টেলিকম খাতে
Advertisements

টেলিযোগাযোগ খাতেও ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক কল পরিচালনায় নিয়োজিত আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) অপারেটরদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা স্থানান্তরের অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই অর্থ গ্রহণ করা হয়। এসব কোম্পানির মালিকানা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে জড়িত। অপারেটরদের বাধ্যতামূলকভাবে নির্দিষ্ট হারে তার প্রতিষ্ঠানে অর্থ পাঠাতে বলা হয়, যা ‘মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এক্সপেন্স’ খাতে নেয়া হলেও এর কোনো সেবা বা ব্যবহার সুনির্দিষ্ট নয়।

২০০৮ সালের পর টেলিকম খাত বেসরকারি খাতে খুলে দেওয়া হলে, তৎকালীন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে মিলে ২৩টি অপারেটরের মধ্যে ১৮টি নিয়ে আইজিডব্লিউ অপারেটর তৈরি করেন সালমান এফ রহমান। এখানে তিনি একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজের নামে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

আইজিডব্লিউ অপারেটরদের দুইভাগে ভাগ করা হয়—টিয়ার-১ এবং টিয়ার-২। টিয়ার-২-এ থাকা সাতটি অপারেটরের নিয়ন্ত্রণও তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই সাতটি প্রতিষ্ঠান হলো: ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স, রুটস কমিউনিকেশন্স, গ্লোবাল ভয়েস, মীর টেলিকম, বাংলা ট্র্যাক ও নভো টেলিকম।

শুধু ব্যবসায়িক প্রভাব নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায়ও আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এবং আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক লাইসেন্স পান। এসব লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

ডিজিকন টেলিকম লাইসেন্স পায় ২০১২ সালে, শেখ হাসিনার ভাতিজা ও সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসের সুপারিশে। কিন্তু ২০১৩ সালের জুলাইয়ে রাজস্ব না দেওয়ায় বিটিআরসি প্রতিষ্ঠানটি ব্লক করে দেয়।

রুটস কমিউনিকেশনের মালিকানা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরার। গ্লোবাল ভয়েস টেলিকমে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান রহমান জড়িত।

আইজিডব্লিউ খাতে টিয়ার-১ এবং টিয়ার-২ অপারেটরের রাজস্ব বণ্টনের অনুপাত ১:১.৯০ হওয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ পায় টিয়ার-২-এর অপারেটররা। গত ৯ বছরে প্রতিটি টিয়ার-২ অপারেটর গড়ে ৩৮০ কোটি টাকা আয় করে, যেখানে নন-আইওএস অপারেটরদের আয় অর্ধেকেরও কম, মাত্র ১৯৬ কোটি টাকা। এর ফলে ছোট অপারেটররা বিপাকে পড়ে, অনেকে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

এই খাতে প্রতি মাসে অপারেটরদের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ অর্থ সংগ্রহ করা হতো, যার মধ্যে ১০ শতাংশ ‘নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ খাতে কেটে নেওয়া হতো। অথচ কোথায় কীভাবে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই।

এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অভিযোগ দিয়েছে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানিয়েছেন, “গেটওয়েতে টাকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ছিল, যেটি তদন্তের দাবি রাখে।”

সব মিলিয়ে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের টেলিকম খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

Advertisements