পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ উপেক্ষা করে গাজীপুরে বনের ভেতর দিয়ে ৩৩ কেভি ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাজারো শাল বৃক্ষ। গাজীপুর মহানগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিয়াব ময়লার টেক থেকে কালিঘাট ব্রিজ পর্যন্ত গাজীপুর সমরাস্ত্র রাখখানা-রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুজন শাহা জানান, ‘২০ কিলোমিটার সড়কে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩৩ কেভি ভোল্টের নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মিত হচ্ছে। এতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক। ’ বনের ভেতর নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। লিখিত অনুমোদনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া চলমান আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩২তম সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত ১১ (ঘ) মতে, ‘বন ও পরিবেশের ক্ষতিরোধকল্পে বনের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ লাইন এবং রাস্তা নির্মাণসহ যে কোন উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের পূর্বে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শক্রমে প্রকল্প প্রণয়নের জন্য মন্ত্রীপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে অবহিত করার সুপারিশ অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সুবিধার্থে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবসহ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়।
অপরদিকে, গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর তৎকালীন গাজীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফারজানা মান্নানের অফিস কক্ষে ‘বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও বন বিভাগের গাছ কর্তন’ শীর্ষক বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী (১) মতে, গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২, বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির উপর দিয়ে কোন বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ/স্থাপন অথবা বিদ্যমান বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপত্তা সংরক্ষণ বা অন্য কোন কারণে সংরক্ষিত বনের কোন গাছ সম্পুর্ণভাবে কাটার প্রয়োজন হলে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এবং ২, বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে অবহিত করবে। এ ছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করবেন এবং প্রয়োজনে গাছ কর্তন করবেন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ- ১ ও ২ এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
ঢাকা বন বিভাগের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের সালনা বিট কাম চেক স্টেশন অফিসার বিপ্লব হোসেন জানান, অনুমোদন না নিয়েই পাকা সড়ক সংলগ্ন শাল বনের ভেতরে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করে নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ চেষ্টা করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। বিগত দিনে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের একপাশে শাল বনের ভেতর ৩৩টি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। গেল শনিবার সকাল থেকে খুঁটিগুলোতে বিদ্যুতের তার স্থাপন চেষ্টা চালাচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের লোকজন। ওই খুঁটিগুলোতে ৩৩ কেভি ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন সচল হলে অগণিত শালবৃক্ষ কাটা পড়ার পাশাপাশি খুঁটির আশপাশের বৃক্ষগুলোর বেড়ে ওঠার সুযোগ ব্যহত হবে।
বন অধিদফতরের কেন্দ্রীয় অঞ্চল বন সংরক্ষক (সিএফ) আরএসএম মুনিরুল ইসলাম জানান, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে বনের ভেতর বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন কিংবা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন নির্মাণের সুযোগ নেই। গাজীপুরের ঘটনাটি বন বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগকে লিখিতভাবে জানানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার জানান, বনের ভেতর বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন কিংবা নতুন লাইন নির্মাণ করতে গেলে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুমোদন নিতে হবে।
অন্যদিকে রোববার (১৮ এপ্রিল) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।