কাশ্মীর ফাইলস
Advertisements

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভাইস-চেয়ারম্যান ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘কাশ্মীর ফাইলস ছবিটিতে অনেক মিথ্যা তথ্য দেখানো হয়েছে।

যে সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি তৈরি ফারুক আবদুল্লাহ সে সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। বরং, সে সময়ে ছিল রাজ্যপালের শাসন। বিজেপির সমর্থনে দেশে তখন ছিল ভিপি সিংহের সরকার।’তিনি শুক্রবার (১৮ মার্চ) ওই মন্তব্য করেছেন।

সম্প্রতি গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা সিনে দুনিয়ার তারকা অনেকেই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন ১৯৯০ সালে উপত্যকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশা নিয়ে তৈরি সিনেমাটিকে। বক্স অফিসেও তা নিত্য-নতুন রেকর্ড গড়ছে। ইতোমধ্যে একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্য করমুক্ত করে দিয়েছে ছবিটি। কয়েকটি রাজ্যে ছুটি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে সিনেমাটি দেখার জন্য।

সিনেমাটি প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, কাশ্মীরের সত্য, যা ছবিতে দেখানো হয়েছে, তা অনেকে আবৃত রাখার চেষ্টা করে গেছেন। এখনও যাঁরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন, তারাই আবার এই ছবি প্রদর্শনের বিরোধিতা করেছে।

এদিকে, বলিউডের আরেক পরিচালক বিনোদ কাপ্রি ঘোষণা করেছেন যে তিনি ‘গুজরাট দাঙ্গা’র উপর ‘গুজরাট ফাইলস’ নামে একটি ছবি বানাবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় এই খবর দেওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু প্রশ্নও রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ‘গুজরাট ফাইলস নামে, আমি তথ্যে ও শিল্পের উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করতে প্রস্তুত এবং এই ঘটনায় আপনার ভূমিকাও বিশদভাবে উল্লেখ করা হবে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘আজ দেশের সামনে আমাকে আশ্বস্ত করবেন নরেন্দ্র মোদীজি যে আপনি ছবির মুক্তি বন্ধ করবেন না?’

পরিচালক বিনোদ কাপ্রি আরও বলেছেন, ‘আমার প্রথম টুইটের পর কিছু প্রযোজকের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তারা ‘গুজরাট ফাইলস’ তৈরি করতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী এখন যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছেন, তা যে পরেও থাকবে এই নিশ্চয়তা দরকার এই ছবির জন্যও।’

‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ঘিরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এবং বলেছেন, তাহলে ‘গুজরাট ফাইলস’ও তৈরি করা হোক। এবং সেটাও যেন সেন্সর বোর্ডের পক্ষ থেকে ছাড় পায়। গুজরাটে নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সেখানে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, ‘কাশ্মীর ফাইলস’ প্রসঙ্গে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আহমেদ ওয়ানি বলেছেন, ‘ভালোই তো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে সিনেমা হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩৩ বছরে সন্ত্রাসের শিকার কমবেশি ২০০ কাশ্মীরি পণ্ডিত। ২০১৬ সালে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে হত্যার পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক তরুণ-যুবক প্রাণ হারিয়েছে। সেই ঘটনা নিয়েও তো সিনেমা হতে পারে!’ রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই ওই ছবি তৈরি করা হয়েছে। এই ছবিকে ‘গৈরিক শিবির’ নির্বাচনে ব্যবহার করবে এবং দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করবে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

কাশ্মীর পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতির সদস্য সঞ্জয় টিকু বলেছেন, ‘কিছু লোক ওই ছবি দেখিয়ে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তুলতে চায়। তাদের অঙ্গুলিহেলনেই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। ওরা চায় এখন উপত্যকায় যে সব পণ্ডিত রয়েছেন, তাদেরও হত্যা করুক জঙ্গিরা।’

সোম্যা লাখানি নামে জনৈক কাশ্মীরি পণ্ডিত বলেন, ‘এই সিনেমা শিল্প নয়, প্রচার। শিল্প ও প্রচারের সূক্ষ্ম ফারাক আছে। সেই পার্থক্যটা বোঝা জরুরি।’ ‘কাশ্মীর ফাইলস’ ইস্যুতে এরইমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।

Advertisements