বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের কারণে আজকে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ তারা বলছে তারা নাকি ভয় পাই না। এমন ভয় পেয়েছে যে তাদের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। কারণ তাদের তো সবাই বিদেশে, টাকা পাচার করেছে বিদেশে। ভিসা নীতি এমন হয়েছে, এবার যদি তুমি আবার ভোট কারচুপি করতে যাও, এবার যদি দিনের ভোট রাতে কর, তাহলে এবার রেহাই নাই।
বুধবার (১৪ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউরি মোড়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল ইসলাম বলেন, কী করেছে দেশটাকে দেখেন, কোথায় নিয়ে ফেলেছে! লজ্জায় আমরা মুখ দেখাতে পারি না, কি কারণে স্যাংশন এসেছে। আমেরিকা থেকে স্যাংশন, কেন? র্যাবকে কেন স্যাংশন দেয়া হয়েছে? র্যাবকে কারা আমাদের ভাইদের গুম করতে, খুন করতে বলেছে? এ সরকার এসব করতে বলেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করছে না, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। বেকারদের চাকরির অধিকারের জন্য লড়াই করছে। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য লড়াই করছে।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিভাগীয় তারুণ্য সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গোলাম আকবর খোন্দকার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক মো: সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনসহ চট্টগ্রাম বিভাগ, জেলা ও মহানগর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মির্জা ফখরুল বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এখনো জেলে ররেছে উল্লেখ করে বলেন, আসলাম চৌধুরী এখনো জেলে বন্দী। তারা অনেককে গুম করেছে, খুন করেছে। সারাদেশে ৬০০-র বেশি দলীয় লোককে গুম করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
আওয়ামী লীগ দেশকে এমন পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছেন কোথাও কোনো স্বস্তি নেই, শান্তি নেই। এদেশের মানুষের গলা টিপে ধরেছে এ সরকার। এই দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? এই দেশ কি জিয়াউর রহমান চেয়েছিল? আমরা চেয়েছিলাম একটা গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সমানে বলে বেড়ান এ দেশে নাকি গণতন্ত্র আছে, এ দেশে নাকি সবচেয়ে ভাল ভোট হয়, এ দেশে নাকি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। আমরা খুব পরিস্কার বলতে চাই, অনেক হয়েছে ১৪ বছর আপনি আমাদের বহু কিছু কেড়ে নিয়েছেন, আমাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না, কোর্টে গেলে আমদেরকে সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কোন বিচার হয় না, মিথ্যা মামলা দিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদেরকে আটক করে রাখা হয়। এর পরে আমরা হাইকোর্টে গিয়ে আগাম জামিন নিয়ে লোয়ার কোর্টে গেলে আবার কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানেই শেষ না কারাগার থেকে যখন হাইকোর্টে জামিন নিতে যাই, তখন আরেকটা নতুন মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার কত ভীরু, কাপুরুষ, খুব লম্বা লম্বা কথা বলে। বলে ক্ষমতায় আমরা যাব, ক্ষমতায় কিভাবে যাবা? ওই পুলিশ, ওই বিডিআর, ওই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তোমরা ক্ষমতায় যাবা!
ফখরুল বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না, আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিতে চাই। আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
ফখরুল বলেন, এ সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না। আজকে আমার দেশের সমস্ত সম্পদ লুট করে তারা বিদেশে পাচার করেছে। বিদ্যুৎ দিতে পারে না। কেন টাকা তো নিয়েছেন সব? টাকা একবার না, তিনবার, চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই না অতিরিক্তচার্জ নিচ্ছেন। বিদ্যুতের কার্ডে ১ হাজার টাকা ঢুকালে ৩০০ টাকা নাই। এই টাকা কোথায় গেল? শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ঘরে গেল। এই জনগণের টাকা দিয়ে তুমি উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট করছ।
চট্টগ্রামের টানেলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটার দরকার আছে সত্য, কিন্তু আগে তো মানুষের বাঁচার দরকার আছে। আগে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার বিষয় নিশ্চিত করার ব্যাপার আছে, আগে তো আমার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপার আছে, আগে তো আমার চাকরি পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কলকারখানা কোথায়? নতুন কলকারখানা তো হচ্ছে না, উপরন্তু যা ছিল তা থেকে কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসায়ী, আমদানি করেন। এখন ব্যবসায়ী ভাইয়েরা কি আমদানি করতে পারছেন? কেন পারছেন না, ডলার নাই। ডলার নাই কেন? সব তো পাচার করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ সরকার শুধু ভোট চুরি নয়, জনগণের সম্পদ চুরি করেছে। আমার বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি করে নিয়ে গেছে। আমার ব্যাংকগুলোকে চুরি করে খালি করে দিয়েছে। এ রকম লুটেরা, এ রকম চোর যদি সরকারে আর একদিনও থাকে দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। এটা আমার একার কথা নয়, আজকে বিদেশী পত্রিকায়ও একই কথা বের হচ্ছে। ভারতীয় একটি পত্রিকা গতকাল লিখেছে যে বাংলাদেশকে বলা হতো উন্নয়নের রোল মডেল, সেই বাংলাদেশ নাকি এখন মরিচিকা দেখছে। কারণ উন্নয়নের নামে বাংলাদেশকে লুটপাট করা হয়েছে, উন্নয়নের নামে বাংলাদেশকে ফোকলা করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে আমদের সমস্ত অধিকারকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আজকে আমরা আদালতে গিয়ে যে ন্যায় বিচার পাব, সেই ন্যায় বিচার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। পার্লামেন্টকে শেষ করে দিয়েছে।
সমাবেশে আগত তরুণদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এই দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। আমরা যখন যুবক ছিলাম, আমরা এই দেশটাকে স্বাধীন করেছি। আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগারে অনেকদিন আটক করে রাখা হয়েছিল। আমরা বারবার বলেছি তাকে মুক্তি দিন। আমরা জানি না সেখানে তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা? কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন তা হবার কথা নয়। তিনি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, যেদেশে ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়, সেদেশে গণতন্ত্র থাকতে পারে? তরুণ নেতৃত্ব তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই বাংলাদেশকে আবার স্বাধীন করব, আবার মুক্ত করব। আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।
তিনি বলেন, তরুণ ভাইয়েরা তোমাদের দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করো। তোমাদের ভোটের অধিকারকে রক্ষা করো, তোমাদের মাকে মুক্ত করো। এ জন্য সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে দাড়াতে হবে এবং এই দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে। এটাই হওয়া উচিত আজকের তারুণ্য সমাবেশের একমাত্র শপথ।
তিনি বলেন, এই মাটি থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। ইতোমধ্যে এই লুটেরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমাদের দেশকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, এদেরকে নির্বাচনে বিশ্বাস করা যায়? এদেরকে বিশ্বাস করা যায় না। সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সমস্ত মানুষকে শামিল করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এক করতে হবে। সবাইকে এক করে দেশকে রক্ষা করার জন্য, মানুষকে রক্ষ করার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন মানুষ বাজারে যেতে পারে না, বাজারে আগুন। চালের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়েছে, সবজির দাম বেড়ে গেছে। লবন, চিনি, ডিম, মুরগীসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। মানুষ ভাল নেই। তারা তো ভাল আছে। তারা বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে সেই টাকা বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারা গুম করেছে, খুন করেছে, সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মামলা হামলা চালিয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে প্রতিদিন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
সমাবেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন এমন কেউ কি আছেন যার বিরুদ্ধে মামলা নেই? তিনি নিজের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা থাকার কথাও জানান।
সূত্রঃ নয়াদিগন্ত