ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের
Advertisements

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আরও একটি নতুন কারণ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী। তারা বলছেন, ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের অংশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ একটি জারক রস কমে গেলে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই জারক রস বা এনজাইমের নাম ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস, সংক্ষেপে আইএপি।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে আইএপির পরিমাণ কমে যায়, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেড়ে যায়। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের ভিজিটিং অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের সাবেক সহকারী অধ্যাপক। ‘ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস ডেফিসিয়েন্সি ইনক্রিজেস দ্য রিস্ক অব ডায়াবেটিস’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রবন্ধ সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আবিষ্কারের তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিল এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইএপি কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ।

তবে আবিষ্কারের এ বিষয় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

ডা. মধু এস মালো সাংবাদিকদের বলেন, গত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০ সাল) ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সি ৫৭৪ জন মানুষের ওপর গবেষণা করে ডায়াবেটিসের এই নতুন কারণ সম্পর্কে জানা গেছে।

তিনি বলেন, আইপিএ স্বল্পতায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি-যারা এমন স্বল্পতায় ভোগেন না, তাদের চেয়ে অনেক বেশি হয়।

যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে বেড়েছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিল, তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এর মাত্রা বেশি হলে স্থূল বা মোটা মানুষেরও ডায়াবেটিস হয় না।

তিনি জানান, স্টুল (মল) পরীক্ষা করে, কারও শরীরে আইপিএ কম আছে কিনা-তা ৩ মিনিটের মধ্যে জানা যাবে। এনজাইমটির স্বল্পতার কারণে যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ডায়াবেটিস মুক্ত থাকতে পারবেন।

স্টুল পরীক্ষার জন্য মাঠপর্যায়ে তার প্রস্তুতকৃত কিট ব্যবহারের জন্য নীতিনির্ধারক ও সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন এই গবেষক।

সংবাদ সম্মেলনে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. একে আজাদ খান বলেন, যাদের আইএপি কমে যায়, জেনেটিক কারণ, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে হয় ডায়াবেটিস।

তবে ইনটেস্টিনাল (অন্ত্রে) অ্যালকাইন ফসফেট (আইপিএ) নামক একটি এনজাইমের ঘাটতিও ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।

এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও বড় কাজ করতে সক্ষম। আমি মনে করি, ‘এ আবিষ্কার হবে যুগান্তকারী, যা ডায়াবেটিক প্রতিরোধে বড় অবদান রাখবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরেক গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সালেকুল ইসলাম জানান, যাদের দেহে এ এনজাইমের পরিমাণ কম তাদের এনজাইম দেওয়া সম্ভব হলে ডায়বেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে-হলুদ, জিরা ও লাল ক্যাপসিকাম খেলে আইপিএ অ্যানজাইম বাড়ে। তবে এখনো মানব দেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয়নি।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিল বারডেম, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক।

২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে বর্তমানে ৫৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর তিন-চতুর্থাংশ বাস করে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক সমিতির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে এ রোগীর সংখ্যা ৮৪ লাখের বেশি।

সূত্রঃ যুগান্তর

Advertisements