চীন দক্ষিণ এশিয়ায় গুছিয়ে বসতে কত দূরে
Advertisements

দক্ষিণ এশিয়ায় গুছিয়ে এক “ও-সার্কেল” তৈরি করে এবার সম্ভবত ঘিরে বসতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে চীন। আর একাজে পাঁচ রাষ্ট্রের মধ্যে চীন সবচেয়ে কাছে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। আর এর প্রতিক্রিয়ায়, গ্লোবাল সম্ভাব্য ঘটনার কেন্দ্র ‘সাউথ চায়না সি’ নয়, বঙ্গোপসাগর হয়ে উঠার সম্ভাবনা বেড়ে গেল! এতে আমাদের আঙিনা কী যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠবে? সেটা যাই হোক, ঘটনা যুদ্ধের দিকে যদি যায়ও সেই সম্ভাব্য যুদ্ধ হতে পারে – ১। যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে কারো পলায়ন, ২। বলল যুদ্ধ করবে কিন্তু পৌছে গেল সবচেয়ে বড় এক আপোষে এমন হতে পারে ৩। অথবা বোকার মত যুদ্ধ কী তা বুঝাবুঝির আগেই সত্যিকার যুদ্ধ লাগিয়ে ফেলল। ৪। যুদ্ধের প্রশ্নে বাইডেন নিজেকে ট্রাম্পের চেয়েও যেন নাদান প্রমাণ করতেই চাইছে। হয়ত সেকারণেই জাপান বাইডেনকে ভুলপাঠ করেই পা ফেলছে। এভাবেই “বোকার যুদ্ধটা” অপ্রস্তুতে হঠাত শুরু হয়ে যেতেও পারে।

আমার এই কথাগুলো বুঝবার সবচেয়ে ভাল তুল্য আর প্রতীকী ইঙ্গিত হল – টিকা! মানে আগামি মাসের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে নুন্যতম দুই কোটি টিকার সংগ্রহ পেতে যাচ্ছে সেদিকে তাকালেই বুঝা যাবে!

তাসখন্দ থেকে ঘটনা শুরু হচ্ছে কেনঃ

মধ্য এশিয়ায় দেশ উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ। এই তাসখন্দে গত ১৫-১৬ জুলাই এক বিশাল সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সম্মেলনের নেপথ্যে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর সামনে তাসখন্দ; যারা চেয়েছিল এশিয়ায় আফগানিস্তানের পরিবর্তনকে সামনে রেখে একটা আঞ্চলিক সম্মেলন। ‘মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া : আঞ্চলিক যোগাযোগ, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে, এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি আর বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আর ইইউ প্রতিনিধি মিলিয়ে [According to EURACTIV, the EU foreign affairs chief Josep Borrell will lead a strong delegation.] প্রায় ৪০ দেশের প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়ে ছিলেন। আমেরিকার নিচু লেভেলের প্রতিনিধিও এতে উপস্থিত ছিলেন [US representatives at a lower level]। কিন্তু মিটিংয়ের আসল গুরুত্ব অন্তত আমাদের দিক থেকে তা সরে যায় অন্য দিকে – তাসখন্দ-এর মূল বৈঠক ফেলে ওর সাইডলাইন বৈঠকে।

কিন্তু মূল বৈঠক নয়, সাইড লাইনের আলাপই যেন মুখ্যঃ
কিন্তু এসব কিছুকে ছাপিয়ে দেশের মিডিয়ায় যা হেডলাইন সে দিক তাকিয়ে যদি বলি তা হল – ঐ সম্মেলনের সাইড লাইনে ছিল আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে একই দিনে বৈঠকের খবর। যেমন কেউ শিরোনাম করেছেন, “একই দিনে ভারত-চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে মোমেন”।

সাইড লাইনের আলাপই মুখ্য – এমন হওয়ার পেছনে অন্য কারণও ছিল। যেমন, কয়েক দিন ধরে দেশে আরেকটা খবর খুব আলোচ্য হয়ে উঠেছিল। বাংলা ভয়েজ অফ আমেরিকায় ছাপানো এক রিপোর্ট – “বিকল্প সার্ক গঠন করতে উৎসাহী চীন” অথবা টাইমস অব ইন্ডিয়ার তাদের ঈর্ষায় চোখ টাটানো ও আক্ষেপ করা নিউজ : “চীনা-সাউথ এশিয়ান টিকা কূটনীতির জোটের পরে চীন এখন দারিদ্র্য দূরীকরণের ‘উন্নয়ন কেন্দ্র’ আনতে চায় [After vaxplomacy in Indian neighborhood, China now brings in development Centre]”। উপরের এ’দুই রিপোর্টে এরা আকার-ইঙ্গিতে বলেছে যে, চীনের নেতৃত্বে ভারতকে বাদ রেখে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও আফগানিস্তানকে নিয়ে এ’জোট [এক ছয় দেশীয় জোট] হতে যাচ্ছে, যাকে কেউ এটাকে চীনের “উন্নয়ন সেন্টার” গঠন করা বলছেন।

কোন বাণিজ্য জোট সফল হবার কিছু সুত্রঃ
এমনিতে বিভিন্ন সময় দুনিয়াতে নানান আঞ্চলিক জোট গঠন হতে আমরা দেখে থাকি। সেসবের মধ্যে বাস্তবে খুবই সক্রিয় ও সচল হতে দেখা যায় অল্প কিছু উদ্যোগকেই; বিশেষ করে যেখানে কিছু গঠন-শর্ত মেনে চলা হয়। যেমন জোটে একটা বড় অর্থনীতির দেশ, সাথে অন্যান্যদেরকে যার একটা ভালই বিনিয়োগ দেয়ার সক্ষমতা থাকে – অন্তত এমন একটা দেশ থাকতে হয়। আর আগাম মেনে নিতে হয় যে, সদস্য দেশগুলো এ’জোটে যোগ দিবে তখনই, যখন ছোট-বড় সদস্য প্রত্যেকেরই বাণিজ্যিক লাভালাভের দিকটি খেয়াল রেখে তা সাজানো হবে। আর এমনটা বাস্তব করতে পারার কমন ফর্মুলা হল – বড় অর্থনীতির দেশ বলতে ধরা যাক চীন, যার অন্যকে শেয়ার দেয়ার মতো নিজের বড় বাজার (জনসংখ্যা ১৪৩ কোটি) আছে আর সাথে আছে অন্যকে বিপুল বিনিয়োগ দেয়ার সক্ষমতা; অবকাঠামো আর ‘ডাইরেক্ট বিদেশী [FDI] শিল্প বিনিয়োগ’- দু’টাই। ফলে শুরুতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছোট অর্থনীতির সদস্য দেশগুলো মুখ্যত চীনে রফতানির সুযোগ পাবে, সাথে চীনা বিনিয়োগও পাবে। এতে পরের দিকে ক্রমেই হাই-এন্ড বা হাইটেকের পণ্য চীন থেকে আমদানি আর লো-এন্ড বা লো-টেক পণ্য চীনে রফতানি এই ভিত্তিতে ওই জোটের মধ্যে খুবই সক্রিয় একটি উভয়মুখী বাণিজ্য চালু হতে দেখা যেতে পারে।

এসব পরিকল্পনামাফিক চললে, মূলকথা- সবারই এতে কিছু লাভের দিক থাকতে হবে, যে দিকটা গুরুত্বপুর্ণভাবে খেয়াল রাখতে হবে; মানে সুযোগ পেলে অল্পতেই অন্যের বিরুদ্ধে ‘লোভী’ হয়ে ওঠা যাবে না; লং টার্ম ভাবতে হবে। চীনারা এটাকেই “উইন-উইন” সিচুয়েশন বলে বুঝায়ে থাকে। আর তা হলেই এটা মূলত এক গ্লোবাল বাণিজ্যের আঞ্চলিক রূপ বা ভার্সন হয়ে উঠতে পারে। ফলে এখানে অন্যকে বাজার যেমন ছাড়তে হবে, তেমনি আবার অন্যের বাজারে ঢোকার সুযোগও নেয়া যাবে। এককথায় সবাইকেই নিজ নিজ বাজার অন্যের সাথে শেয়ার করতে রেডি থাকতে হবে। তাই নিয়মিত নিজেদের মধ্যে প্রচুর কথা বলতে হবে, বলার ব্যবস্থা রাখতে হবে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতার নানান টেকনিক্যাল কমিটি ও উপযুক্ত প্রফেশনাল লোকজন থাকতে হবে, যাতে সদস্য-দেশ দুইয়ের পরস্পরের সংঘাতপুর্ণ স্বার্থ উদয় হলে এর সুবিধা-অসুবিধার সমাধান করে দেয়ার রাস্তা বের করার যোগ্যতা থাকতে হবে। কোনোভাবে কোথাও একপক্ষীয় লাভের কথা ভেবে থাকলে এমন জোট দাঁড়াবেই না। আর বলাবাহুল্য, “জাতিবাদী রক্ষণশীল” অর্থনীতির কোনো দেশ এর সদস্য থাকতে পারবে না। মনে রাখতে হবে জাতিবাদী অর্থনীতি আর (আঞ্চলিক বা গ্লোবাল) বাণিজ্য জোটের ধারণা পরস্পরবিরোধী। মানে “আমার দেশ যা যা পণ্য ভোগ-ব্যবহার করে এমন সব ভোগ্যপণ্য আমি নিজেই উৎপাদন করে নিব” অথবা “বিদেশী পণ্য হারাম” ধরনের জাতবাদী চিন্তা এখানে মনের গোপনে পুষে রাখাও নিষিদ্ধ। বরং বাজার দিব আর বাজার নিব এটাই হবে এর নীতি।

গ্লোবাল বা আঞ্চলিক বাণিজ্য জোটে জাতিবাদি অর্থনীতি অচলঃ
ভারত অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজ বাজার সংরক্ষণবাদী এমন পুরনো চিন্তার এক কট্টর জাতিবাদী দেশ। জাতিবাদ মানে যেমন হিন্দুত্ববাদ দিয়ে রাজনীতি করা খুব আরামের। এতে মানুষের সেন্টিমেন্ট আবেগকে কচলিয়ে উন্মত্ত করে তার ভোটটা নিজের বাক্সে ঢুকানো যায় বলে জাতিবাদ ক্ষতিকর তা বুঝলেও কেউ ছাড়তে চায় না। হিন্দুত্ববাদ ধরনের সব ধর্মীয় জাতিবাদের এত ছড়াছড়ি একারণে। আসলে একারণেই সব জাতিবাদী চিন্তাই বলতে চায়, “আমি কোনো বাণিজ্য জোটে বিশ্বাসী নই”। কিন্তু আবার ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারও বেশ বড় (১৩০ কোটির), তাই ভারত নিজের এই ১৩০ কোটির বাজারের লোভ দেখিয়ে সে কোন বাণিজ্য জোটের ভিতর দামি ও আকর্ষণীয় সদস্য হয়ে ঢুকতে চেয়ে থাকে। আর ভেতরে ঢুকে সে চেষ্টা করতে থাকে কেবল অন্যদের থেকে বাজার সুবিধা নিয়ে চলবে – এই হল ভারতের আদিম খাসলত। এ’কারণে ভারত যে জোটে থাকে সে জোট ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হবেই। এর বিপরীতে এখনকার চীন বিকশিত বলে এর অন্যকে দেয়ার মতো সুবিধা ও সক্ষমতা বেশি। কিন্তু সাবধান, এটাকে চীন ভাল আর ভারত খারাপ বলে চালায় দেয়া বিরাট ভুল হবে। এমনকি চীনের উদারতা বলে বুঝাও ভুল হবে, বরং এটা চীনের অর্থনীতির শক্তি ও সক্ষমতা এখন হয়েছে তাই সে দিতে পারে – এভাবে অবজেকটিভ ভাবে বুঝতে হবে। কালকে চীন এমন নাও থাকতে পারে। চীন মানেই সে ভাল দেশ – এটা খুবই ভিত্তিহীন ও ভুল পদ্ধতির চিন্তা। চীনের অর্থনীতির উত্থানটা এখন এই লেভেলে উঠেছে যে ওর পক্ষে এখন অন্য পার্টনারদের দিকেও তাকালেই সেটাই হবে চীনের সমৃদ্ধির সঠিক পথ। তাই সে অবলীলায় আমাদের মত দেশকে বাজার ছাড় দিতে পারে, বিনিয়োগও দিতে পারে।

এছাড়া আরেক নতুন আইডিয়া, ভ্যালু-অ্যাডিশন শেয়ার প্রডাক্টও – মানে জোটের সব সদস্যই একটা পণ্য উতপাদনে কিছু না কিছু শ্রম জোগাবে – এমন শেয়ার করা ভ্যালু বা শ্রমে উৎপাদিত পণ্য- এমন উৎপাদন সম্পর্কও চালু করতে চীন সক্ষম। আর চীনের সে অফারের সুবিধা নিয়ে সবাই বাজারে প্রবেশ করতে চাইলে তাতে চীনসহ সবারই লাভ বলে তা দিতে আগ্রহী হয়। RECP সে ধরণের এক জোট।

টাইমস অব ইন্ডিয়া তার রিপোর্টে – চীনের বর্তমান এই ছয়-দেশীয় জোট বা ‘উন্নয়ন কেন্দ্র’ গঠনের ব্যাপারটাকে মুখস্তের মত পাল্টা – ‘ভারতের সবই ভাল বা আমরাই শ্রেষ্ঠ বা আমরা বিরাট কিছু’- টাইপের মন্তব্য ঢুকিয়েছে তাদের রিপোর্টে। যেমন সে লিখেছে “এ অঞ্চলে ভারতীয় আধিপত্য [to challenge ‘Indian dominance’ in the region] আছে”। চীন সেটা নষ্ট করতেই এ’কাজে এসেছে। এ’ছাড়া আরো বলেছে, ভারত এই ছয় দেশের সবার সাথে আগে থেকেই ‘টপ উন্নয়ন পার্টনার হয়েই আছে’ [However, India remains top development partner for Bangladesh, Bhutan, Nepal and Sri Lanka and has extended grants and soft loans for various projects……] ফলে ভারত তাদেরকে ‘বিপুল অনুদান’ তো বটেই সাথে অবকাঠামো ‘সফট লোনও’ নাকি দিয়ে থাকে। তা থাক। আসলে এরা এমনই স্বপ্নের পোলাও খাওয়া লোক, এরা খেতে থাকুক অসুবিধা কী!

কিন্তু বাস্তবত ভারতের না নিজ বাজার ছাড় দেয়ার সক্ষমতা আছে, না পার্টনারদেরকে অবকাঠামো ঋণ বা বিনিয়োগ দেয়ার সক্ষমতা। বরং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলছে, ভারত আমেরিকার কোলে চড়ে বসে ওয়্যার অন টেররের উছিলায় আর সর্বোপরি, আমেরিকার ‘চায়না ঠেকানো’ ঠিকা নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। কব্জায় নিয়েছে। আমেরিকা ১/১১ এ আমাদেরকে দখলে নিয়ে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল, তাই। এটা ভারতের নিজের কোন ক্রেডিট নয়, তার অর্থনীতির কোন উন্নতি বা সক্ষমতা বেড়ে যাবার কারণে ভারত আমাদেরকে এমন কব্জায় নিতে পারে নাই। আর এই সুযোগে সে বিনা পয়সায় বাংলাদেশ থেকে সমস্ত করিডোর সুবিধা নিয়ে তা ভোগ করা শুরু করেছে। ‘সমস্ত করিডোর’ বলতে মাটির নিচে পাইপ লাইনে, মাটির উপরে সড়কপথে, আকাশে ও পানিপথ ও বন্দরে, সব কিছুতে এবং তা বিনা পয়সায়। এই হলো বাস্তবতা।

তবে এবারের এক কোভিডের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’য়ে সে যে কী পরিমাণে অক্ষম ও উদাম, তা একেবারে উন্মোচিত হয়ে গেছে। নিজ মানুষদের সবার জন্য টিকা উৎপাদন ক্ষমতাই যার নাই, বা টিকা কিনবার অর্থের সংস্থান ক্ষমতা নেই, সে বাংলাদেশেসহ সারা দক্ষিণ এশিয়ায় টিকা সরবরাহকারী টিকা কূটনীতিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আর নিজের সক্ষম দাবি করে এসেছে। আর এখন খোদ আমেরিকার কাছে ভিক্ষার হাত পেতেছে। গত দুমাসেই জয়শঙ্করের প্রায় সপ্তাহবাপী আমেরিকার সফর থেকে নিট লাভালাভ হল – ভিক্ষা অনুদানে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফ্রি টিকা ও স্বাস্থ্য উপকরণ লাভ করেছে ভারত।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাংলাদেশবিরোধী রিপোর্ট নিয়মিত লিখে চলেছেন এর রিপোর্টার দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি নাকি ওই পত্রিকার ডিপ্লোম্যাটিক এডিটর, এটা তার দাবি। যদিও তার লেখার কোয়ালিটি তা বলে না। যা হোক, এর আগে তখনো বেক্সিমকো কোম্পানির প্ররোচনা প্রলোভনে পা দিয়ে ভারতে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনার কমিশনের লোভ সরকারকে দেখানো শুরু হয়নি – কিন্তু সেসময় আমরা চীনা টিকার তৃতীয় পর্যায়ের টেস্টে অংশগ্রহণের অফার পেয়েছি আর ঐ টেস্ট সফল হলে যার বিনিময়ে আমরা নিজেরাও টিকা উৎপাদনের লাইসেন্স পাবো। সে সময় এই দীপাঞ্জন লিখেছিলেন ‘চীন বাংলাদেশকে গিনিপিগ বানাতে চায় বলে ওই টিকা নিয়ে আসছে [China in a startling move plans to use the population of Bangladesh as ‘guinea pigs’ to conduct Phase III trials of its Covid vaccine.]।’ অথচ এর কোন প্রমাণ বা কেন তিনি গিনিপিগ বলছেন এর কোন সাফাই দেন নাই। আসলে টিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রথম দুই পর্যায় হল ওর আসল পরীক্ষা। ঐ দু’টা পার হওয়ার পরই মাস পাবলিকের উপর র‌্যানডম ব্যবহার বা গ্রহণকারীদের ওপর এর প্রয়োগ প্রতিক্রিয়া জানার ও প্রয়োজনীয় কারেকশনের জন্য তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার স্তরে যাওয়া হয়। অর্থাৎ তথ্য-প্রমাণ কিছু না হাজির করে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করাই দীপাঞ্জনদের ‘যোগ্যতা’, যেটা জার্নালিজমই নয়। অথচ তারা সে কাজই করে চলেছেন।

তবুও চীন ঠিক কী করতে চায় তা অনেক অস্পষ্টঃ
গত এপ্রিলে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশ– বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও আফগানিস্তান আর সাথে চীনসহ মোট ছয়টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই প্রথম এই জোট গঠনের ধারণাটি তুলে ধরেন।
From REUTERS news:
– China hosts video-conference with 5 South Asian nations
– India was invited to meet, China says, but didn’t attend
– India-China tensions high over Himalayan border dispute

এটা সেই সময়, বিশেষ করে ভারত যখন টাকা নিয়েও আমাদের দেশের পাওনা টিকা দেয়া বন্ধ করে দিল আর অতিকষ্টে হাসিনা সরকার ফিরে চীনকে আমাদের টিকা সরবরাহের উৎস হতে রাজি করাতে পেরেছিল তখনই চীন এই জোটের ধারণাটা হাজির করেছিল। বলেছিল, চীন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি কমন টিকা স্টোরেজ গঠন করতে চায়, যেখান থেকে এ অঞ্চলে সবাই টিকা সংগ্রহ করতে পারবে। তাই আরো এগিয়ে পরে গত এপ্রিলে একে জোটের ধারণা দেয় চীন। এখন সেই ধারণাকে আরেকটু বিস্তার করে বলা হয়েছে, ‘চায়না-সাউথ এশিয়ান কান্ট্রিজ প্রভার্টি অ্যালিভিয়েশন অ্যান্ড কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ (China-South Asian Countries Poverty Alleviation and Co-operative Development Center) তারা গড়তে চায়।

কিন্তু এই নামের মধ্যেই – এখানে তিনটি শব্দ আছে – প্রভার্টি অ্যালিভিয়েশন, কো-অপারেটিভ আর, ডেভেলপমেন্ট সেন্টার; আর এই তিন শব্দ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটার যে বৈশিষ্ট্য ব্যক্ত করেছে; তাতে এটা আর যে কোনো বাণিজ্য জোট নয়, তাই-ই এটা বলছে। যদিও মতিউর রহমান চৌধুরী বাংলা-ভোয়া-তে প্রথম বাক্যে লিখেছেন এভাবে, “অবিকল সার্ক নয়। তবে এর আদলে ‘বিকল্প সার্ক’ গঠন করতে যাচ্ছে চীন। এতে ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থাকবে”। তাঁর এসব কথার সাথে চীনের কথার বা প্রতিষ্ঠানটার নামেরই মিল নাই।

কারণ ওই তিন শব্দের মাঝের “কো-অপারেটিভ” শব্দটা যদি ধরি – এটা এক আদি কমিউনিস্টদের শব্দ; তবে চীন এটা কমিউনিস্ট হিসাবে আনে নাই। এনেছে সম্ভবত ‘সদস্যদের সবার’ বা চীনের একার স্বার্থের এই সংগঠন নয়, এটা সকলের, সবাই সহযোগিতায় বুঝাতে কো-অপারেটিভ বা সমবায়িক শব্দটা এনেছে। কিন্তু এটি খুবই অপ্রয়োজনীয়। ঠিক যে কারণে কিছু রাষ্ট্রের বাণিজ্য জোটের নামে সাথে দুনিয়ার কোথাও কো-অপারেটিভ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি, হয় না। বিভিন্ন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মানেই যেখানে সবাই সমান মর্যাদার, সে কারণে এখানে আর কো-অপারেটিভ – খুবই বেমানান ও অপ্রয়োজনীয় শব্দ।

ওদিকে বাকি যে দুই শব্দ “প্রভার্টি অ্যালিভিয়েশন” (দারিদ্র্য দূরীকরণ) ও “ডেভেলপমেন্ট সেন্টার” – এ দুই শব্দ নিজেই পরিষ্কার বলছে এরা উন্নয়নবাচক বা সম্পর্কিত ধারণা। কিন্তু “উন্নয়ন” মানে কী?

উন্নয়ন বা ইংরেজিতে ডেভেলপমেন্ট – এগুলো আমেরিকার দিক থেকে চালু করা, যেন প্রায় প্যাটেন্ট করা শব্দ। আমেরিকার হাতেই এই কনসেপ্টের জন্ম এবং এর ব্যবহার শুরু ও এখনো চালু রয়েছে। আমেরিকার হাতে নাহয় বুঝলাম; কিন্তু কবে থেকে? যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অথবা আমেরিকান গ্লোবাল নেতৃত্বের দুনিয়া শুরুর আগে “উন্নয়ন” বলে কোনো শব্দ ও ধারণা ছিল না। মানে তা অন্য অর্থে ব্যবহৃত হত, আমেরিকার দেয়া অর্থে নয়।

আসলে ডেভেলপমেন্ট – এই পুরো পরিভাষার আসল অর্থ হল বা পুরা শব্দটা হল – ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট। বাংলায়, অবকাঠামো উন্নয়ন। এখন এটা অনেক বড় শব্দ বলে সংক্ষেপে শুধু ‘উন্নয়ন’ বলা শুরু করেছিল আমেরিকা। তা হলে এর আসল ও গুরুত্বের শব্দটা হল – অবকাঠামো, ফলে সেখান থেকেই অবকাঠামোর উন্নতি। কিন্তু তাহলে আবার, ‘অবকাঠামো’ মানেই বা কী?

এখন আমরা এবার অন্যদিক থেকে আগাই। এদিকে, ‘বিনিয়োগ’ মানে পুঁজি বিনিয়োগ কথাটা ক্যাপিটালিজমের ধারণার সমান পুরনো। কারখানা বা ব্যবসা শুরু করতে গেলে অর্থ বা পুঁজি বিনিয়োগ লাগবেই। তবে ১৯৪৪ সালে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠান দুটা জন্মের সময়ে বিনিয়োগ ধারণা ও শব্দটাকেই দুই ভাগ করে নেয়া হয়েছিল। একটি প্রি-বিনিয়োগ আর অন্যটি সাধারণ (যেমন- আগে বলতাম সেই) বিনিয়োগ। প্রি-বিনিয়োগ মানে বোঝাই যাচ্ছে, মূল বিনিয়োগেরও আগেই আরেক ধরণের বিনিয়োগ এটা। মানে কারখানা বা ব্যবসায় মূল বিনিয়োগ শুরু করার আগে ‘বিনিয়োগ পরিবেশ’ সৃষ্টির জন্য আরেকটা ধরণের বিনিয়োগ করা এটা। যেমন, যেখানে কারখানা-বিনিয়োগ এসে বসবে সেই দেশ-স্থান-শহরের ভূখণ্ডটার জলাভুমি থেকে শুরুর নানার কাজ – মাটি ফেলা বা ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সুব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, এয়ারপোর্ট, বন্দর পর্যন্ত এবার সাথে, দক্ষ প্রশাসন ইত্যাদি যদি সেখানে না থাকে, তবে বিনিয়োগকারী সেখানে আসবে না। পুঁজি সেখান থেকে চলে যাবে। তাই যে ভূখন্ডের প্রধানমন্ত্রী/মেয়র বুদ্ধিমান শাসক তিনি কিন্তু এসব ব্যবস্থা আগেই করে ফেলেছেন। কারণ, বিনিয়োগ না আসলে মানে নতুন নতুন কাজ সৃষ্টি না হলে দেশের লোক না খেয়ে মরবে। এটা তো বুদ্ধিমান শাসক হতে দিতে পারেন না। এজন্য এগুলো প্রি-বিনিয়োগ বলছি আর এটা অবকাঠামো তৈরিতে বলে যেটাকে এজন্য অবকাঠামো-বিনিয়োগ বলে। তবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ মূল কথা হল, অবকাঠামো-বিনিয়োগে সুদের হার সবচেয়ে কম, প্রায় ‘নাই’ করে রাখতে হবে, যাতে পরে কারখানা বিনিয়োগের ফলে উতপাদিত পণ্যের উপরে মানে এই মূল বিনিয়োগের উতপাদিত ফিনিস প্রোডাক্টের মুল্যের উপর এর চাপ-প্রভাব খুবই কম হয়। ফিনিসড প্রডাক্টের বিক্রি মূল্য যেন কম থাকে।

তাহলে অবকাঠামো-বিনিয়োগের পুঁজি্র সুদ হার কম রাখতেই হয়। এমন – এটারই বিলিয়ন ডলার ধার দেয়ারই উপযুক্ত সংগঠন হল বিশ্বব্যাংক। ১৯৪৪ সালে জন্ম নেয়া বিশ্বব্যাংক, এই নামটা এটা সংক্ষিপ্ত করে নেয়া নাম। মূল নাম IBRD (International Bank for Reconstruction & Development ); ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্র্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট – এর উদ্দেশ্য কম সুদে বা ‘না’ সুদে অবকাঠামো গড়তে লোন দেয়া যাতে এরপর সহজেই ঐ দেশে স্থানীয় বা বিদেশি বাণিজ্যিক (কারখানা) বিনিয়োগ এসে হাজির হতে পারে।

আবার, অবকাঠামো বিনিয়োগও দুই ধরনের হয় – ফিজিক্যাল ও হিউম্যান। ফিজিক্যাল মানে বস্তুগত অবকাঠামো। যেমন উপরে যেটা বলেছি মানে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাট সুব্যবস্থা প্রভৃতি। অন্যটা হল – হিউম্যান বা শ্রমের অবকাঠামো। সাধারণত কারখানা খুললে যেন ভালো এডুকেটেড স্কিলড লেবার বা নন-এডুকেটেড স্বাস্থ্যবান শ্রমিক পাওয়া যায়। তাই সাধারণত শিক্ষা আর ন্যূনতম স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে এভাবে দুই খাতে অবকাঠামো ব্যয়টা মূলত করা হয়। দুনিয়াতে ১৯৪৪ সালের আগে এই “অবকাঠামো উন্নয়ন” বলে কোনো ধারণাই ছিল না; অর্থাৎ কলোনি আমলে “অবকাঠামো” বলতে কোন ধারণা কাজ করত না। আর একালে অবকাঠামো বলে যাকিছু করা হয়েছে এর ভালো-মন্দসহ যা কিছু দুনিয়াতে হয়েছে, এর (ইতি- বা নেতি-) দায় সবটাই গ্লোবাল নেতা আমেরিকার।

তবে এখন দুনিয়ায় গ্লোবাল নেতার পালাবদলের এই কালে চীন কি কেবল আমেরিকাকে কপি করবে? নাকি আমেরিকার উন্নয়নের চেয়ে খারাপ কিছু অবশ্যই না, বেটার কিছু কনসেপ্ট নতুন আনবে? অথবা আগেরগুলোর সাথে আরও সংশোধিত নতুন কিছু আসবে?’ এটাই আমরা নিশ্চিত হতে চাই। চীন কি যথেষ্ট চিন্তা করে “প্রভার্টি অ্যালিভিয়েশন” বা ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, শব্দগুলো ব্যবহার করেছে? আমরা জানি না।

আরো বড় প্রশ্নঃ
তাহলে চীনের নতুন এই ছয় রাষ্ট্রীয় ‘ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’- আমরা এখন অন্তত এটুকু নিশ্চিত যে, এটা মতিউর রহমান চৌধুরী যেভাবে কল্পনা করেছেন… ‘অবিকল সার্ক নয়, তবে এর আদলে বিকল্প সার্ক’- এ কথাটি ভিত্তিহীন। কারণ আমাদের বাস্তবের সার্ক ধরনের সংগঠন তো আসলে তা এক রাষ্ট্রজোট-ই। মানে কোনো অবকাঠামো-দাতা প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক সেটা, তা নয়। বিশ্বব্যাংক তো কোনো রাষ্ট্রজোট নয়। তা হলে সমস্যা ঠিক কোথায়? খুব সম্ভবত সমস্যাটি চীনের নীতিনির্ধারকদের মাথায়; সেখানে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে বা ইচ্ছা করেই রেখে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখনই স্পষ্ট করতে তারা চাচ্ছে না; সময় হয় নাই। ফলে আপাতত ব্যাপারটা তাই দেখতে অনেকটা বাঘের মত হায়েনা চাওয়া ধরণের হয়ে আছে!

তবুও চীনারা কী আসলে এশিয়ায় কোয়াডের মত কিছু চাচ্ছে? যেটা বিকল্প বা প্রতিদ্বন্দ্বী? প্রথমত, সেটা বুঝাতে হলে প্রভার্টি অ্যালিভিয়েশন, কো-অপারেটিভ, ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ধরণের শব্দের ব্যবহার চীনকে আগে ত্যাগ করতে হবে। তবে আমরা সবাই আগেই নিশ্চিত থাকতে পারি, সবার ওপরে কোয়াডের বিকল্প বা প্রতিদ্বন্দ্বি কিছু পেতে চাইলে তা প্রকাশ হয়ে গেলেই এই পাঁচ রাষ্ট্র সাথে সাথে ভেগে যাবে। কারণ তেমন জোট মানেই এটা সামরিক চরিত্রের দিকে টার্ন নেবে। আর এ মুহূর্তে আমেরিকা-চীনসহ কারোই যুদ্ধের প্রতি আগ্রহ জাগা বা জাগানোর কথা না; যদি না বাইডেন জেনে বা না জেনে কোনো বোকামি করেন।

আবার চীন যদি আসলেই একটি বিকল্প সার্ক টাইপের জোট চায়, তবে প্রভার্টি অ্যালিভিয়েশন, কো-অপারেটিভ, ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এসব শব্দ ফেলে দিতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভারত বা অমুক রাষ্ট্রকে নেয়া যাবে না- এটি বলাই যাবে না। এমনকি দাওয়াতপত্রও ভারতকে পাঠাতে হবে। যদিও উপরের রিপোর্টে আমরা দেখেছে ভারত ইনভাইটেড ছিল। কিন্তু নিজেই সাড়া দেয় নাই। আবার ভারত এলেও চীনের তাতে লাভ, আবার না হলেও আরেক ধরণের লাভ। কাজেই আগাম কে আসতে পারবে না, এভাবে কথা বলার কোনোই প্রয়োজন নাই, তা শোভনও না। তবে চীনের উপর দাওয়াত না করার দায় হবু গ্লোবাল নেতা হিসাবে নেয়া ভাল উদাহরণ নয়।

শেষে তাইওয়ান ইস্যুতে কিছু কথাঃ
জাপান বার্ষিক ডিফেন্স রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে আর তাতে জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী [Deputy Prime Minister Taro Aso] বলে ফেলেছেন যে “জাপানের আমেরিকার সাথে মিলে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে যাওয়া উচিত”। বলাই বাহুল্য এটা উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পরে তিনি পালটা ব্যাখ্যা দিয়ে উত্তেজনার পারদ নামাতে চেয়েছেন। কিন্তু মূলকথা, আমেরিকা বা জাপান সকলেই এক চীন নীতি মেনে নিয়েই চীনের সাথে সম্পর্ক শুরু করেছিলেন। ফলে ডায়লগের বাইরে “পাশে দাঁড়ানো” টাইপের কথা বলা তাদের কথা নয় এটা মারাত্মকভাবে গ্লোবাল স্থিতি ভেঙ্গে ফেলবে। চীনেরও বলপ্রয়োগ ভিন্ন অন্য সবকিছুতে তাইওয়ান ইস্যু সমাধানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত। এখন কে এসব শুরু করেছে জাপানের মন্ত্রীরা নাকি বাইডেনের আগ্রহে সেটা যাই হোক, সারকথাটা হল যেখানে যুদ্ধের উস্কানি সবার সামলে চলা উচিত সেখানে উস্কানি তোলা হচ্ছে।
শেষে একটা রেফারেন্স দিয়ে শেষ করব।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবাই জানেন পক্ষ দুইটা ছিল হিটলার-মুসোলিনি-জাপানের তেজো ও তাদের বন্ধুরা একদিকে। অন্যদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে ইউরোপের বাকি সবাই। যুদ্ধে আমেরিকার মিত্র বাহিনীর বিজয়ের পরে দুপক্ষের বহুদেশেই খাদাভাব-দুর্ভিক্ষ দেয়া দিয়েছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা ছিল মুসোলিনির ইটালিতে। কিন্তু পক্ষ-বিপক্ষে যে যেদিকেই থাক একমাত্র সক্ষম আমেরিকা সকলকেই সাহায্য এবং পুনর্বাসন দিয়েছিল। ইটালিবাসিও আগে থেকেই লাজলজ্জা ভুলে প্রকাশ্যে সাহায্য কামনা জানিয়েছিল।

যুদ্ধের সোজা অর্থ হল, সম্পদ ও রিসোর্সের সরাসরি ধবংস ও অপচয়। আবার খাদাভাব-দুর্ভিক্ষ মানে মানুষ আর মানুষের মর্যাদায় থাকে না! তাই যুদ্ধ শেষে যার সামর্থ থাকে সেই বাকি সবাইকে পক্ষবিভেদ ভুলে সকলকেই খাওয়ায় আবার পুনর্বাসনের অর্থ যোগানোর সক্ষমতাও দেখায়। কাজেই একালেও দায়দায়িত্ব ভুলে যুদ্ধের পক্ষে পরিস্থিতিকে ঠেলে দোয়ার আগে আমাদের এসব পুরান কথা স্মরণ থাকবেনা কেন?

আপাতত এখানেই ইতি টানছি। তবে চীনকে অবশ্যই ভেবে পরিষ্কার করে বলতে পারতেই হবে যে, সে স্পষ্ট করে কী চায়? আর এবারের তাসখন্দ সাক্ষাতে চীন বাংলাদেশকে এক বড় স্তরের আস্থায় নিয়ে রেখেছে দেখা যাচ্ছে, এটা তাৎপর্যপূর্ণ। এই সাক্ষাতটাকে আগামি দিনে দেখা হবে একটা টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে। তবে সেটা চীন-বাংলাদেশের সম্পর্কের দিকের চেয়েও বড় কিছু। আগামি দিনে বাংলাদেশে যা যা ঘটবে সেসবের প্রেক্ষিতে এটাকে টার্নিং পয়েন্ট বলে দেখা হবে!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

Advertisements