জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। তবে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব এবার ভোটে নির্বাচিত হবে না। সরাসরি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামত নেন তারেক রহমান। বিকাল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ৪৩ জন নেতার মতামত নেন তিনি। পৃথকভাবে নেওয়া ছাত্রদল নেতাদের মতামতের মধ্যে অধিকাংশই নতুন কমিটির পক্ষে অবস্থান নেন।
বর্তমান কমিটির বিষয়ে কী করা উচিত, নতুন কমিটি করলে কী ধরনের নেতা নির্বাচন করা উচিত এবং জেলা কমিটির বিষয়ে কী করা উচিত ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করেন তারেক রহমান। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা তারেক রহমানকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ন্যস্ত করেন।
মত নেওয়ার সময় ছাত্রদলের ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটির মধ্যে ঢাকার বাইরে ও অসুস্থতাজনিত কারণে ১২ জন অনুপস্থিত ছিলেন। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত থাকলেও তাদের মতামত নেওয়া হয়নি।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর এ কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে নতুন কমিটি গঠনের দাবি ওঠে সংগঠনের মধ্য থেকে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মতামত দেওয়া অন্তত ১০ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বলেছেন বিগত আড়াই বছরে বর্তমান নেতৃত্ব কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। এর জন্য মূলত কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়ী। তারা কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার অজুহাতে কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর কৌশল নিতে চান।
এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিট শাখা কমিটিও গঠন করা যায়নি। এক্ষেত্রেও কেন্দ্রের শীর্ষ দুই নেতা ‘মাই ম্যান’ রাখার জন্য অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের চাপে রাখার কারণে তা হয়নি। এতে দল ও সংগঠনের ক্ষতি হবে, সংগঠনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে, নতুন নেতৃত্বের পথ তৈরির পথ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই তারা নতুন কমিটি গঠনের জন্য সংগঠনের অভিভাবক তারেক রহমানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, তবে এটাও ঠিক খোকন-শ্যামল কমিটির সময়ে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন হয়েছে, নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সারা দেশে জেলা ও সমমান পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা ও সমমান পর্যায়ে, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েরও কমিটি গঠন হয়েছে। আবার অনেক ব্যর্থতার মধ্যে একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি, তেমনি সংগঠনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিট শাখাও গঠন করতে পারেনি।
এর মধ্যে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য ইউনিট রয়েছে। কবে নাগাদ এসব কমিটি গঠন করা হবে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। এতে পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাকর্মী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নতুন কমিটির আলোচনায় যারা : জানা যায়, নতুন কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক শাহনেওয়াজ, মাহিনউদ্দিন রাজু প্রমুখ।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব মিয়া, নিজামউদ্দিন রিপন, মারুফ এলাহী রনি, রনি প্রধান, আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, রাশেদ ইকবাল প্রমুখ।
ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, সংগঠনকে গতিশীল রাখতে যে কোনো সংগঠনেরই নিয়মিত কমিটি হওয়া দরকার। নতুন কমিটির বিষয় সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব।
সূত্রঃ যুগান্তর