প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
Advertisements

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে মানুষের আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যাওয়ার পাশপাশি সংবিধান এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থেকে যেকোনো হুমকি মোকাবেলার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর আটি ইউনিট/সংস্থার পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সেভাবেই মানুষের আস্থা অর্জন করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশ ও জাতির প্রতি আপনাদের দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে আপনারা আপনাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন সেটাই আমরা চাই।”

সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “এই পেশাদারিত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। পবিত্র সংবিধান এবং দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবেলার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

“আমরা কারও সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা সকলের সাথে বন্ধুত্ব চাই। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে আমরা বাংলাদেশকে আর্থ সামাজিকভাবে উন্নত করতে চাই। কিন্তু যদি কখনও আমরা আক্রান্ত হই সেটা মোকাবেলা করবার মতো শক্তি যেন আমরা অর্জন করতে পারি সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং সেভাবে আমরা তৈরি থাকতে চাই।”
সরকার প্রধান বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নের কাজে, যেকোনো দুর্যোগে, দুর্বিপাকে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বিশেষ করে এই করোনাকালীন সময়েও যেভাবে তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সশস্ত্রবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা করে বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জল করেছেন।
“সেই সাথে সাথে জাতিসংঘ কর্তৃক শান্তি রক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্ত্রবাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তার জন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
প্রতিটি ক্ষেত্রে সশস্ত্রবাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি সীমিত সম্পদ দিয়েও সব ধরনের সহযোগিতা করতে। যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তারা চেয়েছে সশস্ত্রবাহিনীর সার্বিক উন্নতি হোক, প্রত্যেক সেনা সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনমান উন্নত হোক।”

সেনা সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা সেনাবাহিনীর ভেতরে মূল চালিকাশক্তিগুলো অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মীতা, ভাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনাদের স্বীয় কর্তব্য যথাযথভাবে নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাবেন সেটাই আমি আশা করি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল একটি শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধু তার দূরদৃষ্টি চিন্তার মাধ্যমে প্রণয়ন করেছিলেন ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতি। সেই নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুইটি পদাতিক ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন ছাড়াও ১০টি ব্যাটালিয়ন, এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি, এনসিও’স একাডেমি ও বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠা করে।”
সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী ।
“আমাদের সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করি। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেছি। মিঠামইন এলাকায় একটি সেনানিবাস স্থাপনের কাজ চলছে। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি আজ বিশ্বে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তিন বাহিনীর প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য আন্তর্জাতিক মানের ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকের বুলেটের প্রাণ হারানো বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার ছোট ১০ বছরের ভাইটি, যার জীবনের স্বপ্ন ছিল বড় হলে সেও একজন সেনাবাহিনীর অফিসার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হতে পারেনি।
“জাতির পিতাকে হত্যার পর যে আদর্শ নিয়ে, যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, তা সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ হয়ে যায়। যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে, আমাদের মা-বোনদের হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে সেইসব দোসর, তারাই বরং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা জাতির পিতা চেয়েছিলেন, তাকে বাধাগ্রস্ত করে।”

জাতির পিতাকে হত্যার পর সশস্ত্রবাহিনীতে ১৯টা ক্যু হয়েছে উল্লেখ করে ১৯৭৫ সালের পর ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি রাতে কারফিউ থাকত বলে ওই সময়ের অবস্থার কথা জানান শেখ হাসিনা।
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না,ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে সেজন্য জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারাও আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা, যেখানেই যান আপনারা সামাজিক কাজ করেন, মানুষকে সাহায্য করেন, মানুষের পাশে দাঁড়ান।”

অনুষ্ঠানে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে অবস্থিত শেখ হাসিনা সেনানিবাস প্রান্তে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমদসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Advertisements