বান্দরবান পৌর শহরের সবচেয়ে নান্দনিক ও তারকামানের হোটেল লাবাতন হিল রিসোর্টের মালিক একজন তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা। চিম্বুক রোডের হাফেজা ঘোনায় ও পাহাড়ের চূড়ায় এ বিলাশবহুল হোটেলটিতে এক রাত যাপন করতে পর্যটকদের গুনতে হয় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। হোটেলটির সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক রেস্টুরেন্টও। যেখানে এক বেলা খাওয়া পর্যটকদের জন্য স্বপ্নের মতো।
হোটেলটির মালিক মোস্তফা কামাল। তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। বর্তমানে মোস্তফা কামাল পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি ডাইরেক্টর (উপপরিচালক) হিসাবে কুমিল্লা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৫ মে পর্যন্ত এক যুগ বান্দরবানে পার্বত্য জেলা পরিষদে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসাবে চাকরি করেন মোস্তফা কামাল। ওই সময় ঘুস, দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি। এই টাকা দিয়ে ২০১৫ সালে তিনি ৮০ শতক জায়গা কিনেন। সেখানে তিনি ২০২০ সালে লাবাতন হিল রিসোর্ট গড়ে তোলেন। হোটেলটির পরিচালক করা হয়েছে তার স্ত্রী সুমা বেগমকে।
এছাড়াও বর্তমান কর্মস্থল কুমিল্লায়ও স্ত্রীর নামে আরেকটি হোটেল করেছেন বলে মোস্তফা কামালের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। বিভিন্ন লাভজনক ব্যবসায় আরও কয়েক কোটি টাকা তিনি বিনিয়োগ করেছেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতি আর অনিয়ম করে বিভিন্ন নির্মাণ, সরবরাহ, কেনাকাটা, নিয়োগ, বদলিসহ সব ক্ষেত্রেই চলত তার ঘুস লেনদেন। ভুয়া দরপত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে মোস্তাফা কামালের বিরুদ্ধে। তিনি টাকা ছাড়া কোনো ফাইলে হাত দিতেন না। তিনি পার্বত্য জেলা পরিষদকে বানিয়েছিলেন দুর্নীতির নিজস্ব ঘাঁটি। এছাড়া মোস্তফা কামাল অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে সরকারি প্রকল্প যেমন, উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প, জনস্বাস্থ্যের প্রকল্প, সড়ক ও জনপদের প্রকল্পসহ সব কাজেই প্রভাব খাটাতেন। তার চাহিদামতো টাকা না পেলে তিনি কোনো বিলে সই করতেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পরিষদের একজন ঠিকাদার যুগান্তরকে বলেন, মোস্তফা দীর্ঘদিন বান্দরবান থাকার সুবাদে গড়ে তোলেন নিজস্ব ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ কমিশনের বিনিময়ে পাইয়ে দিতেন। কখনো কখনো নিজেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে ব্যবসায়িক শেয়ারহোল্ডার হয়ে প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতেন। তার টেবিলে ফাইলের সঙ্গে নগদ টাকা না থাকলে ওই ফাইলের সন্ধান পাওয়াই কঠিন ছিল।
প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি পার্বত্য জেলা পরিষদের নজরে আসে। এরপর মোস্তাফা তড়িঘড়ি করে নিজের অপকর্ম ঢাকতে পদোন্নতি নিয়ে রোয়াংছড়ি চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে প্রতিবেদক নিজের পরিচয় গোপন রেখে মোস্তফা কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজের মালিকানায় থাকা রিসোর্টের প্রশংসা করেন। রিসোর্টের মালিক তিনি বলে দাবি করেন। পরবর্তী সময়ে প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে আপনি একজন সরকারি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়ে অল্প সময়ে এত টাকা ও সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন জানতে চান। এ প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা কামাল বলেন, আমি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নই, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। পরে তিনি এসব হোটেল ও রিসোর্টের মালিকানা অস্বীকার করেন। ঘুসের বিনিময়ে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়া, ভুয়া দরপত্রের বিল উত্তোলন, সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন।