ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা ঈমানের দাবী
Advertisements

মুসলিমদের সকল দল, উপদল, মাজহাব এ ব্যাপারে একমত যে,ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনীনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অনেক উচ্চে। এর হেফাজত, পবিত্রা রক্ষা করা সকল শুধু ফিলিস্তিনীদের নয় বরং সকল মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে ফিলিস্তিনের যে ফযিলত বর্ণিত হয়েছে-

এক. ইসরা ও মিরাজের ভূমি:

আল্লাহ্ বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা,সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-১)

জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসূলুল্লাহ সা. এর রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীগণের নামাজের ইমামতি করেন। তারপর তিনি এখান থেকে উর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন। এর দ্বারা আল্লাহ্ তা’লা ঘোষণা করেন বিশ্বধর্মীয় নেতৃত্ব ইহুদীদের কাছ থেকে নতুন রাসূল, নতুন কিতাব ও নতুন উম্মতের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এখানে যদি ফিলিস্তিনীনের গুরুত্ব না থাকতো তাহলে আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় নবীকে মক্কা হতেই সরাসরি উর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করাতেন।

দুই.প্রথম কিবলা:

মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবীগণ দশ বছর নামাজ আদায় করেছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘তুমি যেখান হতে বাহির হওনা কেনো মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকোনা কেনো ওর দিকে মুখ ফিরাবে।'( সূরা বাকারা,আয়াত-১৫০)

তিন.
নবুয়ত ও বরকতময় ভূখন্ড:

আল-কুরআনে ৫ স্থানে মহান আল্লাহ্ ফিলিস্তিনকে বরকতময়, পূণ্যময় ভূখন্ড বলেছেন।

০১. সূরা বনী ইসরাইলের প্রথম আয়াতে। ‘ যার আশেপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি।’

০২. সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম আ. এর ঘটনা বর্ণনার সময়-
‘আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখন্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।'( সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৭১)

০৩. মূসা আ. এর ঘটনা বর্ণনায়, যখন ফিরাউনের কবল থেকে মূসা আ. ও বনী ইসরাইলকে উদ্ধার করে আনা হয় এবং ফেরাউন ও তার সৈনদলকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়। আল্লাহ্ বলেন,
‘যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো,তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বনী ইসরাইল সমন্ধে আপনার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো,যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। (সূরা আ’রাফ: ১৩৭)

০৪. হযরত সুলায়মান আ. এর ঘটনায়। মহান আল্লাহ্ তাকে রাজ্য দান করেছিলেন এবং সব কিছুকে তাঁর অধীনস্থ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ্ বলেন,
‘ আর সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; সে তাঁর আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই ভূখন্ডের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।'( সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৮১)

০৫. সাবা এর ঘটনায়,আল্লাহ্ তাদের কিভাবে সুখ-শান্তিতে রেখেছিলেন। আল্লাহ্ বলেন,
‘ওদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেইগুলির মধ্যবর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ঐসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং ওদেরকে বলেছিলাম,’তোমরা এইসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ কর দিনে ও রাতে।'( সূরা সাবা: আয়াত-১৮)

আল্লামা মাহমুদ আলুসী তাফসীরে রুহুল মা’আনীতে উল্লেখ করেছেন,এই জনপদ বলতে শামকে বুঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস বলেন,এ জনপদ হলো,বায়তুল মুকাদ্দাস। (রুহুল মা’আনী, ২২/১২৯)
প্রাচীন শামদেশ (Levant) হল, বর্তমান সিরিয়া,জর্ডান,লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন।

চার. তৃতীয় সম্মানিত শহর:

হাদীসের আলোকে প্রমাণিত যে তিনটি শহর সম্মানিত,মক্কা,মদীনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস। সহীহ বুখারী,মুসলিমে হযরত আবু সাইদ খুদুরী রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
‘ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন (যায়গা ইবাদাতের) উদ্দেশ্যে ভ্রমণে বের হওয়া যাবে না- মসজিদুল হারাম,মসজিদুল আকসা এবং আমার এই মসজিদ।’ (হাদীস,৭০৭)

অন্য হাদীসে এসেছে, ‘ মসজিদুল আকসায় ১ রাকা’আত নামাজ আদায় অন্যান্য মসজিদের তুলনায় পাঁচশো গুণ,মসজিদুল হারাম এবং মসজিদুন নববী ব্যতীত। (বুখারী, মুসলিম)

এসব কারণে ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা, তাদের পাশে থাকা ঈমাণের দাবী।

লেখক: শিক্ষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

Advertisements