চীন-ভারত সংঘর্ষ বা যুদ্ধে ভারতই বারবার পর্যুদস্ত হয়েছে। ভারতের ভয়াবহ পরাজয়ের দগদগে ক্ষতওয়ালা ১৯৬২ সালের যুদ্ধও ভারতের উস্কানীতেই হয়েছিলো। চীনের মাওসেতুংয়ের সরকারের বিরুদ্ধে তিব্বতের দালাইলামার অবস্থান ছিলো চীনের ভাষায় দেশদ্রোহী। তখন আইসেন হাওয়ারের আমেরিকা নেহেরুর সহযোগীতা নিয়ে দেশদ্রোহী দালাইলামাকে সিআইএ অপারেশন টিম দিয়ে আসামের দিশপুর সীমানা অতিক্রম করে ভারতে পৌছে দিয়েছিলো। উপমহাদেশের রাষ্ট্রদ্রোহী,ধর্মদ্রোহীদের ভারতের আশ্রয়, প্রশ্রয় দেয়ার ইতিহাস পুরোনো। আবার ভারতবিরোধী ভারতীয় হলে তাকে বেঁধে ধরে আনার ইতিহাসও সমৃদ্ধ।
দালাইলামাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার পরই মূলত বিপ্লবী চীন- আকসাই চীন, লাদাখ,অরুনাচল দিয়ে ভারতে হামলা করে আসাম দখল করে কয়েক ঘন্টা রেখে আবার ফেরত দেয়।দখল করে রেখে ফেরত দিয়ে আসা মানে হলো নিজের মত করে শাস্তি প্রদান। আইসেন হাওয়ারের আমেরিকা তখন যেকোন কারনেই হোক নেহেরুর পাশে দাড়ায়নি বা দাড়াতে পারেনি।
১৯৬২ সালের সেই দূর্বল চীন আর এখন নেই। চীন এখন আন্তর্জাতিক বানিজ্যের অঘোষিত রাজধানীতে পরিনত হতে যাচ্ছে আর সামরিক সক্ষমতা ও ভূরাজনৈতিক কৌশলে ভারতের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে।
ব্রিটিশ ভারতে হাজার হাজার প্রিন্সলি স্টেইট ছিলো ( প্রিন্সলি স্টেইট আলোচ্য নয় তাই এ ব্যাখ্যায় গেলাম না)। শাসনের প্রয়োজনে ব্রিটিশরা কেন্দ্র থেকে এদের সরাসরি এবং শর্তভিত্তিক চুক্তি করে নিয়েছিলো। সেটাকে সহজ করতে তারা সকল গ্রুপের সমন্বয়ে সীমানা নির্ধারন করার চেষ্টা করেছে। তবে সেই সীমানা গোটা ভারতবর্ষে নির্ধারন করা সম্ভব হয়নি। আবার নির্ধারিত সীমানার অনেক অঞ্চলই উভয়পক্ষ মেনেও নেয়নি। নেহেরুের ভারত, ব্রিটিশদের বিদায়ের পরে বেশিরভাগ প্রিন্সলি স্টেইট জোর করেই দখলে নিয়ে নেয়। মোটা দাগে সিকিম,হায়দ্রাবাদ এবং সর্বশেষ জম্মু- কাশ্মীর,লাদাখ তার উদাহরন। কাশ্মীর তেমনই এক অমীমাংসিত সমস্যা। সেই সমস্যা মেটানোর জাতিসংঘ নির্ধারিত নির্দেশনা হলো গনভোটের মাধ্যমে ঠিক করা কাশ্মীর স্বাধীন হবে নাকি ভারত অথবা পাকিস্তানের সাথে থাকবে। ভারত সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৫ আগষ্ট ২০১৯, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখকে কেন্দ্রের আওতায় নিয়ে আসে যা জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোন বিতর্কিত অঞ্চলের স্বাধীনতা, কোন দেশের সাথে সংযুক্তি, স্বায়ত্তশাসন নির্ধারিত হবে সেই অঞ্চলের ভোটাধিকার প্রাপ্ত প্রাপ্তবয়স্কদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্তিতির গনভোটের মাধ্যমে। এটাই জাতিসংঘের শর্তের সারকথা। ভারত গায়ের জোরে জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখকে একীভূত করে দেখিয়েছে জাতিসংঘের সক্ষমতা কি আছে কি নেই। ইসরাইল হরহামেশা এটা দেখিয়ে চলেছে জন্মের পর থেকেই। দুনিয়াতে সামরিকভাবে সক্ষম দেশে জাতিসংঘের আইন চলে নাই কোনদিনও। কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাক-ভারত। যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের ব্যর্থ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, জাতিসংঘে ইমরান খানের তোলপার করা ভাষন সবকিছুই ধীরে ধীরে স্থিমিত হয়ে পড়ে।
গত মে মাসে নেপাল সীমান্তের কালাপানিতে ভারতের রাস্তা নির্মান নিয়ে নেপাল-ভারত উত্তেজনা চরম আকার ধারন করে। দুই দেশের মধ্যে অসন্তোষ, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং নেপাল সীমান্তে সেনা মোতায়েন পর্যন্ত করে। ভারত বলছে এই অঞ্চল বরাবরই আমার ছিলো নেপাল বলছে সুগৌলি চুক্তি অনুযায়ী এ অঞ্চল নেপালের। এখানেই শেষ নয়, নেপাল তার পার্লামেন্টে কালাপানি, লিপুলেখ,লিপুয়াধুরাকে নিজেদের মানচিত্রে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সর্বসম্মতিক্রমে পার্লামেন্টে বিনা বাধায় অনুমোদন দেয়। এর পাল্টা জবাব হিসেবে ভারত নেপালের মানচিত্রকে অস্বীকার করে আবার নরম সুরে নিজেদের বিবাদ নিজেরা মিটিয়ে নেবার আশাবাদ ব্যক্ত করে। এটা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিমান ভারতের দূর্বল নেপালের কাছে এক ধরনের পরাজয়। নেপাল, ব্রিটিশ পরবর্তী সময়ে ভারতের একটা করদ রাষ্ট্র। অর্থনীতি,পররাষ্ট্রনীতি,সামরিক বিষয়ের সিদ্ধান্ত ছিলো ভারতের হাতে। নেপালি ভাষা সাধারনত হিন্দি অক্ষরে লেখা হয়, নেপালে ভারতীয় মুদ্রা নেপালী মুদ্রার সমান্তরাল ব্যবহার করা যায়, নেপালের হিন্দু জনসংখ্যার আনুপাতিক হারও ভারতের আনুপাতিক হারের চেয়ে বেশি। এর বাইরে ভারতের ধর্মীয় রাজনীতি তথা হিন্দুত্ববাদও নেপালকে কাছে টানতে পারেনি।
ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত শ্রীলংকাও ভারতের প্রভাব বলয়ের বাইরে চলে গেছে। শ্রীলংকার দক্ষিনের বন্দর হাম্বানটোটার লিজ নিয়েছে চায়না, বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে আরাকানের আকিয়াব বন্দরও চায়নার কব্জায় এমনকি আরাকানের সরকার বিদ্রোহী আরাকান আর্মি(এএ)ও চাইনিজ মদদপুষ্ট ।
আরো গভীরে মালদ্বীপের ফিদে ফিনোলোহ দ্বীপ কিনে চায়না সেটাকে কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধি করছে। গুজরাটের পশ্চিমে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরও চায়নার হাতে। চায়না তার এই বন্দরগুলোর নিরাপত্তার জন্য ভারত মহাসাগরে সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মানের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এছাড়া ভারত মহাসাগরে মালাক্কা প্রনালী আর ওদিকে হরমুজপ্রনালীর গুরুত্বের কারনে চীন, ভারত মহাসাগরে কৌশলগত সামরিক অবস্থান নেবেই।
নেপাল – ভারত উত্তেজনা কাটতে না কাটতেই লাদাখের গালওয়ান ভেলিতে চীন ভারত উত্তেজনা, মিটিং এবং সর্বশেষ নিরস্ত্র সংঘাতে ভারতীয় ২৩ জন সেনা নিহত বহু সংখ্যক আহত, ১০ জন চীনের হাতে বন্দী হয়েছে বলে মিডিয়ায় এসেছে।
মোদি সর্বদলীয় মিটিংয়ে বলেছেন, ভারতীয় সেনারা চীনকে চরমশিক্ষা দিয়েছে এবং চীন ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। তিনি পরিষ্কার করেননি কিভাবে চরমশিক্ষা দিলেন এবং চীন অনুপ্রবেশ না করলে ভারতীয় সেনারা কি চীনে অনুপ্রবেশ করে নিহত হয়েছেন কি না। এর আগে রাজনাথ সিং অবশ্য বলেছিলেন চীন ভারতের সীমানায় অনুপ্রবেশ করেছে পরে তিনি তার বক্তব্য থেকে সরে আসেন।
আর এতে চীনের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয় যে ভারতীয় সেনা চীনে অনুপ্রবেশ করে নিহত হয়েছে। এটা ভারত বুঝতে পেরেছে কি না ভারতই জানে।
এখানেও চীন দাবি করছে ভারত চীনের অংশে কয়েকশ কিমি লম্বা রাস্তা নির্মানের প্রজেক্ট শুরু করেছে। ভারত বলছে এই এলাকা ভারতের। গালওয়ান অঞ্চলে সত্যিকারার্থে সঠিকভাবে মেপে সীমানা নির্ধারন সম্ভব না। বিশাল লেক, উচুউচু বরফাবৃত পাহাড়ের জন্যই এটা সম্ভব না।
“১৮৭৮ সালে লাদাখের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন গোলাম রসুল গালওয়ান। ১২ বছর বয়স থেকে বেছে নেন টুরিস্ট গাইডের কাজ। বিদেশী পর্যটক, পর্বতারোহী, অভিযাত্রী দলকে রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিলো তার কাজ। তিব্বত,লাদাখ,হিমালয়ের বরফ ঘেরা বিভিন্ন অঞ্চলের পথ-ঘাট, গিরিপথ ছিলো তার মুখস্ত। ১৮৯২ সালে ব্রিটিশ লর্ড ডানমারো এবং তার দল লাদাখের উপত্যকায় ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পথ হারিয়ে ফেলে যখন মৃত্যুর প্রহর গুনছিলো তখন গোলাম রসুল গালওয়ান সেখান থেকে তাদের সঠিক রাস্তা দেখিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসে। গালওয়ানের প্রতি খুশি হয়ে লর্ড ডানমারো এই জায়গার নাম দেন গালওয়ান ভ্যালী। এছাড়া সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ গডউইনের অভিযানের অভিযাত্রী দলের প্রধান মেজর গডউইনের ওই দলেও ছিলেন গালওয়ান।”
এসব বিতর্কিত অঞ্চলে জাতিসংঘ তেমন কোন ভূমিকা রাখতেও পারেনা, পারেওনি। এ ধরনের সীমানা সাধারনত সামরিক সক্ষমতা দিয়েই নির্ধারিত হয়, ইতিহাস তাই বলে।
“চীন-ভারত সীমানা প্রায় ৩৪৪০ কিমি দীর্ঘ। এই সীমানার অনেক জায়গাই অনির্ধারিত। অনির্ধারিত এইভাবে যে ভারত যেটাকে লাইন অব কন্ট্রোল মনে করে চীন সেটা মানেনা আবার চীন যেটাকে লাইন অব কন্ট্রোল মনে করে ভারত সেটা মানেনা। ফলে একটা কৌশলগত দ্বন্দ্ব রয়েই গেছে।”
ফলে চীন ভারত আলোচনায় এক দেশ আরেক দেশকে ছাড় না দিলে যুদ্ধই কেবল মীমাংসার পথ হবে। আর যুদ্ধের ফলাফল ভারতের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সামরিক শক্তিতে চীন ভারত থেকে অনেক এগিয়ে। এছাড়া যুদ্ধ যদি বেঁধেই যায় তাহলে পাকিস্তান এই দুর্লভ সময়কে কাজে লাগাবেনা, নেপাল তার নয়া মানচিত্রের সীমানা উদ্ধার করবে না এটা ভাবার সুযোগ নেই। ভারতীয় থিংকট্যাংক মনে করে ভারতের একই সাথে দুই ফ্রন্টে (কাশ্মীর- লাদাখ সীমান্তে পাক-চায়না) আলাদা দুটি দেশের সাথে যুদ্ধ করার সক্ষমতা নেই।
“সর্বশেষ ২০ জুন ২০২০, ভারতীয় মিডিয়ার বরাতে জানা গেছে, নেপালও সীমান্তে সেনা বৃদ্ধি করছে এবং যুদ্ধকালীন হেলিপ্যাড তৈরি করছে। এতে আরেকটি অঘোষিত ফ্রন্ট বাড়লো। যা ভারতের দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিলো। তারমানে আমার করা মন্তব্য, নেপালের নতুন মানচিত্রের সীমানা উদ্ধারে এই দুর্লভ সুযোগটি তারা নিতে চায় , সেটা সঠিক হতে যাচ্ছে। “
দক্ষিন এশিয়ায় চীনের বিশ্বস্ত মিত্র পাকিস্তান। পাকিস্তানের জন্মই ভারতের সাথে জাতিগত বিভাজন আর শত্রুতা থেকে।
চীন অবশ্য যুদ্ধের ক্ষতি বাদেই নিজের স্বার্থ আদায়ের আলোচনা অথবা চেষ্টা করবে। প্রযুক্তিগতভাবেও চীন যুদ্ধ ছাড়া ভারতকে বিপদে ফেলার সক্ষমতা রাখে।
ইতিমধ্যে উভয়দেশই যুদ্ধ বিমান ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সীমানার কাছাকাছি মোতায়েন করেছে। যুদ্ধের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি চলছে উভয় দেশেই।
ভারতের এই উত্তর,দক্ষিন,পশ্চিম সংকটের মধ্যে একমাত্র পুবের ঢাকা আছে তার পাশে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বেইজিং ঢাকাকে এলডিসি দেশ হিসেবে ৫১৬১ টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে যা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত ছিলো এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একধরনের বিজয় এটা। এর আগে ৩০৯৫ টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ছিলো। এখন এটা বেড়ে হবে ৮২৫৬ টি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন ৯৭% শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছেন। এই অর্জনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত বলেই মনে হয়েছে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীর এই সংকটকালে বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বিপুল অর্জন এবং সুযোগ। বর্তমানে বাংলাদেশের কেবিনেটে বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী রাজনীতিক আছেন যারা চীনের দেয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাবেন আবার সরকারের বড় বড় পদে থাকা প্রো ইন্ডিয়ান কর্মকর্তারা এই সুযোগের পথে বাঁধা হয়েও দাড়াবেন বলে মনে করা যায়। এটা বুঝতে বাকী নেই বেইজিং ঢাকাকে কাছে পেতেই এই সুযোগ দিয়েছে। অর্থনৈতিক মহামন্দা কাটাতে বাংলাদেশের এখন সকল সুযোগই কাজে লাগানো জরুরী। চীনের বিকল্প সুযোগ ভারতের দেয়ার উপায় নেই। ঢাকা ইতিমধ্যে স্টকএক্সেঞ্জের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে নয়াদিল্লী ও বেইজিংয়ের মধ্যে দরকষাকষির পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে।
অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে ভারতের কোল থেকে চীন সবাইকে বাগিয়ে নিচ্ছে ব্যাপারটি শুধুমাত্র সেটি নয়।
ভারতের রাজনীতি লক্ষ্য করলে একটা বিকারগ্রস্থ দার্শনিক বোধের পাটাতন বিনির্মানের যুদ্ধ চোখে পড়ে। চোখে পড়ে না বলে চোখের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখিয়ে দেয় বলা যায়। জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইকে সেখানে এমনভাবে মহান করা হয়েছে যে ঘৃনার লড়াইয়ে হতাহত বা ক্ষতিগ্রস্তরা এখানে অপ্রাসঙ্গিক এমনকি অপাংক্তেয়; বরং “ঘৃনা আর লড়াইটা” ধর্মীয় বিশ্বাসগত দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল কলকব্জা একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে অন্যান্য সকল মৌলিক কর্ম স্থবির ও বাতিলের দিকে ধাবমান। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি বরাবরই দূর্বলকে পিষে মারার ভয় দেখিয়ে সম্পর্ক গড়তে বাধ্য করার মত। এই নীতি ভারতকে দার্শনিক চিন্তাশীল জায়গা থেকে চীনকে এগিয়ে যেতে সহযোগীতা করেছে। ভারতের সাথে বন্ধুত্ব মানেই হয় তার সাথে মোসায়েবী করতে হবে না হয় সে মোসায়েবী করবে। সম্মান ও অংশীদারী সম্পর্ক কখনোই সম্ভব না। উপমহাদেশের ক্ষুদ্র দেশগুলোর সাথে ভারতের রক্তচক্ষু এবং মধ্যপ্রাচ্য,ইউরোপ-আমেরিকার প্রতি নতজানু নীতি নিয়ে চলেই ভারত এতকাল ভালোই করছিলো।
অপেক্ষাকৃত মন্দের ভালো হিসেবে এ অঞ্চলের দেশগুলো চীনকে গ্রহন করে ইতিমধ্যে তাদের অবস্থান বদলে ফেলার চেষ্টার ভিতরে আছে। তবে নেপাল নিজেকে পুরোটাই বদলে নিয়েছে আপাতদৃষ্টিতে । ভারত আজ ঘরে বাইরে সর্বত্রই নাকাল।
ভারতীয় আনন্দ বাজার পত্রিকা চীনের স্বার্থে বাংলাদেশকে দেয়া শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারকে চীনের দেয়া খয়রাতি হিসেবে উপস্থাপন করছে।
বাণিজ্যিক লগ্নি আর খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা নতুন নয় চিনের। লাদাখে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত-সংঘর্ষে উত্তাপ ছড়ানোর পরে ফের নতুন উদ্যমে সে কাজে নেমেছে বেজিং। শুক্রবার বাংলাদেশের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে তারা।
-আনন্দবাজার।২০জুন,২০২০।
এতে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি কি সেটাও পরিষ্কার হয়ে ধরা দিয়েছে। ভারতের জনপ্রিয় আনন্দবাজারের এমন আপত্তিকর ও অরুচিকর বক্তব্যই তাদের সম্পর্কে করা আমার মন্তব্যগুলোকে সত্যায়িত করেছে।