ইউরোপিয়ান গবেষকরা কৃত্রিম মিষ্টি এবং ক্যান্সারের মধ্যে একটি যোগসূত্র আবিষ্কার করেছেন। ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে। গবেষকরা কৃত্রিম মিষ্টিতে স্তন ক্যান্সার ও স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত ক্যান্সার আবিস্কার করেছেন। কৃত্রিম মিষ্টি (আর্টিফিশিয়াল সুইটনার) কোমল পানীয়ের ডায়েট ড্রিংকসে ব্যবহার করা হয় যেটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে। ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ এবং সারবন প্যারিস নর্ড ইউনিভার্সিটি গত আট বছর ধরে এক লাখ মানুষের ডায়েট এবং স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কৃত্রিম মিষ্টি খায় তাদের ১৩ শতাংশ ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্যান্সারের ঝুঁকি পাওয়া গেছে ডায়েট কোক এবং কোক জিরো যারা পান করেন তাদের মধ্যে। ব্রিটেনে ডায়েট কোক ও জিরো কোকে অ্যাসপারটেম (ধংঢ়ধৎঃধসব) ও অ্যাসেসুলফেম-কে (ধপবংঁষভধসব-ক) দেয়া হয়ে থাকে। এই দু’টি রাসায়নিক দই ও পনিরেও দেয়া হয়ে থাকে। এর আগে এ ধরনের বড় গবেষণায় ব্রিটেনে এই দু’টি রাসায়নিকের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি পাওয়া যায়নি বলে গবেষকরা জানিয়েছিলেন।
গবেষণার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, গত আট বছরে প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে তিনজনের ক্যান্সারের সাথে যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তবে ব্রিটেনের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং তারা বলছেন, এখনো তারা এই গবেষণায় আস্থা রাখতে পারছেন না। এখানে এটা প্রমাণ করা যায়নি অথবা পরামর্শ দেয়া হয়নি যে, আমরা কৃত্রিম মিষ্টি থেকে আবার প্রাকৃতিক চিনি ব্যবহারে ফিরে যাবো কি না।
তারা বলছেন, অ্যাসপারটেম অথবা অ্যাসেসুলফেম-কে ডায়েট কোক অথবা জিরো কোকে ব্যবহারের পাশাপাশি চায়ের মধ্যেও ব্যবহার করা হয়। ফ্রেঞ্চ গবেষকরা এক লাখ দুই হাজার ৮৬৫ পূর্ণ বয়স্ক, যাদের গড় বয়স ৪২ এবং এদের এক-তৃতীয়াংশ নারী তাদের ডায়েট ও খাবারের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ২৪ ঘণ্টার খাবারের রেকর্ড রাখেন ছয় মাস ধরে। এদের ৩৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী দিনে কমপক্ষে একবার করে কৃত্রিম মিষ্টি পান করেছেন। গবেষণা শেষে তিন হাজার ৩৫৮ জনের মধ্যে ক্যান্সার শনাক্ত হয় এবং রোগ ধরা পড়ার সময় এদের গড় বয়স ছিল ৫৯.৫ বছর। এদের মধ্যে ৯৮২ জন শনাক্ত হয়েছেন স্তন ক্যান্সারে, ৪০৩ জন প্রোস্ট্রেট ক্যান্সারে এবং দুই হাজার ৩২ জন স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত ক্যান্সারে শনাক্ত হয়েছেন।
তবে ডায়েটেশিয়ান এম্মা কারডার এ ব্যাপারে বলছেন, ‘কৃত্রিম মিষ্টি বিষয়ক অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক ভিত্তিতে এগুলো পান করা অথবা খাওয়ার জন্য একেবারেই নিরাপদ’। তিনি বলেন, ‘এগুলো ডায়াবেটিক রোগীদের চিনির বিকল্প।’
প্রসঙ্গত, চিনির মতো কৃত্রিম মিষ্টি খাবারে চিনির স্বাদ পাওয়া যায় ;কিন্তু এগুলো খেলে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে না। তবে এই গবেষণার গবেষকরা বলছেন, ‘যারা দিনে ৭৯ এমজির (মাইক্রো গ্রাম) বেশি কৃত্রিম মিষ্টি দিনে খান তাদের ১৩ শতাংশ ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। এ সম্পর্কিত রিপোর্টটি ডেইলি মেইল অনলাইনে গত ২৫ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে।’