গণপরিষদ নির্বাচন
Advertisements

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে এ নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কথা হলেও তা রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের দিন গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলে ধরার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। ইতোমধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত দিচ্ছে।

এনসিপি দাবি করছে, নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন। তাদের মতে, গণপরিষদ গঠিত হলে প্রতিনিধিরা নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিচালনার ম্যান্ডেট পাবেন। তবে বিএনপি এই দাবিকে নির্বাচনের সময়সীমা পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘যারা গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আনছে, তারা হয় বিষয়টি বোঝে না অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়।’

গণপরিষদ নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে কি না, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পেছাতে হতে পারে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করি, তাহলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। তখন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত ডিসেম্বর অথবা পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।’

বিএনপি বরাবরই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার একটি কৌশল মাত্র। গণতন্ত্রহীনতার এই পরিস্থিতি একদিনও চলা উচিত নয়। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া নতুন কোনো সংবিধান বা শাসনব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয়।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব অবশ্য জাতীয় নির্বাচন পেছানোর অভিযোগ নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই জাতীয় নির্বাচন পেছানোর পক্ষে নই। বরং গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করা যেতে পারে।’

গণপরিষদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত প্রয়োজন।’

তবে বিএনপি এই দাবির বিরোধিতা করছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যদি সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতেই চায়, তাহলে অন্যান্য বাণিজ্যিক সংগঠন ও মসজিদ কমিটির নির্বাচনও আগে করুক! মূল বিষয় হলো, জাতীয় নির্বাচন যাতে কোনোভাবে বিলম্বিত না হয়।’

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আসন বিন্যাস ও রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া জুনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এরপর তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ফলে, জাতীয় সংসদ, গণপরিষদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন—সবকিছু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চললেও নির্বাচন কমিশন তাদের নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত আসে।

Advertisements