতে তখন পাপিয়া রুমে ঢুকে ভিডিও করে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।
এ বিষয়ে তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন মুরাদ বলেন, এক সাংবাদিকের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি, অসামাজিক কার্যকলাপে কেউ জড়িত থাকলে প্রচলিত আইনে বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, একই বিষয়ে দুইটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।