তোপের মুখে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত
Advertisements

মুম্বাইকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সাথে তুলনা করে শিবসেনার তোপের মুখে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত।

আবারও ভারতে সংবাদ শিরোনামে বলিউড। কয়েক সপ্তাহ ধরে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু – তার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মাদক যোগের সরগরম থাকার পরে বুধবার সকাল থেকে ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোতে শুরু হয়েছে আরেক বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতকে নিয়ে মাতামাতি।

কঙ্গনা রানাওয়াত আর মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন শিবসেনার মধ্যে টুইট যুদ্ধটা অবশ্য কদিন ধরেই চলছিল, যা বুধবার পৌঁছায় চরমে – যখন মিজ রানাওয়াত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ‘তুই তোকারি’ করে একটি ভিডিও টুইট করেন।

হিন্দি চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রীকে কেন্দ্র করে সেই বলিউডি স্ক্রিপ্টে কী নেই — পাকিস্তান, গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়া, কাশ্মীর, অযোধ্যা, রামমন্দির, বাবর, মুম্বাই কর্পোরেশন, রাজনীতি – সবই হাজির।

ক্লাইম্যাক্সটা শুরু হয় বুধবার সকালে, যখন বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে মুম্বাই কর্পোরেশনের কর্মীরা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতের বাড়ি ও লাগোয়া অফিস ভাঙ্গতে শুরু করে।

সেই সময়ে মিজ রানাওয়াত ছিলেন হিমাচল প্রদেশ থেকে মুম্বাই আসার পথে।

বাড়ি ভেঙে ফেলার পর কঙ্গনা রানাওয়াতের টুইট।

বাড়ি ভেঙে ফেলার পর কঙ্গনা রানাওয়াতের টুইট।

ড়ি ভাঙ্গার ছবি টুইট করে তিনি একের পর এক মন্তব্য করতে থাকেন যে ওই বাড়ি তার কাছে রামমন্দিরের সমান — সেই বাড়ি কীভাবে ভাঙ্গতে এসেছে বাবরের সেনাবাহিনী … এটা কি পাকিস্তান? গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেল বলে তিনি একটি হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করেন।

বাড়ি ভাঙ্গার কাজের ওপর বম্বে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের অনেক পরে বাসভবনে ফেরেন মিজ রানাওয়াত এবং প্রায় ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাওয়া ফ্ল্যাটের ভিডিও টুইট করেন।

তার পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও টুইট করেন তিনি, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে তুই-তোকারি করে তিনি বলেন, “উদ্ভব ঠাকরে, তুই কি ভাবছিস ফিল্ম মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আমার বাড়ি ভেঙ্গে খুব বড় বদলা নেওয়া হল !! আজ আমার বাড়ি ভেঙ্গেছে … এরপর তোর অহংকার ভাঙ্গবে … শুধু সময়ের অপেক্ষা।”

এর পরেই তিনি হঠাৎই কাশ্মীরি পণ্ডিতদের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন এখন তিনি অনুভব করতে পারছেন যে কাশ্মীরের পণ্ডিতদের অবস্থাটা কী।

তার সঙ্গে মহারাষ্ট্র সরকার এবং মুম্বাই কর্পোরেশন – তথা এই দুটিরই ক্ষমতায় থাকা শিবসেনা দলের টুইট যুদ্ধটা শুরুও হয়েছিল এই কাশ্মীর প্রসঙ্গে, আরও নির্দিষ্টভাবে বললে, প্রসঙ্গটা ছিল পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর – যাকে ভারতে ‘পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর’ বা ‘পিওকে’ বলেই অভিহিত করেন বেশীরভাগ মানুষ।

এক ভিডিও টুইটে তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে তুই-তোকারি করেন।

এক ভিডিও টুইটে তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে তুই-তোকারি করেন।

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্ত কেন মুম্বাই পুলিশ ঠিক মতো করে নি – সেই প্রশ্ন তুলে মুম্বাই শহরকে ‘পিওকে’র সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।

এরপরেই শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছিলেন অভিনেত্রী যে মুম্বাই শহরে থেকেই রোজগার করেন তাকে ‘পিওকে’র সঙ্গে কী করে তুলনা করেন?

মহারাষ্ট্রের আত্মাভিমান নিয়ে শিবসেনা দল সবসময়েই সচেতন। তারা হুমকিও দেয় যে মিজ রানাওয়াত শহরে ফিরলে বিমানবন্দরেই তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হবে।

তারপরেই কিছুটা অদ্ভুতভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার অভিনেত্রীর জন্য বিশেষ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দলের ব্যবস্থা করে।

তার মধ্যেই বাড়িতে বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত নোটিস দেয় কর্পোরেশন – যেটা নিয়ন্ত্রণ করে শিবসেনা।

ভেঙে ফেলার পর কঙ্গনা রানাউতের বাড়ির অবস্থা:

মুম্বাইয়ের মেয়র কিশোরী পেডনেকার সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলছিলেন, “কঙ্গনা নামের এই মেয়েটি মহারাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছে, মুম্বাই পুলিশকে হুমকি দিয়েছে — মুম্বাই শহরকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেছে, বাবরের সেনারা তার বাড়ি ভাঙ্গছে বলে উল্লেখ করেছে। সে তো নিজেই শত্রু তৈরি করেছে।”

তার বাড়ি ভাঙ্গার কারণ সম্বন্ধে মিসেস পেডনেকার বলেন, ঐ বেআইনি নির্মাণ সম্পর্কে কর্পোরেশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল — খতিয়ে দেখে তারপর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কঙ্গনা রানাওয়াত আর মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারের বিরোধের পিছনে আসলে রাজনীতিই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

শিবসেনা আর বিজেপি দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গী ছিল — কিন্তু কিছুদিন আগে বিজেপিকে বাদ দিয়ে কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে শিবসেনা সরকার তৈরি করে।

তারপর থেকে দুই প্রাক্তন জোটসঙ্গীর কেউই অন্যপক্ষকে হেনস্থা করার সুযোগ ছাড়ে না।

বিবিসি-র মারাঠি বিভাগের সিনিয়ার সাংবাদিক ময়ূরেশ কোন্নুর ব্যাখ্যা করছিলেন, “শিবসেনা তো প্রকাশ্যেই বলছে যে কঙ্গনা রানাওয়াতকে আসলে দিল্লি থেকে বিজেপি সমর্থন যোগাচ্ছে। যেভাবে মুম্বাইকে ‘পিওকে’-র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তিনি, বা হঠাৎ করেই তাকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেয়া – সবই সেকথাই প্রমাণ করে বলে শিবসেনা নেতাদের দাবী।”

“তবে বিজেপি হোক বা শিবসেনা – দুই পক্ষই এই বিবাদ থেকে লাভবান হবে। শিবসেনা তো সবসময়েই মারাঠি আত্মাভিমানের কথা বলে — তাই মহারাষ্ট্র নিয়ে খারাপ ভাষায় যিনি মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে নেমেছে শিবসেনা। অন্যদিকে শিবসেনার বিরোধিতা করে বিজেপিও নিজের রাজনৈতিক লাভ ওঠাতে চাইছে,” বলছিলেন ময়ূরেশ কোন্নুর।

মুম্বাই বা মহারাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলির এইসব খবরের দিকে বিশেষ মন নেই। ময়ূরেশের কথায়, “লোকে এখন চিন্তিত করোনা মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে আবারও বাড়ছে, সেটা। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার পরে সবে মাত্র দোকান-বাজার খুলতে শুরু করেছে, এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির কী হবে, সেই সব নিয়েই তাদের চিন্তা বেশি।

সূত্রঃবিবিসি

Advertisements