কারিগরি ত্রুটির কারণে নির্ধারিত সময়ে চালু করা যায়নি মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটি বা পারস্পরিক লেনদেন সুবিধা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছিল, মঙ্গলবার থেকে বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ ও ইউক্যাশের মধ্যে আন্তঃলেনদেন সুবিধা চালু হবে। সেইসঙ্গে যে কোনো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে মূল ব্যাংকের সঙ্গেও লেনদেন করা যাবে।
কিন্তু মঙ্গলবার তা চালু করা যায়নি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষ মুহূর্তে কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি।”
এ সুবিধা কবে চালু করা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যার সমধান করতে।”
বর্তমানে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা লেনদেন করা যায়। তবে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনো লেনদেন করা যায় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের (এনপিএসবি) মাধ্যমে সেই সুবিধা চালু করার কথা বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিকাশের কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মঙ্গলবার থেকে নতুন এই সেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে তা আর হয়নি। আমরা পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।”
নতুন এই সেবা চালুর ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার এক সার্কুলারে বলেছিল, এই সেবার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি কোনো মাশুল নেওয়া যাবে না।
এক এমএফএস প্রোভাইডারের হিসাব থেকে অন্য এমএফএস প্রোভাইডারের (পি-টু-পি) হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রাপক এমএফএস প্রোভাইডার প্রেরক এমএফএস প্রোভাইডারকে লেনদেন করা অর্থের শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ ফি দেবে।
অর্থাৎ, বিকাশ থেকে এমক্যাশে টাকা গেলে, এমক্যাশ প্রতি হাজারের জন্য বিকাশকে ৮ টাকা দেবে।
এছাড়া ব্যাংক হিসাব থেকে এমএফএস হিসাবে এবং এমএফএস হিসাব থেকে ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর, উভয় ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট এমএফএস প্রোভাইডার সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে লেনদেন করা অর্থের শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ দেবে।
অর্থাৎ, পূবালী ব্যাংক থেকে বিকাশে ১ হাজার টাকা জমা হলে পূবালী ব্যাংককে ৪ টাকা ৫০ পয়সা দেবে বিকাশ। উল্টেভাবে বিকাশ থেকে পূবালী ব্যাংকে অর্থ গেলেও একই হারে মাশুল ভাগাভাগি করতে হবে বিকাশকে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত কয়েক মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় মানুষের নির্ভরতা অনেক বেড়ে গেছে। এখন ঘরে বসেই এসব সেবার হিসাব খোলা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অগাস্ট শেষে দেশে এমএফএসের গ্রাহক ৯ কোটি ২৯ লাখে উঠেছে, আর এজেন্ট সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০ লাখ। অগাস্টে লেনদেন হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা।
ওই মাসে এমএফএসের মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা প্রবাসী আয় বিতরণ হয়েছে, বেতন-ভাতা পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। কেনাকাটা হয়েছে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকার। এছাড়া ৯০৮ কোটি টাকা পরিশোধ হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের মতো পরিষেবা বিল বাবদ।