কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না এবারের নির্বাচনে
Advertisements

নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি পদ্ধতি অন্বেষণ করা প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এ কথা বলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমার ভোট কী আমি দিতে পারবো? ভোট দিলে কী এটা ওখানেই পড়বে, না কি ফিরে এসে এক জায়গায়ই পড়বে। এমন বিভিন্ন ধরনের অবান্তর..কিন্তু আমি অবান্তর বলছি না, তাদের আস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এই ধরনের অবান্তর যুক্তির অবতারণা করছে। আমি বলবো, নির্বাচন ব্যবস্থার উপরে জনগণের আস্থা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। নির্বাচন পদ্ধতিতে যদি আরও বেশি সংস্কার আনা যায়-যেখানে দৃশ্যমানভাবে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। তাহলে হয়ত আগামী নির্বাচনগুলো জনগণের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

সিইসি বলেন, কোনো নির্বাচনই কিন্তু বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে নাই। এবারকার যে নির্বাচনটা নিয়ে খুব সন্তুষ্ট বোধ করছি, হয়তোবা আমরা। আবার বলতে হবে এই নির্বাচনটা বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি।

বিতর্কটা আছে কম-বেশি, তবে যেটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ব্যাপক অনিয়ম ইত্যাদি হবে, যেই জিনিসটাকে উতরে নির্বাচনটাকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সফল, গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি আমাদের নির্বাচনে আমি আগেও বলেছি যে, বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা, রাষ্ট্র, বিভিন্ন সংগঠন আমাদের নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। তারাও নির্বাচন বিষয়ে বিভিন্ন গাইডলাইনস দিচ্ছিলেন এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে হবে, এই ধরনের একটা ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন।

বিভিন্ন চাপে থেকেও নির্বাচন কমিশন ভোট সুষ্ঠু করার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, তো আমরা বিভিন্ন ত্রিমুখী চাপে আমাদের নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করার জন্য আরও বেশিৃসচেষ্ট হয়েছি এবং পরিশেষে যেটা আমার প্রিয় সহকর্মীরা বলেছেন যে, সকলের সহযোগিতা নিয়ে, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা সম্ভব হয় না এবং এটা সংবিধানে, আইনেও বলে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সুবাদে জেনেছি, অনেকে সুনাম করেছেন আবার অনেকে অপবাদ দিয়েছেন। দুটোকেই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে করি, সেটি হলো নির্বাচনটা সুসম্পন্ন হয়েছে। মহাসুসম্পন্ন বলব না, সুসম্পন্ন হয়েছে। একটা চলমান সংকট, যেটা নিয়ে উৎকণ্ঠা ছিল, শঙ্কা ছিল, উদ্বেগ ছিল, সেখান থেকে জাতি উঠে এসেছে। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান না। রাজনীতিতে যে সংকট-আমরা রাজনীতি করি না, কিন্তু পরেক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের প্রতি রাজনীতিবিদদের যদি আস্থা না থাকে, আস্থা যদি চরম মাত্রায় চলে যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কিন্তু রাজনৈতিক সংকট নিরসনের দ্বায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা নৈতিক অবস্থান থেকে তাদেরকে অনুরোধ করতে পারি, আবেদন জানাতে পারি যে সংকট নিরসন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন।

রাজনীতিবিদদের যদি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না মন্তব্য করে সিইসি বলেন, নির্বাচন খুব যে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা নয়। নির্বাচন মোটাদাগে সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে গ্রহণযোগ্য না হলে একটা রাজনৈতিক সংকট থেকে যায়। একটা অংশ শুধু নির্বাচন বর্জন করেনি, প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দেয়। সেদিন থেকে সংকট শুরু। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তবে সবার সমন্বিত প্রয়াসে নির্বাচন উঠিয়ে আনা হয়েছে। সাময়িকভাবে হলেও জাতি স্বস্তিবোধ করেছে। নির্বাচন কমিশনও স্বস্তিবোধ করেছে।

তিনি বলেন, এখনো পত্রপত্রিকায় সমালোচনা হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন সোশ্যাল মিডিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ, সেখানে অবারিতভাবে বদনাম করা হচ্ছে। মূল ধারার গণমাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ আলোচনা থাকে। নির্বাচন অনেকটা গ্রহণযোগ্যভাবে সুসম্পন্ন হয়েছে। সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, একটি সংস্থা বলেছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাত দিয়ে ইসি সরকারের গোপন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। আমি জানি না সরকারে সঙ্গে আসলে কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা হয়েছে কি না। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমার সঙ্গে হয়নি। অন্য কারও সঙ্গে হয়েছে কি না সেটা আমি জানি না। তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কী ছিল না? অজুহাত কীভাবে দিলাম? রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি, এজন্য চাইলে কি ৩০ বছর নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া যেত? এই সাংবিধানিক ম্যান্ডেট কি আমাদের আছে?

নির্বাচন হয়ে গেলেও রাজনৈতিক সংকট কাটেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন সংকটে দেশ সুস্থিরভাবে এগোতে পারে না। নির্বাচন নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সংকট তৈরি হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্য কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

Advertisements