ইরাকের সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের কমান্ডার আবারো সেদেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের সেনাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই ইরাক ত্যাগের কথা রয়েছে। গতমাসে ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাসেম আল আরাজি চলতি বছরের শেষ নাগাদ সেদেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে বলে খবর দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফরে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, তার দেশে মার্কিন সেনা উপস্থিতির আর প্রয়োজন নেই এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীর উপস্থিতি ছাড়াই ইরাকের সেনাবাহিনী নিজ দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম। তিনি ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং দুপক্ষই সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। আমেরিকার সঙ্গে ওই সমঝোতা অনুযায়ী চলতি মাসের শেষ নাগাদ ইরাক থেকে অবশ্যই সব মার্কিন সেনাদের চলে যেতে হবে।
সম্প্রতি পাশ্চাত্য ও সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনারা সেদেশে থেকে যাবে। এ দাবির প্রতিক্রিয়ায় ইরাকের সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের কমান্ডার বলেছেন, ওই সময়ের মধ্যে মার্কিন সেনাদেরকে অবশ্যই ইরাক ছাড়তে হবে এবং ইরাকে তাদের থেকে যাওয়া নিয়ে কোনো কোনো গণমাধ্যম যে খবর দিয়েছে তা সঠিক নয়। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাগদাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে সে অনুযায়ী মার্কিন সেনারা ইরাক ছেড়ে চলে যাবে তবে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়ার জন্য কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞ ইরাকে মোতায়েন থাকবে।
সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হলেও ধারণা করা হচ্ছে আমেরিকা শেষ পর্যন্ত ইরাক থেকে সব সেনা প্রত্যাহার নাও করতে পারে বরং তারা দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের দমনের অজুহাতে এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার নামে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা মোতায়েন রাখতে পারে। এ কারণে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন, সম্প্রতি ইরাকে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার যে ঘটনা ঘটেছে সেটা পরিকল্পিতভাবে আমেরিকাই করিয়েছে এবং এটাকে অজুহাত করে আমেরিকা তাদের দমনের নামে ইরাকে সেনা মোতায়েন রাখতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সন্ত্রাসী বাহিনী সেন্টকমের কমান্ডার ফ্রান্ক ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতা হলেও ওয়াশিংটন অন্তত আড়াই হাজার সেনা সেদেশে মোতায়েন রাখবে।
আমেরিকা এমন সময় ইরাকে তাদের সেনা মোতায়েন রাখার কথা বলছে যখন ইরাকের জনগণ ও বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ সেদেশ থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছে। ইরাকের পার্লামেন্টেও বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে। ইরাকের নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিশাম খাজআলী ইরাকে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, এটাকে অজুহাত করে আমেরিকা ইরাকে সেনা মোতায়েন রাখতে চায়। ইরাকে মার্কিন বিরোধী আন নুজাবা ফ্রন্টের উপমহাসচিব নাসরুল শামারি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে মার্কিন সেনারা ইরাক না ছাড়লে তাদেরকে দখলদার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন সেনারা শেষ পর্যন্ত আদৌ সেনা প্রত্যাহার করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ক্রমেই ভনীভূত হচ্ছে।
পার্সটুডে