প্রায় দশ মাস বন্ধ থাকার পর খুলতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে স্বল্প সময়ের নোটিশে খুলে দেওয়া হবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে তা পরিস্থিতি দেখে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করলেও ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অনলাইনে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘করোনাকালীন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা’ সংক্রান্ত এই ভার্চ্যুয়াল সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমনুল ইসলাম খান, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসিবুল আলম, এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নেহাল আহমেদসহ শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রি-ওপেনিং পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাকালীন স্কুল কিভাবে খুলতে পারি, সংসদে সংসদ সদস্য, শিক্ষকরা বলছেন স্কুল খোলা দরকার। শিক্ষার্থীরাও বলছে আমরাও আর পারি না, স্কুলে যাওয়া দরকার। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কোনো নির্ধারিত তারিখ ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সামনে বসে তারিখ ঠিক করবো, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খুলবে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, না। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিলে আমরা যেকোনো সময় খুলবো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা প্রস্তুতি নিতে বলেছি জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে খোলা যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করেন।
কবে নাগাদ খোলা হবে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা একসঙ্গে সবাইকে (সংবাদ সম্মেলন) জানাবো। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে জানাবো। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবাই পরামর্শ দিয়েছেন।
খোলার জন্য যে প্রাথমিক প্রস্তুতি দরকার তা যেমন হাইজিন ও সেফটি এবং সেগুলো মনিটরিং নিয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা নির্দেশনা দেবে। তিনি বলেন, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে। এরপর মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি দেখে যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যে গাইডলাইন তৈরি করেছিলাম তা নিয়ে সভায় আলোচনা করেছি এবং গাইডলাইন অনুযায়ী তারা প্রস্তুত থাকবে। আলাদা আলাদা গাইডলাইন ছিল, এখন সমন্বিত করবো। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। সর্বশেষ ছুটি বাড়িয়ে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
জুনে এসএসসি এবং জুলাইয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আর ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছিলেন তিনি। সেজন্য এনসিটিবি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে সিলেবাস কীভাবে পড়ানো হবে তা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, সভায় শিখন ঘাটতি পূরণের জন্য জানতে চাওয়া হয়। এজন্য আমরা বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঠিক কবে থেকে খুলবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।