চাই সহজ বিয়ে
হোক সেটা যতবার
অথবা যে কারো সাথে
আমাদের সমাজে কী হয়, সমাজ কী ভাববে, কীভাবে সমাজে মুখ দেখাবো— এসব ফালতু চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আপনার আশেপাশের সমাজ যদি হয় প্রকৃতিবিরুদ্ধ, তাহলে সে সমাজকে কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে সেটা নির্ণয় করে সমাজ পরিবর্তনের সেই জরুরী কাজে এখনই লেগে যেতে হতে হবে।
বারবার বলে থাকি এই কথাটি, identification of the problem is the half of the solution।
উচ্চশিক্ষিত সমাজের ক্যারিয়ারমুখী জীবনধারায় যে একটা ব্যাপক সামাজিক সমস্যা ভিতরে ভিতরে আমাদের যৌন নীতিবোধের পুরো কাঠামোটিকে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে, মূল্যবোধের সবকিছুকে যে ভিতর থেকে তছনছ করে দিচ্ছে, সেটাকে খোলাখুলিভাবে এড্রেস না করে আমরা ঘায়ের মলম দেওয়ার মতো নৈতিকতার বুলি কপচানোকেই যথেষ্ট মনে করছি। আফসোস!
বিয়ে হচ্ছে সমাজ স্বীকৃত যৌন সম্পর্ক। এর বেশি কিছু নয়।
যৌনতার সামাজিক স্বীকৃতি একেক সমাজে একেক প্যাটার্নের। এর মূল কাঠামোটি যদিও একই, কিন্তু নারী-পুরুষ পরস্পরের পারস্পরিক দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার; এবং এই সম্পর্ককে উদযাপন করার ব্যাপারটা ভিন্ন ভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন রকমের।
ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারটা খুবই সাদামাটা। অথচ, বিকৃত সব সামাজিকতা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সম্পর্ককে করে তুলেছে নিতান্ত দুরূহ, দুর্লভ এবং অনেকের জন্য অসম্ভব-প্রায় একটা ব্যাপার।
বিশেষ করে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত তরুণ-তরুণীরা বিয়েকে কঠিন করার এই সামাজিক অবস্থার করুণ শিকার।
বিকৃত এই সামাজিক অপব্যবস্থার মূল কথা হলো, বিয়ে করা যাবে না। কিন্তু অন্য সবকিছু করা যাবে। আড়ালে-আবডালে। এক ধরনের বাধ্যগত সম্মতি থাকা সাপেক্ষে।
বয়সের চাপ যে কারো মধ্যে যেকোনো অনুকূল পরিস্থিতিতে উৎপন্ন হতে পারে বাধ্যগত সম্মতি। Compulsive consent। বয়সের প্রবল চাপে তাদের কাছে মনে হয়, anything is alright, let me just do it.
একে আপনি ‘ধর্ষণ’ বলে সামাজিকভাবে, আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবেলা করতে যদি চান তাতে করে সেই সব ‘ধর্ষণের’ ঘটনা কখনো বন্ধ হবে না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখতে পারেন। যেখানেই অবদমন, সেখানেই ধর্ষণ। যেখানেই বিকৃতি, সেখানেই ধর্ষণ। হোক সেটা কোনো উৎকল্পিত স্বাধীনতার নামে, কিংবা কোনো মেকী অধিকারের মোড়কে।
ইসলামের ব্যবস্থাগুলোর মূল চরিত্র হচ্ছে এগুলো প্রিভেন্টিভ। সংক্রমণ বন্ধ না করে এলোপাথাড়ি চিকিৎসা করা হাতুড়ে ডাক্তারের কাজ। প্রিভেনশন ফেল করলেই তবে আমরা কিউর প্রসেসের দিকে যাই। ইসলামী শরীয়া সম্বন্ধে আমি যা বুঝেছি, তাতে নিশ্চিত করে বলতে পারি, একটি সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থার জন্য এটি নিরাময়মূলক ব্যবস্থার চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেখানে সুরক্ষার ব্যবস্থা নাই ন্যূনতম, অথচ প্রতিকারের ব্যবস্থা নিয়ে লাফ-ঝাপ অনেক বেশি, এমন একটি পরিস্থিতি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।
দুর্ভিক্ষের সময় চোরের হাত কাটার বিধান রহিত করার মতো করে মাঝে মাঝে মনে হয়, মানবিক সম্পর্কের সংশ্লিষ্ট কিছু দিকে শরীয়তের কিছু কিছু বিধান অন্ততপক্ষে সহজতর করে নেয়া এখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
‘খেয়ে-দেয়ে সেক্রিফাইস করা’র মতো হিপোক্রেট হলো আমাদের সমাজের মুরুব্বী শ্রেণীর লোকেরা। পুরুষ এবং নারী উভয় শ্রেণীর লোকেরা দ্বিমুখিতার ব্যাপারে একই চরিত্রের। নারীরা বরং খানিকটা বেশি।
তাই, আমার বয়সী যারা তারা আমার এসব ‘বেলাল্লাপনা’সুলভ চিন্তাভাবনা ও ‘অতি উদার’ কথাবার্তায় খুব বিরক্তবোধ করবেন। সন্দেহ করবেন আমার চারিত্রিক দৃঢ়তায়। সীমিত পরিসরে হলেও কেউ কেউ এখনি আমাকে ‘ইসলামী হুমায়ুন আজাদ’ অথবা ‘পুরুষ তসলিমা নাসরিন’ বলা শুরু করেছে।
আসলে হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন অথবা এই ধরনের যে কেউ যখন সামাজিক সমস্যার কথা বলে তখন তাদের সাথে একমত না হয়ে পারা যায় না।
সমস্যা হলো, তাদের সমাধানের সাথে একমত হওয়া যায় না। সামাজিক অবদমনের মোকাবেলায় তারা প্রস্তাব করেন ব্যক্তিগত গণবিকৃতি। অথচ, perversion cannot be the solution of suppression.
প্রাপ্তবয়স্ক দুজন নারী-পুরুষ সম্পর্কের পরবর্তী দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে নিয়ে পারস্পরিক সম্মতি সাপেক্ষে ‘সম্পর্ক’ করবে, এটাই তো বিয়ে।
পরস্পর সম্মত থাকা, ইতোমধ্যে এ ধরনের সম্মতিমূলক সম্পর্কে কারো সাথে আবদ্ধ না থাকা, সন্তান প্রতিপালন এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাসহ সম্পর্কপ্রসূত দায়িত্বগুলোকে যথাসম্ভব পালন করতে সম্মত থাকা, এগুলোই তো বিয়ের শর্ত।
এর বাইরে যা কিছু সব বাহুল্য। সোজা কথায়, সামাজিক বিকৃতি। এই বিকৃতি চর্চার মূল হোতা হলেন বয়সোত্তীর্ণ মুরুব্বী শ্রেণীর লোকেরা। আমাদের চট্টগ্রামে প্রচলিত, খৎনা উপলক্ষে আয়োজন করা ব্যাপক অনুষ্ঠানের মতো। ছেলেদের খতনা অনুষ্ঠানের বিপরীতে এখানে প্রচলিত আছে মেয়েদের ‘কান ছেদানো’ অনুষ্ঠান। ভাগ্য ভালো, আফ্রিকা অঞ্চলের মতো এখানে মেয়েদের খৎনা অনুষ্ঠান এখানে চালু হয়নি। যদি হতো, তাহলে আমার আপনার মত সুশীল লোকেরাও নির্লজ্জ ও নির্মমভাবে, নির্দ্বিধায়, এমনকি সুন্নত মনে করে সেটাই করতো।
এর কারণ হলো, অধিকাংশ মানুষ হচ্ছে সামাজিক অভ্যাসের ক্রীতদাস। তারা দাস মনোভাবপন্ন মানুষ। আমাদের দরকার হলো এমন মানুষ যারা সত্যিকারের মানুষ। যারা মানবিক মানুষ। যারা বোধসম্পন্ন মানুষ। যারা সুস্থ মানবিক স্বভাব চরিত্রের মানুষ।
সুস্থ মানবিক সম্পর্কের জন্য বিয়েকে সহজ করতে হবে। সুস্থ সমাজ গঠন করার জন্য বিবাহবিচ্ছেদকে নিতে হবে, বিশেষ করে নারীদের জন্য, বিশেষ কোনো ঝুঁকিমুক্ত একটি স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড হিসেবে।
পুনর্বিবাহ, দ্বিতীয় বিবাহ, তৃতীয় বিবাহ বা যে কোনো ধরনের সহজ-সরল দাম্পত্য সম্পর্ককে নিতে হবে পরস্পরের ব্যক্তিগত একটি সহজ বিষয় হিসেবে।
বিয়ের অনুষ্ঠানকে সহজভাবে উদযাপন করতে হবে। যেন গোপন সম্পর্ক থেকে সেটাকে পৃথক করা যায়। কিন্তু এখন যেটা করা হচ্ছে, যেভাবে চলছে, তাতে করে গোপন সম্পর্কচর্চা হচ্ছে উৎসাহিত, কিংবা অনিবার্য।
এ নিয়ে আগামী দিনে ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে, আল্লাহ যদি রাজি থাকেন। আমাদের শ্লোগান হবে: সহজ বিয়ে। mate with responsibility.
দায়-দায়িত্বের ব্যাপারটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। খানিকটা তো উপরে বলা হলো।
সারকথা হলো, everybody has to have the right to mate but with proper responsibilities including personal, social and economic responsibilities.
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Taslima Popy: অনেক ধন্যবাদ স্যার। আপনার প্রতিটা কথার সাথে একমত।
Mohammad Mozammel Hoque: somebody has to raise the voice; and it is needed to speak the spade a spade. Somebody has to ring the bell first.
Munira Rahman Tashfi: Sir, your thought in this case is the same as mine. Earlier last month, I also delivered a post for those who were/are already in a haram relationship. Given the fact that many of them were about to celebrate the last Valentine’s day with their illicit partners/lovers, I had then put an Islamic solution for them to have their haram relationship converted to a halal one on their own if not with their families’ knowledge.
The marriage system in Islam is very simple if we resort to the marriage-related fiqhi masails of the Hanafi majhab. Being basically a Qawmi-student, I have an academic knowledge of such fiqhi masail issues. So, to the best of my knowledge, I tried to give a sharia solution to the haram relationship problem, for the unmarried lovers I thought needed to know this for their own good.
But the main concern here is about whether marriage itself can be done without the presence or consents of families, especially of the bride’s family as per Sharia. To some majhabs, guardians are to be present at the marriage time but it is not sternly required in the case of especially the Hanafi majhab if the bride and the groom both are quite adult and eligible for each other in terms of Kufu. The Hanafi majhab being followed by the majority of Muslims in the sub-continent, I suggest the easy way to get married to only those whom I talked about in the first place. I never mean this suggestion for everyone and in every case, though.
Last but not the least, in the event of no presence or consents of families, considering the post-marriage security for especially the brides, I strongly suggest them to get married following the legal proceedings of the court.
Mohammad Mozammel Hoque: আপনার লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। তখনই আমি এটা পড়েছিলাম খুব সম্ভবত। এই মন্তব্যটাও। খুব ভালো লাগছে। এত সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে কথাগুলো বলার জন্য আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদেরকে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। একেবারে গোড়া থেকে ভাবতে হবে। আমার লেখাটা সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা। আপনার এই মন্তব্যটি আমি আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীকে পড়িয়েছি।
Munira Rahman Tashfi: আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।
Iqbal Mahmood: পরিস্থিতি যে দিন দিন কত ভয়াবহ হচ্ছে, সেটা কল্পনারও বাইরে। আমার এক পরিচিত জনের হঠাৎ জব চলে যায়। তার সঞ্চয়ও নাই। কী যে বিপদে আছে ফ্যামিলি নিয়ে, আল্লাহ ভালো জানেন!!! এটা আসলে দেশের সিস্টেমের প্রব্লেম। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন এতই অবনতির দিকে যাচ্ছে যে এটা বলার বাইরে। যে অবস্থা দাঁড়াইছে, এখন মেয়ের বাবা সরকারি জব ছাড়া মেয়ে দিতে রাজি নন। ছেলের বাবাও ছেলে বিয়ে দিবেন না। যারা উশৃংখল গোছের ছেলেমেয়ে, এদের জন্য এগুলো কোনো সমস্যাই না। কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় পেয়ে যিনা করে না এবং সমাজব্যবস্থার জন্য বিয়েও করতে পারতেছে না, তারাই আছে মহাবিপদে। আমাদের ভেতর আজ ঈমানের বড়ই অভাব।