মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একজন ব্যক্তিও মাস্ক ছাড়া শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে পারবেন না। দল পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে একসঙ্গে দুজনের বেশি এখানে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনও হুমকি নেই। তারপরও জঙ্গি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হবে। একই সাথে এদিন শহীদ মিনার কেন্দ্রিক তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
কমিশনার বলেন, এ বছর ভিন্ন একটি পরিবেশে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের টিকা অনেকেই নিয়েছেন। এখনও নিচ্ছেন। টিকা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনার এলাকায় যান চলাচল বরাবরের মতো এবারও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি র্যা ব সদস্যরাও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকবেন। সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হবে শহীদ মিনার ও আশপাশ এলাকা। বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াটসহ অন্যান্য ইউনিটগুলো সতর্ক অবস্থায় থাকবে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ট্রাফিক ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচল ও সব ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য বলা হয়েছে।
পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে হবে। শহীদ মিনার দিয়ে বের হওয়ার ক্ষেত্রে দোয়েল চত্বরের দিকের রাস্তা অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। অন্য রাস্তা দিয়ে বের হওয়া যাবে না। এছাড়া বকশীবাজার-জাগন্নাথ হল ক্রসিং সড়ক, চাঁনখারপুল-রোমানা চত্বর ক্রসিং সড়ক, টিএসসি-শিববাড়ী মোড় ও ফুলার রোড বন্ধ থাকবে।
ডাইভারশন ব্যবস্থা থাকবে যেসব এলাকা:
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত রাস্তায় আলপনা অঙ্কনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আশপাশের রাস্তা বন্ধ থাকবে। এসময় শিববাড়ী, জগন্নাথ হল ও রোমানা চত্বর ক্রসিংগুলোতে গাড়ি ডাইভারশন দেওয়া হবে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত নীলক্ষেত, পলাশী মোড়, ফুলার রোড, বকশীবাজার, চাঁনখারপুর, শহিদুল্লাহ হল, দোয়েল চত্বর, জিমনেশিয়াম, রোমানা চত্বর, হাইকোর্ট, টিএসসি, শাহবাগ ইন্টারসেকশনসমূহে রোড ব্লক দিয়ে গাড়ি ডাইভারশন দেওয়া হবে।
রোববার ভোর ৫টায় সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট ক্রসিং, কাঁটাবন ক্রসিং থেকে নীলক্ষেত ক্রসিং এবং ফুলবাড়িয়া ক্রসিং থেকে চাঁনখারপুল ক্রসিং পর্যন্ত প্রভাতফেরি উপলক্ষে সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
গাড়ি পার্কিং:
একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়াম মাঠে ভিআইপি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। নাগরিকবৃন্দ নীলক্ষেত-পলাশী, পলাশী-ঢাকেশ্বরী সড়কে তাদের গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানিয়েছেন, যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে দিবসটি পালনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী ও সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বৃহস্পতিবার বিকেলে অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সহযোগিতা চান।
এসময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, অমর একুশে পালন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ্, যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পলাশী মোড় থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তায় তিন ফুট পর পর চিহ্ন থাকবে। এই চিহ্ন অনুসরণ করে সবাই পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
তিনি জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে সীমিত পরিসরে একটি প্রভাতফেরি বের করা হবে। উপাচার্য প্রভাতফেরিতে নেতৃত্ব দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে অংশ নেবেন। প্রভাতফেরি সহকারে তারা আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।