বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, আর যেন কোনো হায়েনার দল এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
আজ বুধবার ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ উপদেশ দেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, জানি, অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলো আমি মাথায় রাখি না, আমি বিভ্রান্তও হই না। কারণ আমরা সারাজীবনই দেখেছি এটা হচ্ছে, এটা হবেই। কিন্তু একটা আদর্শ নিয়ে চলতে গেলে, একটা লক্ষ্য স্থির করে চললে, বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে গেলে, যারা উপরে থেকে বেশি বেশি খায়, বেশি বেশি পায় তাদের তো একটু দুঃখ থাকেই। তারা ভাবে, আমাদের বোধহয় জায়গা হবে না। সেজন্য ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। আর কিছু লোকের তো লক্ষ্যই থাকে একটা পতাকা পেতে হবে বা একটু ক্ষমতায় যেতে হবে বা ইত্যাদি। এই ধরনের যাদের আকাঙ্ক্ষা বেশি তারা দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না।
তিনি বলেন, তাই তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু নীতি আদর্শ নিয়ে চললে, সৎ পথে চললে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু এখন পরনির্ভরশীল নই। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। সেটা আমরা দেখিয়েছি এবং পদ্মাসেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে যে করতে পারি সেটা প্রমাণ করেছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকেই কিন্তু সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না, বরং আমাদের সমীহ করে চলে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি এটুকু চাইব যে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে চাও আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে। চলমান বিশ্বে সবসময় নিজেদেরকে গতি ঠিক রেখে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই এ দেশের নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই কিন্তু ছাত্রলীগ এই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছে। অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বুকের রক্ত দিয়ে গেছে। কত চেনামুখ হারিয়ে গেছে। কাজেই সেই ঐতিহ্য নিয়েই কিন্তু এই সংগঠন। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট দল কিন্তু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী লীগও নায় বা আমাদের সহযোগী সংগঠনও নয়। আমাদের দল গণমানুষের দল। অধিকার হারা মানুষের কথা বলেই কিন্তু এই সংগঠন তৈরি। এই কথাটা কিন্তু সবসময় মাথায় রাখতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের গর্বের বিষয়।
সরকারপ্রধান বলেন, বুলেট, গোলা, বোমা অনেক কিছুই তো মোকাবিলা করেছি। কাজেই ওসব নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু দেশটাকে যেখানে নিয়ে এলাম এই গতিটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই চাই। চিন্তাটা সেখানেই, আবার যেন আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়। ছাত্রলীগ এবং আমাদের যারা সহযোগী সংগঠন বা আমাদের আওয়ামী লীগ সবাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আবার যেন কখনোই হায়েনার দল এসে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। এই কথা মনে রেখেই ছাত্রলীগ নিজেদের সুসংগঠিত রাখবে। কারণ এই ছাত্র রাজনীতি থেকেই তো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। এটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই নিজেদেরকে নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে, একটা আদর্শবান কর্মী হিসেবে। খেয়াল রাখবে, কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না যেন। নিজেকে শক্ত করে, সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে। সেভাবে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের শাস্তি । ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবী
এদিকে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যারয়ের আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৪৪ জন ছাত্রকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এরমধ্যে সেজানসহ চারজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মুলতবি সভার পর বুধবার (৫ জানুয়ারি) কুয়েট সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রোকৌশলী মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।দ
গতকাল মঙ্গলবার দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা শৃঙ্খলা কমিটির সভা চলার পর মুলতবি করা হয়। বুধবার সকাল ৯টায় পুনরায় সভা শুরু হয়। পরবর্তীতে বেলা ১১টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়
এর আগে কুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৪৪ শিক্ষার্থীর শোকজের জবাব এবং ৪৪ পৃষ্ঠার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সভায় প্রদান করা হয়। কমিটির সভাপতি ও কুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিকেলে কুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন মারা যান। তার মৃত্যুর পর সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে এই মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ তার অনুগত ছাত্ররা দায়ী। ঘটনা তদন্তে দুই দফায় কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অপরদিকে, ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ২ ডিসেম্বর দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ দায়ী ছাত্রদের শাস্তির দাবি জানান শিক্ষকরা।
পার্সটুডে