ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ
Advertisements

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ’ বলে কিছু লোক মিথ্যাচার করছে কিন্তু সঠিক ‘ডকুমেন্টস ও লিখিত বইপুস্তক না থাকার কারণে এই মিথ্যাচারের জবাব দিতে পারি না। বিশ্ববাসীরাও জানতে পারে না সঠিক ঘটনাটা কী?

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গবেষণা গ্রন্থ ‘নৌ যুদ্ধ একাত্তর’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য কিছু সংখ্যক লোক মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চেষ্টা করেছে। ইসলামপন্থী দেশগুলোর মগজ এমনভাবে ধোলাই করেছে, আমরা কিছুই করিনি, ভারত এসে পাকিস্তানকে হারিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। এই মিথ্যাচারের লিখিত কোনো জবাব দিতে পারি না।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সেই ডকুমেন্টস না থাকার কারণে, লিখিত বইপুস্তক না থাকার কারণে বিশ্ববাসী জানতে পারে না ঘটনাটা কী? এখনও তারা বিশেষ করে মুসলমান দেশ…আমার তো তুর্কির এক মন্ত্রীর সঙ্গে আধঘণ্টা ধরে ঝগড়া হয়েছে। সে বলছে, তোমরা পাকিস্তান ভেঙে দিয়েছ, আমি আর কন্ট্রোল করতে পারিনি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দূতাবাসেও ঝগড়াঝাটি হয়েছে। ওদের এক কথা আমরা ইসলাম ধ্বংস করে দিয়েছি। এখন আবার সেই সুর গাইছে, যেটা ২৩ বছর শুনেছি।’

‘আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ নামে মুক্তিযুদ্ধের গল্পের রেকর্ডিং শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। এর মাধ্যমে একাত্তরের রণাঙ্গনে যারা যুদ্ধ করেছেন, কীভাবে সেই যুদ্ধে গেলেন, যুদ্ধে কী কী করেছেন, সহযোদ্ধাদের কী কী করতে দেখেছেন- সেসব তাদের কণ্ঠেই ধারণ করে রাখা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কর্মসূচি নিয়েছি বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা। জীবিত মুক্তিযোদ্ধার মৌখিক ভাষ্য আমরা ১৫ থেকে ২০ মিনিটে শুনতে চাই, সেটা আর্কাইভে রাখব। যতদিন এই পৃথিবী থাকে ততদিন যেন সংরক্ষিত হয়।’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আশা করি আমরা আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে রেকর্ড করা শুরু করব। প্রত্যেক ব্যক্তির (বীর মুক্তিযোদ্ধা) বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেকর্ড করা হবে এবং সেগুলো সারাজীবন সংরক্ষিত থাকবে। জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, কীভাবে যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধকালীন কী কী দেখেছেন সেসব বিষয় তাদের মুখ থেকে রেকর্ড করা হবে। ১৫-২০ মিনিট ভিডিও করে রাখব কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে এলেন, অভিজ্ঞতা কী। ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা সঠিক ইতিহাস লিখবে।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব ইতিহাস লেখা হয়েছে, লেখকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই অন্ধের হাতি দেখার মতো। পরিপূর্ণ কোনো চিত্র উঠে আসেনি। … যে যখন লিখেছি আমাদের দুর্ভাগ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকলের জন্য না, নিজেকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, আমি একাই যুদ্ধ করেছি, অন্যরা আমাকে সাহায্য করেছে, আমিই সব পরিকল্পনা করেছি, নেতৃত্ব দিয়েছি, সব আমার ব্রেন থেকে এসেছে, অন্যরা ফলো করেছে। নিজেকেই ফোকাস করেছে বেশি।’

তিনি বলেন, ‘সেগুলো পরিহার করে ইতিহাসের আলোকে যার যেটা অবদান সেটা আমরা কম্পাইল করে যেন একটা বই করতে পারে সে বিষয়ে আপনাদের (মুক্তিযোদ্ধা) সহযোগিতা চাই। আমরা যেন নিজের অংশটুকু ছোট ছোট করে লিখে রাখি, আমি কী দেখেছি, আমি কী জানি। ইতিহাস তো লিখতেই হবে। নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আলাদা আলাদা লেখা চাওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকেও লেখা নিয়ে কম্পাইল করে ছোট আকারে বই করা হবে, যাতে মানুষ পড়তে পারে।’

মন্ত্রী বলেন, নৌ যুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অপারেশন ছিল ১৯৭১ এর ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এতে আকাশবাণীর গানের সংকেতের মাধ্যমে বিভিন্ন বন্দরে একযোগে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৬টি জলযান মাইনের আঘাতে ডুবিয়ে দেয় বাংলার নৌ-কমান্ডোরা। এর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য এ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে।

‘নৌ যুদ্ধ একাত্তর’ গ্রন্থের লেখক মো. শাহজাহান কবির (বীর প্রতীক) বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নৌপথে নৌ-কমান্ডো বাহিনীর দুঃসাহসিক নৌ অপারেশনের বীরত্ব গাঁথা এবং একাত্তরের মধ্য অগাস্ট থেকে ডিসেম্বরের বিজয় পর্যন্ত অর্জন গ্রন্থটিতে বর্ণনা করা হয়েছে।’

গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রন্থাগার ছাড়াও বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান গ্রন্থটির লেখক শাহজাহান কবির।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকায় বইটি কেনা হবে বলে জানান মোজাম্মেল হক।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডার অ্যাসোসিয়েশনের কো-চেয়ারম্যান হাবিবুল হক খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম), বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম (বীর উত্তম), বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান কবিরসহ (বীর প্রতীক) অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য দেন।

Advertisements