রাজাপাকসেরা চির দিনের জন্য শেষ!
Advertisements

শ্রীলঙ্কার প্রবল প্রতাপশালী রাজাপাকসে পরিবারের সময় চির দিনের জন্য শেষ। তারা আর শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করলেন কি করলেন না, তা আর প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়। তিনি আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন না। তিনি এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছেন। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবন থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার উপদেষ্টা মানিককালিঙ্গম।

মানিকালিঙ্গম ১৯৯৪-২০০৫ পর্যন্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট কুমারাতুঙ্গার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে বিদায় নিতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই বিদায় নিয়েছেন। তিনি কী বললেন, তা আর কোনো বিষয়ই নয়। তিনি এখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনছি যে তিনি কলম্বোর উপকণ্ঠে কোনো এক সেনা ক্যাম্পে লুকিয়ে আছেন। আমি মনে করি, এটা একটা টার্নিং পয়েন্ট। ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, রাজাপাকসেদের ‘বিদায় হয়েছে স্থায়ীভাবে’। তিনি আশা করেন যে ‘দেশ পরিচালনাকারী দুর্নীতিবাজ শ্রেণিটিও’ শেষ হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, দুই মাস আগে বিক্ষোভের মুখে গোতাবায়ার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসেও পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার বাসাতেও বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েছিল। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাকেও উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য এই পরিবারটিকে দায়ী করা হচ্ছে। মাত্র কিছু দিন আগেও অপ্রতিরোধ্য মনে করা হতো রাজাপাকসেদের। গণআন্দোলনের মুখে তারাই এখন অসহায়ভাবে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিকে শ্রীলঙ্কায় অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন পার্লামেন্টের স্পিকার। আর স্পিকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় এক সভায় এমন প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন, আর সংবিধান অনুযায়ী তার স্থলাভিষিক্ত হবেন স্পিকার ইয়াপা আবেবর্ধন। তারপর এক সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। একই সপ্তাহে সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠিত হবে।

শ্রীলঙ্কায় নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রচণ্ড টান পড়ায় জ্বালানি তেল, খাদ্য এবং ওষুধ পর্যন্ত আমদানি করতে পারছে না সরকার।

এরই প্রেক্ষাপটে, সরকারের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগে গত কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কার সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভ করছে।

কিন্তু শনিবার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয় যখন সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ কলম্বোতে এসে শহরের যে এলাকায় সরকারি অফিস-আদালত এবং মন্ত্রী কর্মকর্তাদের বাসভবন রয়েছে সেখানে ঢুকে পড়ে।

এক পর্যায়ে, ‘গোটা গো হোম’ (গোটা বাড়িতে চলে যাও) স্লোগান দিতে দিতে অনেক মানুষ জোর করে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়ে।

প্রেসিডেন্টের ঘর-ছাদ-সুইমিং পুল মানুষের দখলে
প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি, তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ আহত ৩৩ জনকে কলম্বোর ন্যাশনাল হসপিটাল অব শ্রীলঙ্কায় নেয়া হয়েছে বলে বিবিসি সিনহলা সার্ভিসকে জানিয়েছেন হাসপাতালের একজন মুখপাত্র।

ফেসবুকে বিভিন্ন লাইভস্ট্রিমে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট বাসভবনের ভেতর বিভিন্ন কক্ষে এবং করিডোরে শত শত মানুষ। বাইরের উদ্যানে এবং ভবনের ছাদেও বহু বিক্ষোভকারী অবস্থান করছে। তাদের অনেকের হাতে শ্রীলঙ্কার পতাকা।

একটি ফুটেজে দেখা গেছে বেশ কজন বিক্ষোভকারী ভবনের চত্বরের সুইমিং পুলে নেমে সাঁতার কাটছে, ঝাপাঝাপি করছে।

জানা গেছে, কিছুটা দূরে প্রেসিডেন্টের অফিস ভবনের মধ্যেও একদল বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়ে।

শনিবার কলম্বোতে নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ঠেকাতে শুক্রবার রাতেই সরকার রাজধানীতে কারফিউ জারি করে। কিন্তু বিরোধী দল এবং নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে কারফিউ তুলে নেয়া হয়।

সূত্র : বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস ও অন্যান্য

Advertisements