বাড়ি ভাড়ার বকেয়া ১৫০০ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় নারায়নগঞ্জে ভাড়াটিয়ার পিতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বাড়িওয়ালার ছেলে-মেয়েরা। নিহত মেহেদী হাসানের (৫৫) বাড়ি নারায়ানগঞ্জের নলুয়াপাড়া এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিতাইগঞ্জের নলুয়াপাড়া এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত মেহেদী হাসানের স্ত্রী বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরো ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত মেহেদী হাসান নলুয়া এলাকায় মায়ের দোয়া মমিন পোলট্রি স্টোর নামে একটি ব্যবসা
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত মেহেদী হাসানের পাঁচ ছেলের মধ্যে তিনজন বিয়ে করেছেন। নিজ বাড়িতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তৃতীয় ছেলে মো. আমিনের জন্য একটি রুম ভাড়া করেন। প্রতিবেশী মৃত মঞ্জু ড্রাইভারের বাড়ির তৃতীয় তলার একটি রুম মাসিক আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া নেন।
সেখানে আমিন স্ত্রী আঁখি ও তার একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে গত দেড় বছর যাবৎ ভাড়া থাকছেন। আমিন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। করোনার কারণে কাজকর্ম না থাকায় গত ৫ই নভেম্বর আমিন অক্টোবর মাসে এক হাজার টাকা বাড়িওয়ালাকে দেন। বাকি ১৫০০ টাকা গত ১০ নভেম্বর পরিশোধের ওয়াদা করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে আমিন বকেয়া ১৫০০ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এ কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বাড়ির মালিক পক্ষে দুই ভাই রানা ও সুমন এবং বোন পিংকি বকেয়া পনেরশ’ টাকা আদায় করতে আমিনের ঘরে যায়। তারাই উত্তরাধিকার সূত্রে যৌথভাবে এই বাড়ির মালিক। ওই সময় আমিন টাকা পরিশোধে আরো কয়েকদিন সময় চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ির মালিক ৩ ভই-বোন ভাড়াটিয়া আমিনের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে রানা, তার ভাই সুমন ও বোন পিংকি আমিনকে মারধর করে। ওই সময় স্বামীকে বাঁচাতে এলে রানার স্ত্রী শারমিন ও সুমনের স্ত্রী ফাতেমা আমিনের স্ত্রী আঁখিকেও মারধর করে।
এদিকে বাড়ির মালিকদের মার খেয়ে আমিন বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ওই সময় বাড়ির মালিক রানা ও সুমন, আমিনের পিছু নেয়। মোবাইল ফোনে রানা তার বন্ধু রনি, জুম্মন, রোবেল, লিয়নকে ডেকে পাঠায়। আমিনকে রাস্তায় না পেয়ে তারা আমিনের বাবা মেহেদী হাসানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে (মুরগির দোকান) গিয়ে তার সঙ্গে পনেরশ’ টাকার দাবিতে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। মেহেদী হাসানও ছেলের বকেয়া বাড়ি ভাড়া পরিশোধের জন্য কয়েকদিন সময় চান। কিন্তু তাতে রাজি না হয়ে রানা, সুমনসহ তাদের সঙ্গে থাকা অন্যরা মেহেদীকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। হামলার এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ইসলাম হার্ট সেন্টারে নিয়ে যায়। অবস্থা খারাপ থাকায় সেখান চিকিৎসা না দিয়ে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ দেড়শ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান।