র‍্যাব বিলুপ্তি
Advertisements

বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কঠোর আহ্বান জানিয়েছে। তাদের বার্ষিক রিপোর্টে, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, বিশেষত র‍্যাবের বিলুপ্তি নিশ্চিত করার জন্য। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের অবস্থা যদি অপরিবর্তিত থাকে, তবে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং পূর্ববর্তী সরকারের ভুলগুলো পুনরায় ঘটতে পারে।

রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করেছে এবং তা এখনো অনেকটাই চলমান। এই বাহিনী, যেগুলোর মধ্যে র‍্যাব সবচেয়ে আলোচিত, সাধারণ মানুষকে অহেতুক হয়রানি এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর এক হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত র‍্যাব, যা ২০০৪ সালে গঠিত হয়, বিভিন্ন সরকার দ্বারা দমনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, এটি এমন এক বাহিনী, যা “দায়মুক্তি” পেয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

র‍্যাবের এক কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান, বাহিনীর বিশেষ একটি দল গুম, হত্যা এবং ক্রসফায়ারের মত মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজগুলো পরিচালনা করে থাকে। তিনি ২০১৬ সালে যোগ দেওয়ার পর অবাক হয়ে দেখেছিলেন যে, একজন প্রশিক্ষক নিজে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি ১৬৯টি ক্রসফায়ারে অংশ নিয়েছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড র‍্যাবের মধ্যে এতটাই গভীরভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

এখন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের কাছে র‍্যাবের বিলুপ্তি এবং এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এমনকি, গুম-সংক্রান্ত একটি কমিশন ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে র‍্যাবকে বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। ২০২১ সালে মার্কিন সরকারও র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যেখানে র‍্যাবের সাতজন কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দাতা দেশগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে যে, র‍্যাব বিলুপ্তি কার্যকর হবে, তবে তার সাথে যুক্ত সমস্ত কর্মকর্তাকে অন্য বাহিনীতে পদায়ন না করার এবং তাদের মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি সব কিছুতেই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়া উচিত।” তিনি আরো বলেন, “যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, র‍্যাবকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।” এর মাধ্যমে তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দেন যে, র‍্যাবের সংস্কার সম্ভব নয়, বরং এটি বিলুপ্তি করা উচিত।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাঠামোগত সংস্কার না করা যায়, তবে এতে সরকারের ইতিবাচক অর্জনগুলো হুমকির মুখে পড়বে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন আরও বাড়তে পারে। সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে র‍্যাব এবং অন্যান্য বাহিনী পরবর্তী সরকারের দমন–পীড়নের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরামর্শ ও তদারকি অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে একটি সুরক্ষিত, স্বাধীন ও মানবাধিকার সম্মত রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে পারে।

Advertisements