করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা ও সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহার সভাপতিত্বে রোববার এক ভার্চুয়াল সভায় এই অনুমতি দেওয়া হয় বলে কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ইউজিসি সদস্যরা ছাড়াও ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এই সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা বাদে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিলেও পরীক্ষা নিতে পারছিল না। এখন সেমিস্টার ফাইনাল ও চূড়ান্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেই অনুমতি দেওয়া হল।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা, ব্যবহারিক ক্লাস ও মূল্যায়ন নিয়ে সাতটি সুপারিশ করেছে ইউসিজি।
> কোভিড-১৯ সঙ্কটের কারণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোর সুপারিশের প্রেক্ষিতে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
> বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি, চিকিৎসাসহ অন্যান্য শাখার অসমাপ্ত ব্যবহারিক ক্লাস এবং তার মূল্যায়ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করতে হবে।
> সেমিস্টার পরীক্ষা, ব্যবহারিক ক্লাস ও মূল্যায়ন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সর্বশেষ সেমিস্টারের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে।
> মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নির্দেশনায় বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ রাখতে হবে।
> শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে পরীক্ষা ও ব্যবহারিক ক্লাস পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও ব্যবহারিক ক্লাস শুরুর সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা আগে ক্যাম্পাসে প্রবেশ এবং শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হবে।
> কোভিড-১৯ সঙ্কটের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
> ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জারি করা নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন ও অনুসরণ করতে হবে।
সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিনস কমিটি, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
“পরীক্ষার মান নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাড়াহুড়ো না করে সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা নিতে হবে।”
সভায় উপাচার্যরা বলেন, মহামারীর মধ্যে অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। তবে পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। পরীক্ষা বা মূল্যায়ন না হলে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে, জাতীয় স্বার্থে পরীক্ষা নেওয়া দরকার।
সম্প্রতি এক বিজ্ঞাপিত বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের সময় বাড়াতে পিএসসিকে চিঠি দেওয়ার জন্য ইউজিসিকে অনুরোধ করেন উপাচার্যরা।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের সঞ্চালনায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ ও অধ্যাপক মো. আবু তাহের; ইউজসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস জামান এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মো. কামাল হোসেন সভায় যুক্ত ছিলেন।