রশ্মিদানব ঠেকাবে বজ্রপাত
Advertisements

বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতি বছর। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী বজ্রপাত-সংক্রান্ত প্রায় আড়াই লাখ ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। একজন মানুষের জীবদ্দশায় কমপক্ষে ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার বজ্রপাতের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে এ সংখ্যা আরও বেশি। আর এই ভয়ংকর পরিসংখ্যানকে সামনে রেখেই সুখবর দিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় কুড়ি বছরের প্রচেষ্টায় এবার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এক রশ্মি-যাকে তারা বলছেন ‘রশ্মিদানব’। জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ প্রযুক্তি আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন সম্প্রতি। সিএনএন। বিজ্ঞানীদের এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন সুইস পদার্থবিজ্ঞানী জিন পিয়েরে উলফ। তিনি বলেন, ‘লেজার খুব সংকীর্ণ, উচ্চশক্তির আলোর বিম তৈরি করে। এটির প্রয়োগে হীরা কাটা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে আসছিল। এবার এটি আমাদের বজ্রপাত থেকে রক্ষা করবে।’

তিনি একটি ইইউ-অর্থায়িত কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যার মধ্যে রয়েছে প্যারিস এবং লুসানে বিশ্ববিদ্যালয়, সেসঙ্গে রয়েছে রকেট প্রস্তুতকারক আরিয়ান গ্রুপ এবং লেজার প্রস্তুতকারক জার্মান হাইটেক কোম্পানি ট্রাম্প। মহামারিজনিত কারণে এক বছর বিলম্বের পর গত জুলাইয়ে লেজারটি সুইস আল্পসের একটি পর্বতের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যার উচ্চতা ৮ হাজার ২০০ ফুট। উলফ বলেন, ‘এটি ইউরোপের অন্যতম জায়গা যেখানে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। এখানে একটি রেডিও ট্রান্সমিশন টাওয়ার রয়েছে যেখানে বছরে ১০০ থেকে ৪০০ বার আঘাত হানে বজ্র। তাই আমাদের ধারণা, প্রমাণ পরীক্ষা করার জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা।’

বজ্রপাত বলতে আকাশে আলোর ঝলকানিকে বোঝায়। এ সময়ে ওই এলাকার বাতাসের প্রসারণ এবং সংকোচনের ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। এ ধরনের বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন দুটি মেঘের মধ্যে অথবা একটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও হতে পারে। বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশে নিচের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে, নিচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়। এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড বলে। অন্যান্য মেঘের মতো এ মেঘেও ছোট ছোট পানির কণা থাকে। আর উপরে উঠতে উঠতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে জলের পরিমাণ যখন ৫ মিমি. এর বেশি হয়, তখন জলের অণুগুলো আর পারস্পারিক বন্ধন ধরে রাখতে পারে না। তখন এরা আলাদা হয়ে যায়। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের সৃষ্টি হয়। আর এ আধানের মান নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই উপর থেকে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। এ সময় আমরা আলোর ঝলকানি বা বজ্রপাত দেখতে পাই।

লেজার একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা সরাসরি তাদের পরমাণু থেকে ইলেকট্রন ছিঁড়ে ফেলে, বিদ্যুজ্রগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিপরীত চার্জ স্থাপন করে। উলফ বলেন, ‘ধারণা হচ্ছে আমাদের উদ্ভাবিত লাইটনিং রডের মাধ্যমে মেঘকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

তিনি আশা করেন, লেজারটি অবশ্য মাটিতে একটি বৃহত্তর এলাকা রক্ষা করতে সাহায্য করবে, যদিও তিনি এখনো বলতে পারেন না কতটুকু এলাকা।

উলফ জানান, ‘মূলত আমরা বজ্রঝড় আনলোড করব, তার ভোল্টেজ্রকমাব এবং তার পরে আশেপাশের এলাকায় আরও বজ্রপাত প্রতিরোধ করব।’ তিনি জানান, এ প্রযুক্তির সবচেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবহারিক প্রয়োগ হবে রকেট রক্ষা করা।

সূত্রঃ যুগান্তর

Advertisements