প্রিয় চাঁদপুরবাসী,
আসসালামু আলাইকুম। আমি ইকবাল মাহমুদ খান, কাপাসিয়ার সমৃদ্ধ জনপদ চাঁদপুর ইউনিয়নের সন্তান। এই ইউনিয়নের নলগাঁও গ্রামে আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে।
আমার জীবনের গল্প আমার জন্মভূমির অধিকাংশ মানুষের গল্পের মতোই সরল সহজ। শিক্ষা জীবনের মাঝখানে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে দূর দেশে পাড়ি জমিয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি। এক পর্যায়ে আপনার দোয়া ও আমার অধ্যবসায় দিয়ে নিজের পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেঁছে নিয়েছি৷ পরিবার সন্তান নিয়ে আপনাদের মাঝে বসবাস করছি, সামাজিক জীবন যাপন করছি।
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার ইউনিয়নের প্রতিটি মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর গল্প প্রায় একই রকম৷ আমার জীবনের গল্প অধিকাংশ পরিবারের গল্পের মতোই। আমাদের কষ্টের সংগ্রামের চড়াই-উতরাইয়ের কথাগুলো এক ও অভিন্ন । শ্রমজীবী, পেশাজীবী, প্রবাসী ভাই বোনদের শ্রমে ঘামে আমাদের পরিবারগুলো নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে। আজ থেকে কয়েক দশক আগে আমাদের এ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক জীবন এতো স্বচ্ছল ছিল না; স্কুল কলেজ, বাজার, রাস্তা ঘাটের এতো উন্নতি ছিল না। আমাদের বাবা, দাদা ও মুরব্বীদেরকে সংসার চালাতে নিজেদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে কৃষি কাজ ও অন্যান্য কঠোর পরিশ্রমের পেশা বেঁছে নিতে হয়েছে৷ খুব অল্প মানুষই অধিক বেতনের চাকুরী বা বড় ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।
আমাদের অতীত এতো মসৃন ছিল না, আমাদের জীবনের গল্পগুলো এতো এতো সুখকর ছিল না। আমাদের জীবনে এতো নিশ্চয়তা ছিল না৷ আমাদের পূর্বপুরুষেরা দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের ভাগ্য গড়তে সহযোগিতা করেছেন। সময়ের ব্যবধানে দেশ আগালো , আমাদের সন্তানেরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে লাগলো , চাকুরী বা সময়োপযোগী পেশায় যোগ দিতে শুরু করলো , যুবকেরা প্রবাসে পাড়ি জমালো, শুরু হলো আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সংগ্রাম। আমাদের দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে আশার আলো জ্বলতে শুরু করলো, ভাত কাপড়ের অভাব অনেকটাই দূর হলো। প্রায় অর্ধ শতাব্দীর অবিরাম পরিশ্রমের পরে স্বাধীন বাংলাদেশে আজ আমরা আমাদের সন্তানদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবার স্বপ্ন দেখছি, সাহস করছি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়বার।
আজ আমাদের অধিকাংশের অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তন এসেছে কিন্তু সম্পদের সুষম বন্টন না হওয়ায়, নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে সকলের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় অনেক পরিবার, ব্যক্তি মানুষ পিছিয়ে আছে ৷ খাদ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা প্রাপ্তিতে সবার সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় নি। এই পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে আমাদের আরো অনেক অসমাপ্ত কাজ রয়ে গেছে।
আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে, যুব সমাজকে মরণঘাতী নেশার হাত থেকে বাঁচাতে, নারী ও শিশুর প্রতি বৈষম্য দূর করতে, বাল্যবিবাহ যৌতুক বন্ধে, নারীর ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে, গরিব দুঃখী ভূমিহীন কৃষক শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নে, আর্ত
পীড়িত মানুষের সেবায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিশুদের ঝরেপড়া রোধকল্পে, অচল প্রতিবন্ধী মানুষের সেবায়, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যান্য জরুরি বিষয়ে আমাদের অনেক কিছু করার রয়েছে।
এসব কোন একক ব্যক্তির পক্ষে করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগের। আমাদের ইউনিয়নের কৃষক শ্রমিক মজুর পেশাজীবি চাকুরীজীবি প্রবাসী ভাই বোন বন্ধুদের সকলকে নিয়ে সুস্থ্য সমৃদ্ধ একটি সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, সে স্বপ্নকে সামনে রেখে উন্নত চাঁদপুর গড়তে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে।
শৈশব থেকেই আমার বাবা চাঁদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল খালেক খানকে নানা সামাজিক কাজে জড়িত থাকতে দেখেছি৷ তিনি পেশায় শিক্ষক ছিলেন, বেশ কয়েকটি স্কুল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে চাঁদপুর ইউনিয়নবাসীর কল্যাণে রাস্তা ঘাট বাজার প্রার্থনালয় সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে কাজ করেছেন। আমার বড় ভাই জনাব সাইখুল ইসলাম খানকে আপনারা আপনাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়েছিলেন। তিনি আপনাদের সেবায় নানাবিধ সামাজিক দায়দায়িত্ব পালন করেছেন।
আমার বাবা ও ভাইকে দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়ে, আমার বিবেকে তাড়ানায় ও দায়িত্ববোধ থেকে সব সময়ই গণ মানুষের পাশে থাকতে চেষ্টা করেছি৷ আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী, আমাকে শহরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি সপ্তাহে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবোধের জায়গা থেকে আমার নিজ গ্রামে আমার নিজ ইউনিয়নে স্বশরীরে এসেছি, এলাকাবাসীর খোঁজ খবর নিতে চেষ্টা করেছি , সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি।
স্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ঈদগাহ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলাসহ প্রত্যেকটি সামাজিক কর্মকান্ডে নিজের সাধ্যমতো অংশগ্রহণ করতে চেষ্টা করেছি৷
আমার এলাকাবাসী ইউনিয়নবাসীর প্রতি আমার কিছু কর্তব্য রয়েছে এই সত্য আমি সব সময় অনুভব করেছি। সেবা ও মানবপ্রেমকে আমার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছি। ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে আমরা বেশিদিন থাকবো না কিন্তু আমাদের মহৎ কাজগুলো রয়ে যাবে। এই সত্য আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি।
প্রিয় চাঁদপুর ইউনিয়নবাসী, আমার একটি স্বপ্ন রয়েছে, আপনাদের ভালবাসা ও দোয়ার বরকতে আমি সে স্বপ্ন দেখার সাহস করেছি। সকলের সহযোগিতা ও সমর্থন লাভ করার মধ্য দিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে আমি আপনাদের সেবায় ন্যাস্ত হতে চাই।
ওয়াদা করছি, আপনারা আমার নেতা হবেন, আমি আপনাদের সেবক হবো। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আমি আপনাদের একজন খাদেম হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করবো।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই নিরাপদে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আপনাদের সকলের সুখ সাচ্ছন্দ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
লেখকঃ কাপাসিয়া উপজেলার,
১০ নং চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।