বেঁচে থাকার প্রশ্নে মানুষকে বয়সের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করতে হয়। মায়ের গর্ভ হতে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে মানুষ যতই বড় হতে থাকে তখন বয়সের সাথে সাথে সে বয়সের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করতে থাকে। মানুষের বয়সের স্তর আটটি৷ শৈশব: ১-৫ বছর , বাল্যকাল ৫-১২,কৈশর ১২-১৬, তারণ্য ১৬-১৮, যৌবন ২০-৪০ বার্ধক্য ৬০-৮০ বছর পর্যন্ত এবং জড়ত্ব ৮০ থেকে বাকি জীবন৷ তার মধ্যে ১৮-২২ বছর বয়সি লোকগুলো তারণ্য এবং যৌবনের আওতাভুক্ত।
আঠারো বছরের নিচে সবাই শিশু। মায়ের গর্ভে যে এখনো রয়ে গেছে সেও কিন্তু একজন ব্যক্তি৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রথম আট সপ্তাহ পর্যন্ত তাকে বলা হয় এমব্রিও। তারপর থেকে ভূমিষ্ট হওয়া অবধি তার নাম ফিটাস। এই গর্ভস্ত শিশুর ও কিন্তু আবেগ ও অনুভূতি আছে৷ আছে বৃদ্ধি ও বিকাশের নানা ধাপ৷ পৃথিবীতে আসার পর থেকে একজন শিশুর পর্যায়ক্রমিক আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়৷ শিশু প্রথমে কথা বলতে শেখে পর্যায়ক্রমে হাটতে শেখে এবং দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি তার খেলার অংশ হয়ে দাঁড়ায় । শৈশব পেরিয়ে যখন বয়ঃপ্রাপ্তির সময় হয় তখন মনোজগতে বিপুল পরিবর্তন ঘটে । প্রজননতন্ত্রের পরিপক্বতা হয়।এই সময়টাতে দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি অর্থাৎ শিশু তার পূর্ণ উচ্চতার ২০ শতাংশ প্রাপ্ত হয়৷
এখন ফিরে আসা যাক ১৮-২২ এর গবেষনায়!
কোনো বয়সের লোকদেরকেই সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। ১৮-২২ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমন। কারণ ব্যপারটা আবেগ, মায়া এবং বস্তুগত দুনিয়ার সংমিশ্রণ দিয়েই পরিমাপ করে বুঝতে হবে৷ কিছু মানুষের উপর গবেষনা এবং নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এ বয়সে পিছনের দিনগুলো থেকে নিজেকে একটু বেশিই বড় মনে হয়; এ বয়সে পিছনের বয়সে পাত্তা না দেওয়া বিষয়গুলোও সিরিয়াস করে ভাবতে মন চায়।
ছোট বেলায় খুব বেশি বন্ধুদের সাথে টাইমপাস করলে মায়েরা একদিন রেগে গিয়েই বলে ফেলেন “এত্ত যে বন্ধু বন্ধু করিস! দেখবি একদিন কেউ থাকবে না সময় দেওয়ার জন্য! “আপনি আমি হেসে উড়িয়ে দিই, রেগে যাই। অথচ কথাটা সত্যি!
আঠারো থেকে বাইশ বছর বয়সটাই সবাই ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস হয়। নিত্য নতুন চিন্তাভাবনা এবং সেখান থেকেই লড়াই। এ বয়সটাতে দুনিয়ার বাস্তবতা বুঝা যায়৷ চারপাশের মানুষদের মাঝে মুখোশধারি আর সৎ মানুষদের দুধ আর সরের মতো করে আলাদা করা যায়। গবেষনার একটা বৃহৎ অংশে খেয়াল করলাম ” এ বয়সে এসে দেখা যায় বাবা-মা বা পরিবারের লোকজন আগের সিস্টেমে কথা বলেনা। কথার ধরণ পাল্টে যায়। সবাই একটা অদৃশ্য চাপ দিতে থাকে। ”
একজন টিনেজার ছেলে বা মেয়ে ওই সময়টাতে একটা সামান্য শখের জিনিস কিনতেও সেক্রিফাইস করে।পরিবারের রেস্পন্সিবিলিটির মাঝে ইনভলবড হয়ে যায়। আর টিনেজার ছেলে বা মেয়েটা এভাবেই একদিন প্রতিষ্ঠিত রেস্পন্সিবল মানুষ হয়ে উঠে।
এ বয়সের প্রায় সব লোক ই ডিপ্রেশনে থাকে। সবাই একাকিত্ব অনুভব করে৷ কেননা এই সময়টাতেই মানুষ রঙিন দুনিয়া রেখে বাস্তবতায় প্রবেশ করে। এসব দেখে আপনি যখন একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে কোনো স্থানে বসে থাকেন আপনার চেনা পরিচিত সব মানুষদেরই পর ভাবতে শুরু করেন। আমি বলছি শুধুমাত্র নিজ অভিজ্ঞতা এবং গবেষনায় প্রাপ্ত ফল থেকে।
তবে হ্যা,একা থাকার মধ্যেও রয়েছে অনেক প্রাপ্তি, অনেক সফলতা। একা থাকাটা যতটুকু কষ্টের তার খেকে বেশি আনন্দের কেননা একা থাকলে নিজেকে সময় দেওয়া যায়। নিজের অন্তর আত্নাকে চেনা যায় নিজেই নিজের বন্ধু হওয়া যায়। এই একা থাকাকে পজিটিভলি নিতে হবে। আপনি এখন একা, আপনাকে সাক্সেস হতে হবে। নিজেই নিজেকে সঙ্গ দিন, ভালো কিছু সময় কাটান।নিজের মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি থাকলে নিজেই বের করে নিন। আর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পরিশ্রম ত আছেই।
কেন একা ফিল করে ডিপ্রেশনে যাবেন? বলেন! জীবনটা কি একটা দীর্ঘ উপন্যাস, যে বিরহে কাটিয়ে দিয়ে শেষটায় দু ফোটা চোখের জল ফেলে বইটা বইটা বন্ধ করে রেখে ঘুমিয়ে পড়বেন? জীবন উপন্যাস নয়! জীবন একটা চরম বাস্তব মঞ্চ। এখানে আপনিই লিডার! আপনিই অভিনেতা! আপনিই ভিলেন, আবার আপনিই হিরো।
লেখকঃ জুবায়ের প্রধান