গত পরশুদিনের আগেরদিন পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে একটা নাটকীয় ও ইন্টারেস্টিং চেঞ্জ এসেছে বামপন্থীদের ব্রিগ্রেড ময়দানে সমাবেশের পর থেকে। তাঁর আগে কমরেড মইদুল মৃধার খুন হওয়াটাও এখানে ভুমিকা রেখেছে। খেলাটা যেখানে বিজেপি বনাম তৃণমুল ছিল সেখানে হঠাত বামপন্থীরা প্রবেশ করেছে। তাঁরা মোটামুটি বাংলাদেশের সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন মার্কা রাজনীতি থেকে বের হয়ে অরিজিনাল পলিটিক্সে জয়েন করেছে আব্বাস সিদ্দিকী ভাইজানের মাধ্যেমে।
ফুরফুরা পীরের ছেলে আব্বাস ভাইজানের ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট ৪৫ সিটের বিনিময়ে বামফ্রন্ট কে সমর্থন দিচ্ছে। মোটামুটি একদিকে আছে তৃণমুল, অন্যদিকে আছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএস, অন্যদিকে বিজেপি। আব্বাস ভাইজানের সমর্থন এবং বক্তব্যের পরে এছাড়াও তৃণমুল ক্যাডারদের ধরে পিটানোর কারণে এখন সিপিএম এর ক্যাডাররাও মাঠে নামার সাহস পাচ্ছে। বড্ড সুশীল সিপিএম নেতৃত্বের একটা ভাইজানের মত ক্যাডার মার্কা বোল্ড ফেস দরকার ছিল। তাঁরা তা পেয়েছে অবশেষে।
নির্বাচনী রাজনীতির প্রধান সূত্র হলো, যার ”হ্যাডম” আছে, যার ক্যাডার আছে তাকেই মানুষজন আরও ক্ষমতা দেবে। এখন অবশেষে সিপিএম ট্র্যাকে ফিরলো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনে কী হবে?
আমি এখন পর্যন্ত আমার বাজি তৃণমুলের উপর রাখব। একথা সত্য তৃণমুলের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো মুসলিম ভোট। একজন হিন্দু হয়েও কীভাবে ইসলাম কে ব্যবহার করে রাজনীতি করা হয় সেটা মমতা থেকে শেখা উচিত। মুসলিম ভোট ব্যাংকে কোন ফাটল আব্বাস সিদ্দিকী বা বাম জোট ধরাতে পারবে না। কারণটা হচ্ছে আব্বাস সিদ্দিকী একজন পীর। আমাদের দেশের চরমোনাই-শর্ষীনা-আটরশীর মত একজন পীর যার মুরিদ আছে অনেক এবং তাঁরা পীরের জন্য জান দিয়ে দেবে। এর বাইরে তাঁর প্রভাব কম। আর ফুরফুরার পীর আজীবনই বামদের সমর্থন দিয়ে গেছেন শুধুমাত্র এবার ভাল দিকটা হচ্ছে বিনিময়ে ৪৫টা সিট নিয়ে নিচ্ছেন। এইটা এখন পর্যন্ত ভাল।
কিন্তু এই পীরের মুরিদদের বাইরে যারা আছেন যেমন ইন্ডিয়ান জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ (মোটামুটি ভারতের হেফাজতে ইসলাম) তাঁরা মমতার পক্ষে আছেন। উল্লেখ্য ভারতের জামায়াত কিংবা জমিয়ত রাজনীতিতে অংশ নেয় না। তাঁরা অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করে। তবে আব্বাস সিদ্দিকীর মত জামায়াত আগে ওয়ালফেয়ার পার্টি বানালেও সেটা ক্যাডার মেইনটেইন করতে না পারার কারণে টিকাতে পারে নি। আব্বাস সিদ্দিকী যেটা পশ্চিম বাংলায় করছেন, জামায়াত সেটা কেরালাতে এর আগেই করেছে ওয়ালুফেয়ার পার্টি বানিয়ে তাঁর প্রধান একজন অমুসলিম বানিয়ে রান করে বামদের সমর্থন দিয়ে। তবে পশ্চিম বাংলায় কোন সুশীল রাজনীতি চলে না। তাই ওয়ালফেয়ার পার্টির কোন সম্ভাবনা নেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি কেন বাজিটা তৃণমুলের পক্ষে রাখছি?
তৃণমুলের মুসলিম ভোট ঠিক থাকছে, বিজেপির হিন্দু ভোটে সিপিএম ভাগ বসাতে পারছে তাদের শক্তি দেখিয়ে। এমতাবস্থায় তৃণমুলের জেতার সম্ভাবনা খুব বেশি।
পশ্চিম বাংলায় এখন সবাই ভাগের রাজনীতি করছে। বিজেপি হিন্দু-মুসলিম ভাগ কে এগিয়ে দিচ্ছে, তৃণমুল বাঙালী-অবাঙালী তে ভাগ করছে, হিন্দু সংহতি বাঙ্গালী হিন্দু বনাম উত্তর ভারতীয় হিন্দুতে ভাগ করছে। আর বামরা লাস্ট ব্রিগ্রেডে দেখলাম সবাই কে ঐক্যবদ্ধ হতে বলছেন। আরেকটা ব্যাপার আছে যেমন কংগ্রেস-সিপিএম এর কিছু আসন আছে যেখানে বোমা মারলেও ভোট ব্যাংকে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তৃণমুলেরও এরকম আছে। বিজেপির এরকম আসন নেই। যদিও বামরা চাচ্ছে বিজেপি আসুক, তৃণমূল কে ধরে পিটাক। পরে যদি বিজেপির পতন হয় তবে বাম আসতে পারবে কিন্তু তৃণমুল আসলে বামদের পিঠে ছালা বেধেও রক্ষা পাবে না।
আমার কাছে যদি টাকা থাকতো তবে আমি নির্বাচনের আগে পুরো পশ্চিম বাংলাটা ঘুরে দেখতাম। বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র আসে তবে সেটা পশ্চিম বাংলার মতই হবে। আর বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা আর ২০ বছর পরে পশ্চিম বাংলার লেভেলে হয়তো পৌছাতে পারবে। দূর থেকে এখন পর্যন্ত এটা আমার অবজার্ভেশন।