মার্কিন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মার্ক মিলি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, পশ্চিম এশিয়া থেকে তারা কখনোই সেনা প্রত্যাহার করবে না। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল কৌশলগত দিক থেকে আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মার্ক মিলি বলেছেন, হুমকি কম-বেশির ওপর পশ্চিম এশিয়ায় তাদের সেনা সংখ্যা কমানো বাড়ানোর বিষয়টি নির্ভর করবে। অন্য কর্মকর্তার মতো তিনিও আইএসসহ অন্য সন্ত্রাসী সংগঠনের তৎপরতাকে অজুহাত করে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, ‘দায়েশ বা আইএস জঙ্গি সংগঠনের ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হলেও এখনো তারা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়নি। সন্ত্রাসীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অংশের মরুভূমিতে তারা গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে যা জর্দানের জন্য হুমকি’। মার্কিন সেনা প্রধান মার্ক মিলি দাবি করেছেন, তারা যদি এ অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে সন্ত্রাসীরা আবারো আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিরিয়ায় দায়েশ বা আইএস সন্ত্রাসীদের সক্রিয় হয়ে ওঠার ব্যাপারে মার্ক মিলি এমন সময় এসব মন্তব্য করলেন যখন রুশ ও সিরিয়ার নিরাপত্তা ও সামরিক সূত্রগুলো বলছে, সিরিয়ার মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে দায়েশ সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মার্কিন সেনারা। তাদের মতে, মার্কিন শীর্ষ সামরিক এ কর্মকর্তা এ অঞ্চলে গত কয়েক বছরের বিরূপ পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে সামরিক উপস্থিতি বজায় পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিলেও তার আঞ্চলিক মিত্ররা তাদের সুরক্ষায় মার্কিন প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিহান।
প্রকৃতপক্ষে, এর আগে মার্কিন সেনারা যখন আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল তখন ওয়াশিংটনের মিত্রদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। দক্ষিণ পারস্যের আরব দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের নিরাপত্তা রক্ষায় মার্কিন প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে। এ কারণে ধারণা করা হয় এই দুই আরব দেশ মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে ঝুকে পড়েছে। এরই মধ্যে এই দুই দেশ বিশ্বের নয়া অর্থনৈতিক জোট ব্রিক্সের সদস্য পদ লাভ করেছে। এ ছাড়া, চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে যা কিনা ওয়াশিংটনের জন্য বিপদ সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবে একের পর এক প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে রিয়াদের নিরাপত্তা বিধানে ওই দেশটিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান ও সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান উইলিয়াম বার্ণেয এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভানসহ আরো অনেক কর্মকর্তা বহুবার গোপনে ও প্রকাশ্যে সৌদি আরব সফরে গেছেন।
মোট কথা, এ অঞ্চলের পরিবর্তিত পরিস্থিতে মার্কিন সরকার চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মার্কিন সেনা প্রধান মার্ক মিলি এমন সময় পশ্চিম এশিয়ায় সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখার কথা বললেন যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মার্কিন সামরিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে।