ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ প্রণব মুখার্জি আর নেই। সোমবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সোমবার নয়াদিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতি। আঘাতের কারণে তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিলো। পরে তার ডান হাত তুলতে অসুবিধা হচ্ছিলো বলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে রুটিন পরীক্ষায় তার দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। যদিও তার শরীরে কোনো উপসর্গ ছিল না। আর সেই খবর টুইট করে জানান প্রণব মুখার্জি নিজেই। এরপর গত ১০ আগস্ট প্রণব মুখার্জির মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়।
প্রণব মুখার্জি ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি (জুলাই, ২০১২-এ কার্যভার গ্রহণকারী)। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন ছয় দশকব্যাপী। তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিদেশ, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, রাজস্ব ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পালনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা-সমাধানকারী নেতা।
প্রণব মুখার্জি ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বীরভূম জেলার মিরাটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
রাজনীতি ও দেশের জন্য অবদানের জন্য একাধিক সম্মান ও পুরস্কারও পেয়েছেন প্রণব মুখার্জি। ১৯৮৪ সালে ইউরোমানি পত্রিকার সমীক্ষায় তাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী বলা হয়েছিল। ২০১০ সালে বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের দৈনিক সংবাদপত্র এমার্জিং মার্কেটস তাকে ‘ফাইনান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়ার ফর এশিয়া’ পুরস্কার দিয়েছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে, দ্য ব্যাঙ্কার পত্রিকা তাকে “ফাইনান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়াস” সম্মান দিয়েছিল। ভারত সরকার ২০০৮ সালে তাকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ প্রদান করেছিল। ২০১১ সালে উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টর অব লেটারস ডিগ্রি দেয়।
এদিকে প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।