‘প্রহরী একাত্তর’ নামে একটি সংগঠন গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। এই সংগঠনটির কাজ হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা ও তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দেওয়া।
শনিবার ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার দিবস উপলক্ষে এক ফেসবুক লাইভে তিনি এই ঘোষণা দেন।
জার্মান প্রবাসী ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন সুমনের ফেসবুক থেকে লাইভ অনুষ্ঠানটি হয়।
অনুষ্ঠানে সোহেল তাজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে সেই চেষ্টা থেকে এই সংগঠনের পরিকল্পনা করছি। তবে এটি কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন নয় বলে জানান তিনি।
সোহেল তাজ বলেন, ‘১৭ এপ্রিল শুধু মুুজিবনগর সরকার দিবস নয়, বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপিত করার দাবি জানাই।’
“আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শক্তির নিউক্লিয়াস থেকে যেন নতুন প্রজন্মকে খোরাক দিতে পারি, তারা যেন তা ব্যবহার করে নতুন একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে সেটার চেষ্ট করতে হবে। এমন একটি সুন্দর বাংলাদেশ যেখানে ন্যায়বিচার, সুশাসন থাকবে, মেধাভিত্তিক সমাজ থাকবে। যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না, ক্ষুধার জন্য মৃত্যু হবে না। স্বাস্থ্য সেবা সমানভবে পাবে। আমি বিশ্বাস করি সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, যদি আমরা সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারি।”
তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে আমি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলছি। এই সংগঠনের মাধ্যমে তাদেরকে বলতে চাই, যারা নব্য বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করছে। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব নব্য বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদকে প্রতিহত করবে।’
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রহরী একাত্তর- প্রহরীর মতো সজাগ থাকবো আমরা। প্রহরীর মতো কাজ করবো। এই সংগঠনের আরো কাজ থাকবে ১৭ এপ্রিল যেন প্রজাতন্ত্র দিবস করা হয়, স্কুল-কলেজে যেন মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিহাস তুলে ধরা হয়।’
“আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে। মর্মাহত হয়ে আমি মনে করেছি এই সংগঠন এখন প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা বিশ্বাস করেন তাদের এখন রুখে দাঁড়াবার সময়, সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের সময়।”
তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে বলেন, ‘আমার বাবার দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। তার বিনিময়ে তার পক্ষ থেকে আমরা কিছু চাই না। অর্থ, ক্ষমতা চাই না। শুধু স্বীকৃতিটা চাই। মুক্তিযুদ্ধে যে অবদানটুকু ছিলো তার স্বীকৃতি। আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে সুবর্ণ সুযোগ ছিলো দেশের মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার এবং দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার। এতে আরো বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ ছিলো। এখনো সুযোগ রয়েছে। আমি আশা করি, আমাদের এখন নব্য ইতিহাসবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’
তিনি বলেন, ইতিহাস আড়াল করে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। ইতিহাস থেকে নতুন প্রজন্মকে আড়াল করা একটা ক্রাইম, কারা এই ইতিহাস থেকে প্রজন্মকে বঞ্চিত করতে চাইছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।
তবে সংগঠন গড়ে তুললেও তিনি নিজে কখনো রাজনীতি ফিরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আপনি রাজনীতিতে আবার ফিরবেন কিনা- এমন প্রশ্নে সোহেল তাজ বলেন, ‘অসম্ভব। সম্ভব না। এই জন্য আমি উদ্যোগটি নিচ্ছি। আমি জানিয়ে দিতে চাচ্ছি, কেয়ারফুল। প্রকৃত ইতিহাসে হাত দিবে না তোমরা।’
“আমি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি। ফেরা আর সম্ভব না। আমি রাজনীতি বা ক্ষমতা চাই না। দেশের জন্য কাজ করছি। একটি নতুন ও সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।”